
ঢাকা, ১০ এপ্রিল, এবিনিউজ: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন স্থাপনসহ ১৬ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।আজ মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
অনুমোদন হওয়া প্রকল্পগুলোয় ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ হাজার ৭০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে। বাকি অর্থের যোগান আসবে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ৮ হাজার ৭৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৭ লাখ টাকা।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে কর্মজীবী নারীরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে সে জন্য আরও প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধামন্ত্রী।
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে ১০ হাজার ৯৮১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে রাশিয়ার পর যুক্ত হচ্ছে ভারত।
মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৫২৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ভারতীয় ঋণ থেকে ৮ হাজার ২১৯ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারি সংস্থা পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, রূপপুরের বিদ্যুৎ সারাদেশে নেওয়ার জন্য প্রকল্পটি দেশের তিন বিভাগের ১৩টি জেলার ৩৭টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। যেসব স্থানে বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হচ্ছে, ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার ধামরাই ও সাভার উপজেলায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, মানিকগঞ্জের শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর-মানিকগঞ্জ সদর,সাটুরিয়া ও সিংগাইর উপজেলায়, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার-টাঙ্গাইল সদর, মির্জাপুর ও কালিহাতি উপজেলা, রাজবকাড়ীর পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা-বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মাকসুদপুর উপজেলায়। এছাড়া রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার ইশ্বরদী-পাবনা সদর-সাঁথিয়া-সুজানগর-বেড়া ও আটঘরিয়া উপজেলা, নাটোরের বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলা, সিরাজগঞ্জের তারাশ ও শাহজাদপুর উপজেলা এবং বগুড়ার নন্দিগ্রাম-বগুড়া সদর ও কাহালু উপজেলা এবং খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার খোকসা ও কুমারখালী উপজেলা, মাগুড়া জেলার শ্রীপুর উপজেলায় এটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পটির আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৬০৯ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, রূপপুর-ঢাকা (আমিনবাজার-কালিয়াকৈর) ১৫৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, রূপপুর-গোপালগঞ্জ ১৫০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন স্থাপন, রূপপুর-বগুড়া ১০২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন, রূপপুর-ধামরাই ১৫২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং রূপপুর বাঘাবাড়ি ৬০ কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ করা হবে।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯৮১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেল লাইন সংস্কার ও নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মাদারীপুরের শিবচরে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৮২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ বন্দর ও চট্টগ্রাম কালুরঘাটে মহিলা শ্রমজীবী হোস্টেল এবং পাঁচ শয্যার হাসপাতাল সুবিধাসহ শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (প্রথম পর্যায়) শক্তিশালীকরণ ৮২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪১৭ কোটি টাকা।
মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া-গোবিন্দপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৬৫ কোটি টাকা। খুলনা শহরে পয়োনিস্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ৯৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
কুমিল্লা জোনের জেলা মহাসড়কসমূহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৫৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
নেত্রকোণা (ঠাকুরাণা)-কলমাকান্দা জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন, এলেঙ্গা-ভুঞাপুর-চরগাবসারা সড়কের ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও একটি কালভার্ট পুন:নির্মাণ এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
চাঁদপুর জেলার গৌরীপুর-কচুয়া-হাজীগঞ্জ সড়কের মান উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারা নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এবিএন/মমিন/জসিম