![খাগড়াছড়ির রাঙামাটি সীমান্তে রহস্যময় আগুন: দেড় কোটি টাকার ক্ষতি](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/16/fire_abnews24_01_135394.gif)
খাগড়াছড়ি,১৬ এপ্রিল, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সীমান্তে বাঘাইছড়ি সাজেকে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায় কাচালং রিসোর্ট, গরবা রিসোর্ট এবং সাজেক বিলাস আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটির সাজেকে রাত ২টার সময় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
আগুন লাগার ঘটনা নিশ্চিত করে স্থানীয় মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, এ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে তিনি জানান। যে কোন কারনে একমাত্র স্থল যোগাযোগ মাধ্যম খাগড়াছড়ি পথ দিয়ে যেতে হয়।
এ অগ্নিকান্ডে পর্যটন স্পটের দুইটি কটেজ সম্পূর্ণ ভস্মিভূত এবং একটি কটেজ আংশিক ভস্মিভুত হয়েছে। এতে আনুমানিক দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ভস্মিভূত এই পর্যটক রিসোর্ট দুইটির নাম কাজালং গেস্ট হাউজ ও সাজেক বিলাস। এছাড়াও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ রিসোর্টটির নাম গরবা হোটেল।
আগুনে রিসোর্ট দুটোতে থাকা সাধারন পর্যটকদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাদের সকলে নিরাপদে বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, রোববার দিনগত রাত ২টার দিকে হঠাৎ করে রুইলুই পর্যটন পাড়া কেন্দ্রের কাজালং রেস্ট হাউজ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববতী সাজেক বিলাস ও গরবা রেস্ট হাউজে। উচ্চতার কারণে সাজেক পর্যটন রিসোর্টে প্রচন্ড পানির সঙ্কট থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টকর ছিলো। আগুনের খবর পেয়ে দিঘীনালা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয় জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।
পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় দুইঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানা যায়। আগুনের রহস্য জানা না গেলও চুলার আগুন, বিড়ি কিংবা সিগারেটের আগুন থেকে এঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা এ দাবি মানতে নারাজ। এখানে অন্য কোনো রহস্যের গন্ধ রয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এঘটনায় দেড় কোটি টাকা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
কাজালং রিসোটের জ্বালানী কাঠ থেকে থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল আনোয়ার দাবী করেছেন।
এদিকে দিঘীনালা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমরা প্রথমত ধারণা করেছি কাজালং গেস্ট হাউজ এর রান্নাঘর থেকে অথবা ধুমপানজনিত বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে এবং ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটসহ স্থানীয় জনগণ পুলিশ বিজিবি সেনাবাহিনীর সহায়তায় দুই ঘন্টা ব্যাপি চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
তবে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের এই দাবী সঙ্গত কারণে স্থানীয়রা মানতে রাজী নন। তারা মনে করছেন, এতো রাতে সাজেকের কোনো রেস্ট হাউজে রান্না বা আগুন জ্বালানো থাকার কথা নয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগুনের পোড়া কাজালং গেস্ট হাউজের মালিক বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পিসিজেএসএস সংস্কারের কেন্দ্রীয় নেতা সুদর্শন চাকমা এবং সাজেক বিলাসের মালিক একই দলের সমর্থক জ্যোতি চাকমা।
গত রাতে সন্ধ্যা ৭টা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সীমান্তে প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউপিডিএফের দুই কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে পিসিজেএসএস সংস্কারের মালিকানাধীন কাজালং রিসোর্টে আগুন লাগানো হয়ে থাকতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র এ দাবীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করলেও তারা প্রকাশ্যে বলতে কেউ রাজী নন।
উল্লেখ্য খাগড়াছড়ি-রাঙামাটির সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক থানার দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র সাজেকের রুইলুই ও কংলাক পাড়া পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠে। এই পর্যটক এলাকায় নামী-দামী কাজালং গেস্ট হাউজ, সাজেক বিলাস, গরবা হোটেল ইত্যাদি বিলাস-বহুল আবাসিক ব্যবস্থা তৈরী করে ব্যবসায়ীরা পদ পরিবর্তনে বানিজ্যিক ব্যবসা শুরু করেন।
এবিএন/চাইথোয়াই মারমা/জসিম/নির্মল