![মেয়েরা কেন কোটা সংস্কারের আন্দোলনে এতটা সম্পৃক্ত?](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/10/qouta_134624.jpg)
ঢাকা, ১০ এপ্রিল, এবিনিউজ : বাংলাদেশে বহু মিছিলে সামনের সারিতে কয়েকজন নারী হাঁটছেন অথবা ব্যানার বহন করছেন এমন দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন।
তবে মিছিলে সামনের সারিতে থাকলেও তারা যে তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা নয়।
কিন্তু গত কয়েক দিনে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে, মিছিলে, স্লোগানে নারীদের উপস্থিতি ছিল খুবই চোখে পড়ার মতো।
শনিবার রাতে হলের গেটের তালা ভেঙে বের হয়েছিলেন কবি সুফিয়া কামাল হল, রোকেয়া হল ও কুয়েত মৈত্রী হলের মেয়েরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামের ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্রী বলছেন, তিনি তার হল থেকে রাত একটার দিকে বের হয়েছেন।
তিনি বলছেন, "ভিসি চত্বরের দিক থেকে দফায় দফায় কিছু ছেলে আক্রমণ করে।। সে সময়ই আমাদের দুই আপুর মাথা ফেটে যায়।"
এরপর তিনি টিএসসির ভেতরে দৌড়ে চলে যান এবং সেখানে অনেক সময় ধরে আটকে পরেছিলেন তিনি।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেলো বিভিন্ন যায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাফেরা করছেন কোটা সংস্কারপন্থী আন্দোলনকারীরা।
তার আগের রাতের সহিংসতা আর উপাচার্যের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় কিছুটা যেন চুপচাপ তারা।
কিন্তু হঠাৎ সবাই দ্রুত রোকেয়া হলের দিকে যেতে শুরু করলেন। কারণ সেখান থেকে ভেসে আসছে নারী কণ্ঠের স্লোগান। তাতে সবাই মিলে একসাথে গলা মেলালেন।
এই আন্দোলনে মেয়েদের সম্পৃক্তা যে বেশী মনে হয়েছে শুধু তাই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেও মনে হচ্ছে।
কিন্তু মেয়েরা কেনও কোটা সংস্কারের আন্দোলনে এতটা আগ্রহী?
সেটি জানতে কথা বলছিলাম অনেকের সাথে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সায়মা কানিজ বলছেন, "আমি কি কারণে অংশ নেবো না? আমাকে যে আর কয়েক দিন পরেই চাকরী করতে হবে।"
চাকরী করাই তার ভবিষ্যৎ গন্তব্য, স্বামী অথবা সংসার নয়, এত জোরের সাথে হয়ত কিছুদিন আগেও মেয়েদের মুখ থেকে এমনটা শোনা যেতো না।
কিন্তু ইদানীং বাংলাদেশে এসএসসি পরীক্ষাই হোক আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ের পরীক্ষা, সবখানেই ফলাফলে উপরের দিকে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞানের ছাত্রী নুসরাত জাহান বলছেন, "যেহেতু মেয়েরা এখন অনেক পড়াশোনা করছে, তাই তারা চাচ্ছে না যে সময়, শ্রম আর মেধার বিনিয়োগ এতদিন ধরে সে করেছে সেটা বৃথা যাক। কিন্তু এমন নয় যে তারা ছেলেদের থেকে এগিয়ে যেতে চায়। মেয়েরা তাদের মেধার স্বীকৃতিটা চাইছে।"
সরকারী চাকরীর নিরাপত্তার বিষয়টি কি তাদের বেশি আগ্রহী করছে?
বাংলাদেশে সরকারী চাকরীর প্রতি ছেলেমেয়েদের বা অভিভাবকদের আগ্রহ যে কতটা তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু সরকারী চাকরীর স্থিতিশীলতা আর নিরাপত্তা কি মেয়েদের একটু বেশি টানছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরুখ কবির বলছেন, "বিসিএস পরীক্ষার টার্গেট বেশিরভাগেরই থাকে। কারণ সব সাবজেক্টে তো ভাল চাকরী পাওয়া যায় না।"
তিনি বলছেন, "মেয়েদের আজকাল পরিবার থেকেও বলা হয় বিসিএস চেষ্টা করতে। কারণ প্রাইভেট জবে অনেক সময় দিতে হয়।"
তিনি আরো বলছেন, "কিছু চাকরীকে মেয়েদের জন্য উপযোগী বলে মনে করা হয় বা সেফ মনে করা হয়। যে চাকরীতে তারা ঘরের কাজগুলোও করতে পারবে। সরকারী চাকরীকে এখন মেয়েদের জন্য সেরকম কিছু মনে করা হচ্ছে।"
ইদানীং অবশ্য সরকারী চাকুরীতে খুব দাপটের সাথে যায়গা করে নিচ্ছেন মেয়েরা।
এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের সাথে কথা বলে আরেকটি বিষয় জানা গেলো যে তারা অনেকেই কোন ধরনের নারী কোটার পক্ষপাতী নন।
সায়মা কানিজ বলছেন, "কারণ আমরা নিজের যোগ্যতা দিয়েই তো চাকরীর বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি।"
যে কোটার বিরুদ্ধে এত আন্দোলন তার ৫৬ শতাংশের মধ্যে মেয়েদের জন্য রয়েছে ১০ শতাংশ কোটা।
তবে একই সাথে অনেকেই বলেছেন ছেলেরা হামলার শিকার হচ্ছিলো বেশি, তাই তারা সামনে এসেছেন।
ভূতত্ত্ববিদ্যা শিক্ষার্থী তামীরা তাসনিম লাবণ্য বলছেন, "বিগত গত দুইদিনের যে রেকর্ড দেখা যাচ্ছে তাতে আমাদের প্রচুর ছেলে শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা অনেকরকম চাপের মুখে আছেন। আমরা মেয়ে হিসেবে না শুধু, প্রত্যেকে শিক্ষার্থী হিসেবে এসেছি।"
সব মিলিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে মেয়েদের শক্তিশালী উপস্থিতি খুবই চোখে পড়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি