![‘সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে’](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/11/pm-abn00_134722.jpg)
ঢাকা, ১১ এপ্রিল, এবিনিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাকে কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, একটি জাতির সার্বিক মুক্তির জন্য অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মুক্তিও ঘটতে হবে। তাই সরকার সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
আজ বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার রজত জয়ন্তী ও সুরের ধারা-চ্যানেল আইয়ের বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের চার দিনের আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ওই সময়ের কথা মাঝে মাঝে বলি। কারণ, এই ধরনের পরিবেশও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমি এটুকুই বলতে চাই, সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়েই একটি জাতির বিকাশ ঘটে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে, এমনকি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামেও আমাদের সংস্কৃতিকর্মীরা বিশাল ভূমিকা রেখেছেন। তাদের অবদান সবসময় আমরা স্মরণ করি।’
সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার কার্যক্রমের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুরের ধারার সবচেয়ে বড় যে কাজটি আমরা দেখেছি, তারা সমাজের একদম অবহেলিত যে শিশু, তাদের সংস্কৃত শেখানো, গান শেখানো বা মূলধারার মধ্যে নিয়ে আসার কাজটি করে থাকে। এ জন্য বন্যাকে (সুরের ধারার প্রতিষ্ঠাতা ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা) সত্যিই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন আইয়ুব খান ছিলেন রাষ্ট্রপতি। তখন গভর্নর ছিলেন মোনায়েম খান। সেই সময় হঠাৎ ঘোষণা পেলাম, রবীন্দ্রনাথ পড়া যাবে না, রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া যাবে না। তখন রবীন্দ্রচর্চা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ঘোষণার পর আমরা কিন্তু বসে থাকিনি। আমরা ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ করেছি, শিক্ষকরা প্রতিবাদ করেছেন, সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতিবাদ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব শিশু একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় বস্তিতে বাস করে বা মানবেতন জীবনযাপন করে, তাদের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের যেন মানবেতন জীবনযাপন করতি না হয়, তার জন্য যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি তাদের সংস্কৃতিচর্চার মধ্যে নিয়ে আসা, তাদের ভেতরে যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, তার বিকাশিত করার যে প্রচেষ্টা, সেটাই একটি বিরাট কাজ। সুরের ধারা সেই কাজটি করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিবার রাজনীতি যেমন করেছে, সেইসঙ্গে সাহিত্য চর্চা, বই পড়া, সংগীত চর্চা ইত্যাদি বিষয়গুলোর সঙ্গেও আমরা সবসময় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলাম। মা-বাবার কাছ থেকেই এটা আমরা পেয়েছি। আমরা সবসময় বিশ্বাস করি, একটি দেশকে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে যদি উন্নত করতে হয়, তাহলে কেবল অর্থনৈতিক মুক্তি না, সাংস্কৃতিক মুক্তিও একান্তভাবে প্রয়োজন। তাই সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রগুলো প্রসারিত করা প্রয়োজন। এটা জাতির পিতাও বলে গেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর জন্য আমাদের যা যা করণীয়, সরকার গঠনের পর থেকেই করে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি আশা করি, বাংলাদেশে আজ যেভাবে সবার প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে, স্বাধীনতার পর ৪৭ বছর সময় লাগলেও যেভাবে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে চাই। আমি এটুকু চাই, আমরা বাঙলি জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। আমরা বিজয়ী জাতি, সেই হিসেবে আমরা বিশ্বে যে সম্মান পেয়েছিলাম, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সেই সম্মান হারালেও আবার তা ফিরে পেয়েছি। সেই ধারাটা আমাদের ধরে রাখতে হবে, অব্যাহত রাখতে হবে।’
আমাদের সংস্কৃতিক অঙ্গন আরও বিকশিত হোক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠুক, সেটাই কাম্য বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, এটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হবো।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি