বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • অভয়নগরে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যে বিদ্যালয়টি

অভয়নগরে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যে বিদ্যালয়টি

অভয়নগরে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যে বিদ্যালয়টি

অভয়নগর (যশোর), ০৬ এপ্রিল, এবিনিউজ: অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ধোপাদী গ্রামে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে অভয়নগর উপজেলা অটিজম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নামে একটি বিদ্যালয়। এখানে অটিস্টিক, বুদ্ধি, শ্রবন,বাক,দৃষ্টি ও শরীরিক প্রতিবন্ধীদের লেখাপাড়া শেখানোর পাশাপাশি তাদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য বৃত্তিমুলক শিক্ষা দান করা হচ্ছে। উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিবন্ধীরা আসে এখানে শিক্ষা গ্রহণ করতে। বর্তমানে এখানে ১০১ জন বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিবন্ধী রয়েছে। এর মধ্যে অটিস্টক ৫০ জন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ১৫ জন,শারীরিক প্রতিবন্ধী ২১ জন, বাকপ্রতিবন্ধী ৬ জন,দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ১ জন এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী রয়েছে ২ জন শিশু। বেশির ভাগ শিশু দরিদ্র পরিবারের। সমাজের কাছে ওই সব শিশুরা অবহেলার শিকার।

বিদ্যালয়টিতে চারটি শ্রেণির ভিক্তিতে পাঠ দান করানো হয়। সেগুলো হলো ১.মা ও শিশু শ্রেণি - এ শ্রেণিতে অধিকতর শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের তাদের মা কে কাছে রেখে পাঠদান করা হয়। ২. প্রাক প্রথমিক শ্রেণি - এ শ্রেণিতে কিছুটা সক্ষম প্রতিবন্ধী শিশুদের অক্ষর জ্ঞানের শিক্ষা দেওয়া হয়। ৩. প্রাথমিক শ্রেণি - প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি পাশের পর এ শ্রেণিতে উন্নিত করে সরকারি প্রথম শ্রেণির পাঠ্য বই পড়ানো হয়। ৪. এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের সমাজে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য বৃত্তি মুলক শিক্ষা দেওয়া হয়। তাছাড়া সাধারণ বিদ্যালয়ের মতো এখানে সহশিক্ষা কার্যক্রম নাচ,গান, কবিতা আবৃতি,শরীর চর্চার শিক্ষাও দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়টি মাত্র অল্প দিনের ব্যবধানে দেশব্যাপী ব্যপক পরিচিতি লাভ করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া বিদ্যালয়টি নিয়ে গরুত্ব সহকারে প্রচার করেছে। প্রচারের পর সরকারের বিভিন্ন মহল বিদ্যালয়টির খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে। বিদ্যালয়টিতে ১০জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী রয়েছে। বুধবার(৪-৪-১৮ তাং) সকালে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে দেখা যায় শিক্ষকেরা পরম মমোতায় প্রতিবন্ধীদের হাত ধরে বর্ণ লেখা শেখাচ্ছেন। সাত বছরের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু কণ্যা মরিয়ম খাতুনের মাতা মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করেছিলাম কিন্তু সেখানে তার সহপাঠিরা ওকে অবহেলা করতো কেউ কাছে আসতো না যে কারনে আমার মেয়ে ওই স্কুলে যেতে খুব কান্না কাটি করতো। কিন্তু এই প্রতিবন্ধী স্কুলে আমার মেয়ে নিজ থেকে আসতে চায়।

এখানে এসে সে এক মাসের মধ্যে চারটি অক্ষর শিখেছে। আরো একজন শিক্ষার্থী ইয়ছিন হোসেন’র(৭) মাতা রেহেনা বেগম জানান, আমার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী ওকে এই স্কুলে ভর্তি করার পর সে অক্ষর পড়তে ও লিখতে পারে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম জানান, ২০১৪ সালে এলাকার ৩০ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে আমার বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা মঞ্জুয়ারা খাতুন ব্যক্তিগত প্রচেষ্ঠায় একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে পাঠ দানের কাজ শুরু করে। দিন দিন এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাবাসীর উদ্যোগে আমরা টিন শেডের চার রুম বিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণ করে পাঠ দান করছি। তিনি বলেন, এখানে ৭/৮ কিমি. দূর থেকেও শিক্ষার্থীরা আসে। দরিদ্র লোক হওয়ায় প্রতিদিন ৫০ /৬০ টাকা খরচ করে তারা আসতে পারে না।

তা ছাড়া বিদ্যালয়টিতে অনেক উপকরণের অভাব রয়েছে। যার দরুণ পাঠ দান ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখানকার শিক্ষকরা বিভিন্ন বিষয়ে সম্মান ধারী ¯œাতোকউত্তোর ডিগ্রিপাশ। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের সাথে কাজ করার জন্য তাদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। তা ছাড়া মাঝে মাঝে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুরা খিচুনিতে আক্রান্ত হয় যে কারনে আমাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরী। তিনি এ ব্যপারে সরকারি সাহায়তার কামনা করেছেন ।

বিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. মোশারেফ হোসেন জানান, আমার গ্রামে অনেক প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে তারা সমাজের কাছে বিভিন্ন ভাবে অবহেলার শিকার হচ্ছে। তাদেরকে লেখাপাড়ার পাশাপাশি কর্মমুখি শিক্ষা দিতে পারলে তারা সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না । এমন একটি আশা নিয়ে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি দাঁড় করিয়েছি।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, এলাকাবাসীদের উদ্যগে উপজেলার ধোপাদী গ্রামে একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। আমি নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ ব্যাপারে সরকারি সহায়তা পাওয়ার জন্য আমি চেষ্টা করছি।

এবিএন/সেলিম হোসেন/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত