![আতঙ্কে রয়েছেন কোটা আন্দোলনের চার শীর্ষ নেতা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/16/quota-reform_135492.jpg)
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, এবিনিউজ : যে তিনজনকে - রাশেদ খান, ফারুক হাসান এবং নুরুল হক নুরু - সোমবার গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে হাত ও চোখ বেঁধে উঠিয়ে নিয়ে যায়, তারা সবাই সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক।
সংগঠনের আহবায়ক হাসান আল মামুন বিবিসিকে বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি বুঝে তিনি সময়মত সরে পড়েছিলেন।
মূলত এরা চারজনই এই আন্দোলন নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন, সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
ছাড়া পাওয়ার পর নুরুল হক কণ্ঠে উদ্বেগ নিয়ে বিবিসিকে বলেন, "ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। আমরা জীবনের আশঙ্কা করছি, প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাইছি.. ।"
তিনি বলেন, "আমাদের আটকের খবর দ্রুত মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে আসায় পুলিশ আমাদের আজ ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু তারা আমাদের সহজে ছাড়বে বলে মনে হয়না।"
সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ শোনা গেছে আন্দোলনের আরেক যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খানের কণ্ঠে। তিনি জানান, ঝিনাইদহের গ্রাম থেকে তার কাঠমিস্ত্রি বাবাকেও পুলিশ ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
একটি দৈনিক পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে - রাশেদ খান এবং তার পরিবার জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট।
আন্দোলনের অন্য তিন শীর্ষ নেতার অতীতের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও লেখা হয়েছে ঐ খবরে।
ঘন্টাখানেক আটক রাখার সময় পুলিশ অবশ্য এই ছাত্রদের রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা জিজ্ঞেস করেনি।
তবে কোটা-সংস্কার আন্দোলনের এই নেতাদের ধারণা- সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ইস্যু তুলে তাদেরকে বিতর্কিত করতে চাইছে।
রাশেদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, তিনি বা তার পরিবার কখনই কোনো রাজনীতির সাথে ছিলেন না।
"দু মাস ধরে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছি, পুলিশ, এনএসআই, ডিজিএফআই আমাদের নিয়ে তদন্ত করে কিছু পায়নি, বলেছে সব ঠিক আছে...এখন হঠাৎ করে আমাদের সব জামাত-শিবির বানানো হচ্ছে।"
"আমাকে মেরে ফেলে ফেলুক, কিন্তু আমার পরিবার পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।"
জানা গেছে, ফারুক হাসান, নুরুল হক এবং হাসান আল মামুন - এরা তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। তারপরও আতঙ্কে পড়ে গেছেন তারা সবাই।
নুরুল হক বিবিসিকে বলেন, ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্টের যে সব পোস্টিং-এর কথা উল্লেখ করে রাশেদ খানকে শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, সেটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "বিভিন্ন ভুয়া খবর ছড়িয়ে যারা সাধারণ ছাত্রদের উত্তেজিত করেছে, ভিসির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তাদেরকে আমরা নজরদারিতে নিয়ে আসছি।"
মন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের সাথে সাধারণ যেসব ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আন্দোলনের নেতাদের সোমবারের আটকের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, পুলিশ হয়তো জিজ্ঞাসাবাদ করেতে চেয়েছে।
"নিশ্চিত না হয়ে পুলিশ কিছু করবে না" - বলেন তিনি।
তোপের মুখে ইত্তেফাক
চার শীর্ষ নেতার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্কিত খবরটি ছাপা হয়েছিল ঢাকার দৈনিক ইত্তেফাকে।
ক্যাম্পাসে এবং বিভিন্ন ছাত্রাবাসে দৈনিক ইত্তেফাকের কপি পোড়ানো হয়েছে। ছাত্রদের মিছিলে স্লোগান তোলা হয়েছে।
পরপরই দৈনিক ইত্তেফাক তাদের অনলাইন সংস্করণ থেকে খবরটি প্রত্যাহার করে নেয়, এবং দুঃখ প্রকাশ করে।
পরে দৈনিকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বিবিসিকে বলেন,
এটা নিয়ে নতুন করে আন্দোলন অশান্তি যাতে না হয়, সে জন্যই তারা খবরটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন।
"সত্যতা না থাকলে সেটা দুঃখজনক...তবে সে সময় সন্দেহ ছিল যে এই আন্দোলনকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিনা। অনেকেই বলেছেন, জঙ্গি বা মৌলবাদীদের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।"
"যা রটে তা কিছুটা তো বটেই। তবে খবরটি কতটা ঠিক তা যাচাই করে দেখতে হবে...আমাদের রিপোর্টারের কাছে কিছু তো ছিলই, তবে আরও যাচাই করতে হবে।" সূত্র: বিবিসি বাংলা
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি