
সিরাজগঞ্জ, ০৮ এপ্রিল, এবিনিউজ: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মেঘাই ওয়াপদা বাধেঁর উপর বসবাসকারি অসহায় আবু হানিফের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন তার অসুস্থ শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সন্তান আব্দুল্লাহ আল মামুনকে কোলে পিঠে নিয়ে লালন পালন করছেন দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে। একমাত্র সন্তানটি হাটতে পারে না, বসতে পারে না, দু-হাত দিয়ে কোন কিছু ধরতে পারে না, এমনকি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারে না, খেলতে পারে না। পুরো শরীরই তার অচল ও বিকলাঙ্গ। মস্তিষ্ক কাজ করে না বলে সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাকে দেখতে শিশুর মত। কারন অপুষ্টির কারনে তার শারীরিক বৃদ্ধি থেমে গেছে অনেক আগেই।
এ ছেলেটির চিকিৎসা করতে গিয়ে জমি-জমা, টাকা-পয়সা এমনকি ভিটা বাড়ীটুকু বিক্রী করে আজ এই অসহায় মা বড়ই নি:স্ব। ছেলেটির শরীর শুকিয়ে এমন হয়েছে যে, ছেলেটির হাড়- মাংস এক হয়ে গেছে। কঙ্কাল সার অসুস্থ্য দেহ নিয়ে পড়ে আছে বিছানায়। বর্তমানে ওই বাঁধের উপর এই অসুস্থ ছেলেটি নিয়ে বসবাস করছেন। মাতৃত্ব যেকোন নারীর সবচাইতে বড় ঐশ্বর্য। গর্ভে ধারণ করে যে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখায় একজন মা তার মাঝে যে কত আনন্দ, তৃপ্তি আর গৌরব জড়ানো থাকে সে কথা বলে শেষ করা যায় না।
মা ডাক শোনার মধ্য দিয়ে সেই আকাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণের অনাবিল অনুভব যে কোন মাকে পূর্ণ মাত্রায় ভরিয়ে তোলে। যেকোন বাবা-মাই প্রত্যাশা করেন একটি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক সন্তান। কিন্তু ব্যত্যয় মা-বাবাকে অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি করতেও বেশি সময় নেয় না। এ ছেলেটি যে বয়সে দুরন্ত বালক হয়ে পথ-ঘাট ঘুরে বেড়ানোর কথা, সারাবেলা ছোট্ট বেলা দষ্যিপনায় মেতে উঠার কত, মা মা ডাকে তার মাকে অস্থির করে রাখার কথা, তাহার মায়ের চিবুকে আদরের চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে মায়ের মাতৃত্বকে পরিপুর্ণ করার কথা।
কিন্তু হায়! সেই ছেলেটি এখন অসহায় অবস্থায় শুয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে চারদিক। দুচোখে ফুটে উঠেছে তার বেচে থাকার আর্তি। শারীরিক নানান জটিলতায় ছেলেটিকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দীর্ঘ ২৩ টি বছর বিছানায় শুয়ে শুয়ে তার পৃথিবী সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে ছোট্ট একটি ঘরে। ছেলেটির মায়ের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য হারিয়ে গেছে এই অসুস্থ্য ছেলেটির জন্য। আমি যখন এই অসহায় মাকে কিছু বলতে বলি তখন ফরিদা ইয়াসমিন কেঁদে বলে, আমার এই ছেলেটির বোঝা দীর্ঘ ২৩ টি বছর হলো বয়ে বেড়াচ্ছি। এই ছেলেটির বোঝা টানতে টানতে এখন আমি এখন বড়ই ক্লান্ত, অসুস্থ্য ও অসহায়”।
সর্বশেষ আমার আর্তনাদ ওকে বাঁচান ওর আত্নাকে বাঁচান, ওকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। আমি বিশ্বাস করি নিশ্চয় আপনাদের রয়েছে দীর্ঘশ্বাস মিশ্রিত মমত্ববোধ। আপনিও এই অসহায় ছেলেটির কথা পরিবারটির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা পূর্বক বাড়িয়ে দিবেন ভালবাসার হাত।
এবিএন/এস.এম তফিজ উদ্দিন/জসিম/তোহা