শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • ধর্মপাশায় উপর মহল ম্যানেজ করে কোটি টাকার জুয়ার আসর

ধর্মপাশায় উপর মহল ম্যানেজ করে কোটি টাকার জুয়ার আসর

ধর্মপাশায় উপর মহল ম্যানেজ করে কোটি টাকার জুয়ার আসর

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ), ১১ এপ্রিল, এবিনিউজ: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিন ইউনিয়নের শয়তানখালি বিলের পাশে কংশ নদীর পাড়ে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার পরে ওয়ান-টেন নামে জুয়ার আসর বসানো হয়। পার্শ্ববর্তী মোহনগঞ্জ উপজেলার ১নং বড়কাশিয়া ইউনিয়নের বাহাম গ্রামের প্রভাবশালী ব্যাক্তি কুখ্যাতু জুয়াড়ো মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে গত ৩মাস ধরে এ কোটি টাকার জুয়ার আসরটি পরিচালিত হয়েছে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর ধর্মপাশা থানার ওসি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওই জুয়ার আসর চালানোর অনুমতি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এ নিয়ে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিন ইউনিয়নের শয়তানখালি বিলের পাশে কংশ নদীর পাড়ে এক খ- অনাবাদি জমিতে জেনারেটরের লাইট জ্বালিয়ে বসানো হয় জমজমাট এ কোটি টাকার জুয়ার আসর। মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ওই জুয়ার আসর শুরু হয়ে গভীর রাত ৫টা পর্যন্ত চলে। ধর্মপাশা থানার পুলিশের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী মোহনগঞ্জ উপজেলার ১নং বড়কাশিয়া ইউনিয়নের বাহাম গ্রামের প্রভাবশালী ব্যাক্তি কুখ্যাতু জুয়াড়ো মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ছয়-সাতজন যুবক এ আসরের আয়োজন করে আসছে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার দেড়শতাধিক জুয়াড়ি এতে অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রাক্তন চেয়ারম্যান জানান, পুলিশকে আর্থিকভাবে সুবিধা দিয়ে ওই মোহাম্মদ আলী এই আসর বসিয়ে থাকে। এতে আসা বিভিন্ন বয়সের লোকজন জুয়াড়িদের খপ্পরে পড়ে টাকা পয়সা হেরে নিঃস্ব হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফেরেন। অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে,জুয়ার প্রতি আসক্ত হচ্ছে এলাকার লেগুনা চালক,রিক্সাওয়ালা,কর্মক্ষেত্রের শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ঝুঁকে পড়ছেন এতে। ধর্মপাশায় এসব জুয়াড়িদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অপরদিকে ধর্মপাশার উঠতি বয়সের যুবকরা ক্রমেই জুয়া খেলায় আকৃষ্ট হচ্ছে।

এর ফলে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। এসব জুয়াড়িদের অর্থ জোগাড় করতে উপজেলার অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। এলাকায় বেড়েছে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি। জুয়াড়িরা পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে প্রতিদিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)কে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। কোনো কোনো সময় পুলিশ এসব জুয়াড়িদের গ্রেপ্তার করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তদবিরের কারণে ছেড়ে দেয় তাদের।

পার্শ্ববর্তী মোহনগঞ্জ উপজেলার ১নং বড়কাশিয়া ইউনিয়নের বাহাম গ্রামের বাসিন্দা জুয়াড়ো মোহাম্মদ আলী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সহ এ পর্যন্ত ৩০-৪০ দিন জুয়ার আসর হয়েছে। আমরা কজন মিলে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন পর পর এ জুয়ার আসর বসিয়ে থাকি। এবং পুলিশকে ম্যানেজ করেই ওয়ান-টেন নামে জুয়ার আসর বসানো হয়। এ জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহেবকে প্রতি আসরে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি স্থানীয় জুয়াড়িদেরও টাকা দিতে হয়।

ধর্মপাশা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মোসাহিদ তালুকদার জানান,উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে জুয়ার আসর বসলেও পুলিশকে জানিয়ে কোনো প্রতিকার মিলছে না। পুলিশ রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ অবস্থায় এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। পাশাপাশি আজ বর্তমান যুব সমাজের একটি অংশ জুয়ার কবলে পড়ে দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকায় আগের তুলনায় এখন চুরি চিনতাই প্রতিদিন বেড়েই চলেছে।

ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুরঞ্জিত তালুকদার বলেন, টাকা নিয়ে জুয়ার আসর চালানোর জন্য আমি কাউকে অনুমতি দিইনি। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। পুলিশের নাম বিক্রি করে কোনো একটি চক্র হয়তো বা এমনটি করছে। জুয়াড়িদের সঙ্গে পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন খন্দকার বলেন,জুয়ার আসর বন্ধের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আমি নির্দেশ দিব। জেলা পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খাঁন বলেন,খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিএন/ইমাম হোসেন/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত