বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বছরে নিহত ১৪২
দুর্ঘটনা রোধে এলাকাবাসীর দীর্ঘ মানববন্ধন

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বছরে নিহত ১৪২

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বছরে নিহত ১৪২

চট্টগ্রাম, ০৭ এপ্রিল, এবিনিউজ : বৃহত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার মহাসড়কে বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ ও অপেশাদার চালক দ্বারা গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা, ট্রাফিক বিভাগের অদূরদর্শিতা এবং সংশি¬ষ্ট বিভাগের দুর্নীতির কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে দুর্ঘটনা। নিরাপদ সড়কের জন্য গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কোনো বিশেষ প্রকল্প চালু হয়নি,ফলে দিনদিন বেড়ে চলেছে দুর্ঘটনা ঝড়ে পড়ছে তাজা প্রাণ। অন্যদিকে উপজেলায় যখন কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ঠিক তখনই টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তা রোধে দীর্ঘ মেয়াদি কোনো স্থায়ী পরিকল্পনা নেয়নি প্রশাসন।

হাইওয়ে পুলিশের হিসেব অনুযায়ী শুধুমাত্র চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে এক বছরে নিহত হয়েছে ১৪২ জন। গত তিনমাসে সীতাকুন্ড অংশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে হতাহতের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে দাবি করেছে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

সীতাকুন্ডে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এলাকাবাসীর দীর্ঘ মানববন্ধন :

সড়ক দুর্ঘটনায় আর যেন কারো আকাল মৃত্যু না হয় এবং ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ককে নিরাপদ সড়ক হিসেবে গড়ে তোলার দাবী জানিয়ে স্বরণকালের দীর্ঘ মানববন্ধন পালন করেছে সীতাকুন্ড বাসী। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বিভিন্ন সংগঠনের অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ৪০ কিলোমিটার জুড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন চলাকালে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত জানাতে গিয়ে বলেন, এটি মহাসড়ক নয় যেন মৃত্যুকুপ। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘাতক গাড়ি প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে মানুষে।

তারা জানান, মহাসড়কের সীতাকুন্ড ও মীরসরাইয়ে স¤প্রতি সড়ক-দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক দ্বারা পরিচালিত ‘সেইফ লাইন’ পরিবহনের গাড়ীগুলো এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণের আতঙ্কের বস্তুতে পরিণত হয়েছে। গত তিনমাসে এখানে সড়ক-দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩৩ জন,আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যক্রম পদক্ষেপ নেয়ার দাবী এবং নিরাপদ সড়কের দাবী জানিয়ে মহাসড়কে সীতাকুন্ডে ৪০ কিলোমিটার জুড়ে বিশাল মানব প্রাচীর গড়ে তুলে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ ও স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের সীতাকুন্ডের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ অন্তত শতাধিক সংগঠন। সড়ক পার হয়ে নিরাপদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চান মানববন্ধনে অংশ নেয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

কুমিরা মসজিদ্দা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী আরিফা আক্তার বলে আমরা এখন স্কুলে আসতে পারি না। কারণ আমাদের মা বাবারা স্কুলে পাঠাতে চায় না। নিরাপত্তার কারণে রাস্তা পার হয়ে স্কুলে যাওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে। যে ওভারব্রীজ দেয়া হয়েছে এটি আমাদের কোন কাজে আসে না। স্কুল থেকে এটি অনেক দুরে। তাই আমাদের স্কুলের কাছে একটি ব্রীজ দিলে আমরা নিরাপদে আসা যাওয়া করতে পারতাম।

মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য অদক্ষ চালক, সড়কের পাশে কনটেনার টার্মিনাল গড়ে ওঠায় পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ উল্টো পথে টার্মিনাল ইয়ার্ডে প্রবেশ ও বের হওয়ার পাশপাশি ওপর এলোপাতাড়ি যত্রতত্র গাড়ি দাড় করিয়ে রাখা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজার এলাকায় যথাযত স্থানে ফুট ওভারব্রীজ না থাকাকে দায়ী করেন স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা ও বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা। এ জন্য প্রশাসনের তদারকির পাশাপাশি চালক, যাত্রী এবং জনগণের সচেতনার উপর গুরুত্বারুপ করেন তারা।

কুমিরা মসজিদ্দা এলাকায় মহাসড়কের পাশে বিশাল মানববন্ধনে অংশ নেন মানববন্ধন বাস্তবায়ন পরিষদ এর আহ্বায়ক ও কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোরশেদ হোসেন চৌধুরী। বলেন, সড়ক-দুর্ঘটনা ঘটবেই-কখনো তা বন্ধ করা যাবে না। তবে এটা যতবেশি কমিয়ে আনা যায়- সে ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সরকারি-বেসরকারি পদক্ষেপ নিতে আমরা আজ শিক্ষাথী শিক্ষকসহ সর্বস্থরের মানুষ নিয়ে।

মহাসড়ক ফোরলেন হলেও ট্রাফিক ও সড়ক ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। মহাসড়কের পাশেই কয়েকটি কনটেনার টার্মিনাল গড়ে ওঠায় পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ গাড়ীগুলো ওল্টোপথে টার্মিনাল ইয়ার্ডে ঢুকা ও বের হওয়ার পাশপাশি মহাসড়কের ওপর এলোপাতাড়ি যত্রতত্র দাঁড়িয়ে এক নৈরাজ্য তৈরি করে, যাত্রীবাহী গাড়ীগুলো নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে না, সৃষ্টি হয় যানজট। তবে এ এলাকার জনসাধারণের সবচে’ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ রুটে চলাচলকারী পরিবহন ‘সেইফ লাইন’। এ লাইনে একশটির মতো ‘সেইফ লাইন’ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিলেও ২শ’রও বেশি অবৈধভাবে চলছে। লাইসেন্সবিহীন অনভিজ্ঞ চালকদের হাতে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ যাত্রীরা। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হয়।

সীতাকুন্ড সমিতি চট্টগ্রামের সার্বিক সহযোগিতায় বিশাল এ মানববন্ধনে সকাল থেকে ফৌজদার কেএম উচ্চ বিদ্যালয়, ভাটিয়ারী এলাকায় সীতাকুন্ড অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, স্মাইল বাংলাদেশ, যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম, শীতলপুর এলাকায় শীতলপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়, শীতলপুর মাদ্রাসা, হাফিজ জুট মিলে সামনে হাফিজ জুট মিলস সবুজ শিক্ষায়তন, ফুলতলা এলাকায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটি, বার আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, আইআইইউসির সামনে জেলা পরিষদের সদস্য আ ন ম দিলাশাদের নেতৃত্বে ঘোড়ামারা এলাকাবাসী, কুমিরায় কুমিরা বালিকা বিদ্যালয়, মসজিদ্দা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ মছজিদ্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইকরা আদশ ইসলামী পাঠাগার, সীতাকুন্ডে বিবর্তন ক্লাব, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং লিবার্টি ও লিও ক্লাব অব চিটাগাং লিবার্টিসহ ইত্যাদি সংগঠন অংশ গ্রহণ করে।

এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত