বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

রাজিবপুরে ১০ টাকার চাল নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১০

রাজিবপুরে ১০ টাকার চাল নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১০

রৌমারী (কুড়িগ্রাম), ১২ এপ্রিল, এবিনিউজ : কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকার চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলি ও বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। তালিকাভুক্তদের চাল না দেয়ার জের ধরে ডিলার ও ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনের মাঝে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে আশংকাজনক দুইজনকে প্রথমে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ও আজ বৃহষ্পতিবার উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নে দু’দফায় ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ অভিযুক্ত ডিলারকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনাস্থল কোদাকাটি বাজারে পুলিশের অতিরিক্ত টহল বসানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা রাজিবপুর থানার এএসআই আব্দুল মান্নান গুলি বর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেন।

রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আহতদের দু’জনেই মাথায় আঘাত প্রাপ্ত। একজনের মাথায় গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, বুধবার চাল দেয়া আর না দেয়া’কে কেন্দ্র করে কামাল হোসেন নামের এক ইউপি সদস্যকে মারপিট করে ডিলারের লোকজন। এ ঘটনার তদন্ত করার জন্য রাজিবপুর থানা পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদে গেলে ডিলারের লোকজন পরিষদে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানকে নাজেহাল করে।

পরে চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দু’পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে গুরুতর আহত ইউপি চেয়ারম্যানের দুই ভাতিজা বিপ্লব রহমান (২৬) ও মাহফুজুর রহমান (২৫) প্রথমে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

এ অবস্থায় চেয়ারম্যান পক্ষের লোকজন বিক্ষোভ মিছিলসহ ডিলারের স্বজন আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে।

ঘটনাস্থলে থাকা এএসআই আব্দুল মান্নানসহ ৪ পুলিশ সদস্য বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি অবরূদ্ধ করে রাখে। বিক্ষুদ্ধরা অভিযুক্ত ডিলারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। ঘন্টা খানেক পর রাজিবপুর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে অবরূদ্ধদের উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত ডিলারকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। এনিয়ে কোদালকাটি বাজারে এখন থমথমে বিরাজ করছে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ডিলার তোতা প্রমাণিক কোদালকাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

কোদালকাটি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আমার ওয়ার্ডভুক্ত এলাকায় ২৬২জন সুবিধাভোগী রয়েছে। ডিলার সবার কার্ড তার নিজের হেফাজদে নিয়ে নেয়। বলে মার্চ এপ্রিল দুই মাসের চাল এক সঙ্গে দিবে। সুবিধাভোগীরা চালের জন্য গেলে ডিলার তাদের চাল না দিয়ে ফেরত দেয়। এ অবস্থায় আমি তালিকাভুক্তদের সঙ্গে নিয়ে গেলে ডিলার তোতা প্রমানিক ও তার ভাইরা চাল তো দেই না উল্টা আমাদের মারধর করে। কার্ডগুলো ফেরত চাইলেও সে তা দেয় না। মূল কথা হলো ডিলার ওইসব সুবিধাভোগীদের নামের দুই মাসের বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।’ একই ধরনের অভিযোগ করেন অন্যান্য ওয়ার্ডের মেম্বার ও তালিকাভুক্ত সুবিধাবাদিরা।

সংশ্লিষ্ট এলাকা কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছুক্ক বলেন, ‘ওই ডিলার প্রতিবারই সুবিধাভোগীদের নামের চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। আমি একাধিকবার তাকে সর্তক করে দিয়েছে। এলাকার মানুষ আমার কাছে ছুটে এসে চাল না পাওয়ার অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় আমি ওই ডিলারকে সুবিধাভোগীদের চাল দেয়ার জন্য বললে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের সামনে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে ওই ডিলার ও তার স্বজনরা আমাকে নাজেহাল করেছে। সে আমার লোকজনের ওপর পাইপগানের চার রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোদালকাটি ইউনিয়নের ১, ২, ৪, ৫ ও ৭ নং ওয়ার্ডের খাদ্যবান্দব কর্মসূচীর ডিলার তোতা প্রমাণিক। এর অধিনে তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগী ৬৪৫ জন। প্রতি সুবিধাভোগী ১০ টাকা কেজি দরে একজন ৩০ কেজি চাল কিনবে ওই ডিলারের কাছ থেকে। চলতি বছরের মার্চ, এপ্রিল, মে এবং সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সরকার ওই সুবিধা দিবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ডিলার তোতা প্রমানিক কালোবাজারে চাল বিক্রির কথা অস্বীকার করে কলেন, ‘প্রথম দিন বুধবার চাল বিতরণের সময় কামাল হোসেন মেম্বার এবং চেয়ারম্যানের কিছু চেলাচামছা আমাকে বাধা দেয়। বলে তাদের আলাদা সুবিধা দিতে হবে। এতে আমি না দিলে তারা কয়েক বস্তা চাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়। আমার লোকজন বাধা দিতে গেলে ওই হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়। পরের দিন চেয়ারম্যান আরো লোকজন নিয়ে আবারও চাল বিতরণে বাধার সৃষ্টি করলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। তারা আমার ভগ্নিবতির বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আর পুলিশ অন্যায় ভাবে আমাকে ধরে নিয়ে আসে। চেয়ারম্যানের লোকই গুলি বর্ষণ করেছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দ্বীপঙ্কর রায় জানান, ওই ডিলার চাল কালো বাজারে বিক্রির বিষয়টি চেয়ারম্যান মেম্বাররা আমাকে জানিয়েছে। আতি তাদের অভিযোগ দিতে বলেছি।’

রাজিবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষ আর গুলি বর্ষনের ঘটনা আমিও শুনেছি। সেকারনে ডিলার তোতা প্রমানিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

তবে গুলি বর্ষনের বিষয়ে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম বলেন, ‘ওখানে গুলি বর্ষণ হয়েছে এটা আমি বলব না। সংঘর্ষের সময় নানা ধরণের শব্দ হয়। তদন্ত করে দেখব যে আসলে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা।’

এবিএন/রফিকুল ইসলাম সাজু/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত