![পেরিমেনোপজ মহিলার সন্তান ধারণ কমে যায়](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/07/peri-monopoj_134052.jpg)
ডা. প্রধীর রঞ্জন নাথ, ০৭ এপ্রিল, এবিনিউজ : পেরিমেনোপজ শরীরের সেই সন্ধিক্ষণ, যে সময় থেকে শরীরে মেনোপজের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। মেনোপজের ঠিক আগের পর্যায় ইস্ট্রোজেন লেভেল কখনও বেড়ে যায় আবার কখনও কমে যায়। মেনস্ট্রুয়াল সাইকল ও অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
কারণ :
ওভারিতে কোনও সমস্যা থাকলে বা ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে অনেক সময় ৪৫ বছর বয়সের আগেই মেনোপজ হয়ে যায়। একে প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর বলে। যে কোনও বয়সেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরল হরমোন নিঃসৃত না হলে বা কম নিঃসৃত হলেও সেই সময়টাকে পেরিমেনোপজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মেনোপজের সঙ্গে সঙ্গে হতে থাকে নানারকম শারীরিক অসুবিধে। তার সঙ্গে যোগ হয় এক গভীর মন খারাপ। যেহেতু মাসিক ঋতুচক্র কমে আসে, কমে আসে সন্তান ধারণের ক্ষমতাও। অযথা ডিপ্রেশনে না ভুগে সামান্যতম সিম্পটম দেখলেই চিকিৎসা করান। নিয়ম মেনে চলুন। অনায়াসেই মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ ও সতেজ থাকতে পারবেন।
পেরিমেনোপজের লক্ষণ
১. মেনস্ট্রুয়াল ইরেগুলারিটিণ্ডএই সময় মেনস্ট্রুয়াল পিরিয়ড ইরেগুলার হয়ে যায়। পিরিয়ডের মধ্যের সময়ের ব্যবধান বেড়ে যায় অথবা কমে যায়। ফলে কখনও এক মাসে ২ বার পিরিয়ড হতে পারে, কখনও বা একবারও পিরিয়ড না হতে পারে।
২. হট ফ্লাশ এবং ঘুমের অসুবিধে ৬৫% থেকে ৭৫% মহিলার পেরিমেনোপজের সময় হট ফ্লাশ হয়। তবে ব্যক্তি বিশেষে তার রকমফের দেখতে পাওয়া যায়। এই সময় ঘুমেরও খুব সমস্যা হয়। ঘাম হয়। অনেক সময় সারারাত ঘুম আসে না।
৩. মুড পরিবর্তনণ্ডসব সময় মেজাজ খারাপ থাকা, কিছু ভাল না লাগা, সামান্য কোনও কারণে ডিপ্রেসড হয়ে পড়া, পেরিমেনোপজের অন্যতম সিম্পটম। তবে অনেক সময় ঘুম না হওয়ার জন্যেও মুড খারাপ থাকে।
৪. সেক্সুয়াল ফাংশনে পরিবর্তনণ্ডবেশির ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে যৌন চাহিদায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
৫. ভ্যাজাইনা এবং ব্লাডারে সমস্যাণ্ডএই সময় শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে ভাজাইনাল টিস্যু লুব্রিকেশন এবং ইলাস্টিসিটি হারিয়ে ফেলে। এর ফলে নানারকম ইনফেকশন দেখা যায়।
৬. হাড় ক্ষয়ে যাওয়া–ইস্ট্রোজেন লেভেল কমে যাওয়ার ফলে হাড় সহজেই ক্ষয়ে যায়। অস্টিওপোরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৭. কোলেস্টেরল লেভেলের পরিবর্তনণ্ডশরীরে ইস্ট্রোজেন লেভেল কমে যাওয়ার ফলে রক্তে লো–ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং হাই–ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। ফলে মহিলাদের হার্টের অসুখের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
৮. ফার্টিলিটি কমে যাওয়াণ্ডওভ্যুলেশন ইরেগুলার হয়ে যাওয়ার ফলে কনসিভ করার সম্ভাবনা কমে যায়। ১২ মাস ধরে পিরিয়ড না হলে বুঝবেন এটা মেনোপজের লক্ষণ। তবে ডাক্তারের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করে নেবেন।
৯. প্যালপিটেশনণ্ডঅনেক সময় বুক ধড়ফড় করে, প্যালপিটেশন হয়। এরকম হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১০. পিরিয়ডের সময় খুব হেভি ব্লিডিং হয়।
১১. ৮ দিনের উপর ব্লিডিং হতে দেখা যায়।
১২. পিরিয়ডের সময় ছাড়া অন্য সময়ও ব্লিডিং হয়।
কাদের পেরিমেনোপজ বেশি হয়
১. ধূমপান : যে সব মহিলা ধূমপান করেন, অন্যান্য মহিলার থেকে তাদের মেনোপজ ২–৩ বছর আগে হয়।
২. পারিবারিক ইতিহাস : মা বা বোনদের আগে মেনোপজ হওয়ার ইতিহাস থাকলে সেই পরিবারের মহিলাদের অনেক সময় পেরিমেনোপজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. সন্তান না হলে : কখনও সন্তান না হলে মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়।
৪. ছোট বেলায় ক্যানসারের চিকিৎসা হলেণ্ড ছোট বেলায় ক্যানসারের ট্রিটমেন্ট হিসেবে কেমোথেরাপি বা পেলভিক রেডিয়েশন থেরাপি হলে তাড়াতাড়ি মেনোপজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. হিস্টেরেকটমি : অনেক সময় হিস্টেরেকটমি অপারেশনও পেরিমেনোপজের কারণ হিসেবে কাজ করে।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
১. ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করা একান্ত জরুরি। কারণ এই সময় অস্টিওপেরোসিস হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভানা খুব বেশি থাকে। লো–ফ্যাট, হাই–ফাইবারযুক্ত খাবার খান। বেশিক্ষকরে ফল আর শাকসবজি খান। ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ডায়েট চার্টে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্টও খেতে পাবেন। অ্যালকোহল, চা, কফি যতটা সম্ভব কম খান।
২. নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রাতে ভাল ঘুম হবে। হাড় ভাল থাকবে। ডিপ্রেশনে ভুগবেন না। মুড ভাল থাকবে।
৩. নিয়মিত যোগব্যায়াম যেমন–ভূজঙ্গাসন, উত্থিত পদাসন, তদাসন, শীর্ষাসন, উড্ডীয়ান, মহামুদ্রা, মূলবন্ধমুদ্রা, মহাবেধ মুদ্রা, শবাসন ইত্যাদি করুন। জরায়ুঘটিত, ঋতুঘটিত ব্যাধি দূর করে। ফলে মন শান্ত থাকবে। মনঃসংযোগ বাড়বে। মানসিক শান্তি পাবেন।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান
পেরিমেনোপজ প্রতিকারে হোমিওপ্যাথিতে অত্যন্ত ফলদায়ক ওষুধ আছে। যা অন্যপ্যাথিতে নেই। পূর্ণাঙ্গ কেসহিস্ট্রির মাধ্যমে এবং লক্ষণ ভেদে নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করে এর বিহীন বিধান করা সম্ভব। এই রোগে ব্যবহৃত ওষুধ সংক্ষেপে নিম্নে প্রদত্ত হল। যথা– ১. এমিল নাইট্রেট, একোনাইট, গ্লোনায়েন, ভিরেট্রাম ভিরি, স্যাঙ্গুইনেরিয়া, সিমিসিফিউগা, ককিউলাস, ইগ্নেসিয়া, ল্যাকেসিস, অস্টিলেগো, পালসেটিলা, সিপিয়া, মার্কসল, থুজা, মেডোরিনাম উল্লেখযোগ্য। তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা উচিত। (সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি