![চকরিয়ায় বিদ্যালয় মাঠে তামাক চাষ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/17/chakaria-abnews_24_135590.gif)
চকরিয়া (কক্সবাজার), ১৭ এপ্রিল, এবিনিউজ : কক্সবাজারের চকরিয়ায় ব্যাপক হারে বেড়েছে তামাক চাষ। তামাকের আগ্রাসন থেকে বাদ যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যন্ত। তেমনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পুর্ব কৈয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে চাষ করা হয়েছে তামাকের।
বিদ্যালয়ের মাঠে তামাক চাষ করার ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি তামাকের গন্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পূর্ব কৈয়ারবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠটি নিরঞ্জন দাশ নামের এক ব্যক্তির। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে এ জমি দেখাশোনা করছেন। তিনি স্কুল মাঠের ওই জমিটি স্থানীয় এক চাষীকে বর্গা দেন চাষ করার জন্য। ওই বর্গা চাষী ওই জমিতে কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করে আসছে।
পূর্ব কৈয়ারবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেখা রানী দাশ জানান, স্কুলের সামনে মাঠটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। যার কারণে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগের কাউকে বলা হয়নি।
পূর্ব কৈয়ারবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো.গিয়াস উদ্দিন বলেন, স্কুলের জমিটি মূলত দান করেছিল ওই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি। স্কুল ভবনটি ছাড়া সামনে জায়গাটি ওদের। যার কারণে আমরা কিছু করতে পারিনা।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই সামনের জায়গাটি ক্রয় করে স্কুলের কাজে ব্যবহার করতে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে কিনা হচ্ছেনা।
পূর্ব কৈয়ারবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মো.জসীম উদ্দিন জানান, মাঠে তামাক চাষ করায় আমরা খেলাধুলা করতে পারি না। দুপুরে বিরতির সময় বারান্দাতেই অলস সময় কাটাতে হয়।
টিআইবির সহযোগি প্রতিষ্ঠান সনাক চকরিয়ার ব্যবস্থাপক এজেএম জাহাংগীর আলম কয়েকদিন আগে স্কুল মাঠে তামাক চাষের দৃশ্যটি ধারণ করেন। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট দিলে এ প্রতিবেদকের নজরে আসে বিষয়টি।
চকরিয়ায় তামাক চাষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে কাজ করছেন উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণ গবেষনা (উবিনীগ) নামের একটি এনজিও সংস্থা। সংস্থাটির কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মো.জয়নাল আবেদিন জানান, চকরিয়া উপজেলায় প্রতিবছর ফসলি জমির পাশাপাশি সরকারি খাসজমিতে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের আগ্রাসন।
প্রতিবছর বেড়ে যাচ্ছে তামাক চাষের বিস্তার। কিন্তু চলতি বছর স্কুলের মাঠ পর্যন্ত তামাক চাষের দখলে চলে গেছে যা সত্যি দু:খজনক। স্থানীয় ট্যোবাকো কোম্পানী সমুহের লোভনীয় ফাঁদে পড়ে চাষীরা পরিবেশ বিধ্বংসী এ চাষে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের নিলিপ্ততার সুযোগে প্রতিবছর উপজেলাজুড়ে বেড়ে চলছে তামাক চাষের ভয়াবহতা।
প্রতিবছর তামাক চাষের ভয়াবহ বিস্তারের কারনে উপজেলার প্রতিটি জনপদে (বিশেষ করে তামাক চাষ এলাকায়) কমে যাচ্ছে আবাদি জমির (ফসলি জমি) পরিমান।
চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের কাউন্সিলর এম. আর মাহামুদ ও এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, তামাক চাষের কারনে উজার হচ্ছে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের মুল্যমান বৃক্ষরাজি। প্রতিবছর অন্তত আড়াই হাজার তামাক চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে পুড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। এবছরও তামাক চুল্লিতে কাঠ পুড়ানোর উৎসব শুরু হয়েছে।
স্কুলের মাঠে তামাক চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল কাদের বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নয়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কেউ আমাকে স্কুল মাঠে তামাক চাষ করার বিষয়টি জানাননি। খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।
এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/জসিম/নির্মল