শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

নিজ জায়গায় ব্যবসা করতে চাই কেএসআরএম

নিজ জায়গায় ব্যবসা করতে চাই কেএসআরএম

চট্টগ্রাম, ১৬ এপ্রিল, এবিনিউজ : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানাধীন বাড়বকুন্ড এলাকায় রেলের ১শত ৬৪ শতক জায়গা ১৯৮০ সালে লীজ নেন নুরুল আলম গং। সেই থেকে ভূমি লাইসেন্স ও ভ্যাট প্রদান করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভোগদখল করেন ইজারা গ্রহীতা নুরুল আলম। স¤প্রতি জায়গাটি নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছে চট্টগ্রামের অন্যতম দুই বৃহৎ দুই শিল্প গ্রুপ।

এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠান দুটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অগ্রনী ভূমিকা রাখা কেএসআরএম ও পিএইচপি গ্রুপের মধ্যে জায়গা নিয়ে সৃষ্ট এ বিরোধের দ্রুত সমাধান চান চট্টগ্রামে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়বকুন্ডের আনোয়ার জুটমিল গেইট এলাকায় ঐ জায়গার পেছনের পিএইচপি'র ১৬০ একরের বনায়ন প্রকল্প রয়েছে। বিরোধ পূর্ণ জমিটি মূলত সামনের দিকের জমি এবং সেই জমির ওপর দিয়েই পিএইচপি'র প্রকল্পে যাতায়াত করতে হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, এই জমির মালিকানা নিয়ে কেএসআরএম ও পিএইচপি গ্রুপ একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছে। অবিলম্বে বিষয়টির সুরাহা না হলে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশংকা করছেন তারা। তবে বর্তমানে জমিটি কেএসআরএম কতৃপক্ষের দখলে থাকলেও পিএইচপি'র বনায়ন প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য কেএসআরএম কতৃপক্ষ আনুমানিক ৩০ ফুট সড়কের জায়গা ছাড় দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে পিএইচপি'র দাবী পুরো ১.৬৪ একর জায়গাটি তাদের ক্রয়কৃত।

রেলের ইজারাকৃত জায়গা নিয়ে দেশের স্বনামধন্য দুই শিল্প প্রতিষ্ঠানের রশি টানাটানির মূল তথ্য উদঘাটন করতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে কথা হয় জায়গাটির প্রথম ও মূল ইজারা গ্রহিতা নুরুল আলমের সাথে। শুদ্ধ ও চট্টগ্রামের ভাষা মিশিয়ে বক্তব্য দেন ইজারা গ্রহিতা নুরুল আলম।

তিনি বলেন, আঁই ৪৮ বচর ধ্বরি হাজনা দ্যিই আঁচি,এঁহনো আঁর লিজ আছে। লিজ ইতোরঘরে অথরাইজ গরি দিচি। (কেএসআরএম) কেসালমরে দিচি। ওকুল অলা পিএইচপি ওয়ালাগো দ্যিই নো, কেএসালামগো (কেএসআরএম) দিচি। (আমি প্রায় ৪৮ বছর ধরে খাজনা দিয়ে যাচ্ছি এখনো আমার লিজ আছে। আমি ওদের হস্থান্তর অথ্যাৎ কে এস আর এমকেই হস্তান্তর করেছি। ওপারের পিএইচ পি দের জায়গা হস্তান্তর করিনি,হস্তান্তর করেছি এপারের কে এস আর এম কে)।

নুরুল আলমের ছেলে শহিদুল আলম মাসুদ জানিয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকে এক একর ৬৮ শতক জায়গাটি আমার বাবা নুরুল আলমের নামে লিজকৃত। রেল থেকে ইজারা প্ওায়ার পর থেকেই জায়গাটিতে বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ লাগানোর পাশাপাশি কৃষিকাজ করে আসছিলেন তিনি। প্রতি বছর বছর খাজনাও পরিশোধ করেছি।

গত ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আমি এবং আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করার ফলে চাষাবাদ দেখার মত কেউ ছিল না। এবং বয়সের ভারে ও নানা অসুবিধার কথা উল্লেখ করে জায়গাটিতে কৃষিকাজে অপারগতা প্রকাশ করে আমার বাবা। পরে রেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে এবং পাশ্ববর্তী কেএসআরএমকে জায়গাটি হস্তান্তর করেছেন বলে জানিয়েছেন জায়গাটির মুল মালিক নুরুল আলমের ছেলে শহিদুল আলম।

এ বিষয়ে কেএসআরএম স্টিল প্লান্ট লি. প্লান্ট কো অর্ডিনেটর, মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসাইন জানিয়েছেন, জমির ১ম ইজারা গ্রহিতার বক্তব্যের পর জমির মালিকানার বিষয়টি নিয়ে আর কোন বিরোধের অবকাশ থাকার কথা নয়। তারা বরাবরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই আজ অব্দি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। আগামীতেও তাদের এই ধারা অব্যহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এর আগে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, কেএসআরএম কতৃপক্ষ রেলওয়ের কাছ থেকে ১ম লিজ গ্রহিতা নুরুল আলম নিজে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে রোটারী পাবলিকের মাধ্যেমে ভূমিহস্তান্তর করেন।

তিনি জানান, নুরুল আলম একজন অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ, আমাদের সাথে সম্পাদিত দলিলে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। সা¤প্রতিক কেএসআরএম কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও জবর দখলের যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অসত্য বলে দাবি করেন তিনি।

পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এর এইচ আর প্রধান অভিজিত চক্রবর্তী সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, পিছনে পিএইচপির ফ্যাক্টরী ও সামনে পিএইচপির প্রকল্প এখানে কেএসআরএমের আসার প্রয়োজন কি?

এদিকে রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কেএসআরএম এবং পিএইচপি গ্রুপ উভয় পক্ষ ১শত ৬৪ শতক জায়গার মালিকানা দাবি করে রেল কর্র্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান। পরে বিষয়টি সুরাহা করতে কেএসআরএম, পিএইচপি ও নুরুল আলম গংএর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় শুনানী শেষে রেলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয় ১.৬৪ একর জায়গাটি কেএসআরএম এর।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পুর্বাঞ্চল ভুসম্পত্তি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ইশরাত রেজা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন কৃষি লাইসেন্সের নুরুল আলম গং অথ্যাৎ নুরুল আলম ও বাকি আরো তিনজনসহ মোট চারজন, ইকবাল হোসেন চৌধুরীর পক্ষে এসেছিলেন মো. আমির হোসেন এবং সেলিম উদ্দিনের পক্ষে এসেছিলেন মো. আবু তাহের। সেই প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে ত্রীপক্ষিয় শুনানীর মাধ্যমে এটি শুনানী হয়েছিল। তখন সেমি উদ্দিনকে ১.৬৪ একর জায়গাটির লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। মূলত ত্রিপক্ষীয় শুনানীর মাধ্যমে রেলের এ জায়গাটি লিজ দেয়া হয়েছিলো কে এস আর এমকে। পিএইচপি লিজ নিয়েছে তবে অন্য জায়গায়।

জায়গা নিয়ে দেশের স্বনামধন্য দুটি শিল্প পরিবারের মধ্যে সৃষ্ট এই বিরোধ দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সমস্যার দ্রুত সমাধানে ব্যবসায়ী নেতাদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত