বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
পাঁকতে শুরু করেছে ধান

সুনামগঞ্জে শ্রমিক সংকটে দিশেহারা কৃষক

সুনামগঞ্জে শ্রমিক সংকটে দিশেহারা কৃষক

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ), ১৭ এপ্রিল এবিনিউজ : ধানতো পাকতাছে বেপারী তো পাইতেছিনা,যেদিন থাইকা ভাগুলারা বিদায় অইছে হেই দিন থাইক্কা বেপারী অভাব দেখা দিছে। উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির তিনি আজ মঙ্গলবার দুপুরে গিয়েছিলেন শনির হাওরে তার রোপন কৃত জমি দেখতে। জমি দেখে ফেরার পথে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি এভাবেই ধান কাটা শ্রমিকের সংকটের কথা ব্যাক্ত করেন আঞ্চলিক ভাষায়।

তার ভাষায় যারা ভাগে ধান কাটেন তাদেরকে হাওরপারের কৃষকরা ’’ভাগালু’ কিংবা বেপারী” বলে থাকেন। এক সময় ফরিদপুর মাদারী,শরীয়তপুর অঞ্চল থেকে হাওরাঞ্চলে ধান কাটতে যে সকল শ্রমিকরা আসতেন তাদেরকে ভাগালু হিসেব স্থানী কৃষক চিনতেন। যে দিন থেকে ঐ সমস্ত অঞ্চলের ধান কাটা শ্রমিক আসা বন্ধ হয়ে গেছে তখন থেকেই ক্রমে ক্রমে হাওরাঞ্চলে ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ধান কাটা শ্রমিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়ছে তাহিরপুরে হাওরপারের কৃষক । বিগত বছর অকাল বন্যায় ফসল হারিয়ে চলতি বছর অতিকষ্ঠে কৃষক ধান রোপন করলেও ধান কাটা মৌসুমে শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছেন না উপজেলার ২৩ টি ছোট বড় হাওরের কৃষকগন। না পাওয়ায় অনেকটা হতামাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন তারা।

হাওরপারের কৃষকদের সুত্রে জানা যায়,আশির দশকে সুনামগঞ্জের জেলার তাহিরপুর,জামালগঞ্জ সহ বিভিন্ন উপজেলার শানি.মাটিয়ান,আলী হাওর সহ বড় বড় বোর ফসলী হাওরে ধান কাটতে শ্রমিক আসতো ফরিদপুর,মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে । নব্বই দশকের দিকে ঐসব অঞ্চল থেকে ধান কাটা শ্রমিকরা আর আসে না সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের উপজেলাগুলোতে। সে সময় থেকে কিছু শ্রমিক আসতে শুরু করে ময়মনসিংহ জেলার ধুবাউড়া ও নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর,কলমাকান্দা উপজেলা থেকে। ২ হাজার পরবর্তী সময়ে ঐ সমস্ত এলাকার শ্রমিকরাও আর আসেন না সুনামগঞ্জ জেলায় ধান কাটতে।

তখন থেকে তাহিরপুরের হাওরপারের কৃষকগন উপজেলার অভ্যন্তরের বিভিন্ন গ্রাম ও পাশর্^বর্তী উপজেলাগুলোতে ধান কাটার শ্রমিক সংগ্রহ করতেন। কিন্তু গত দু’বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ও পাশ^বর্তী উপজেলা থেকেও শ্রমিক আসা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। চলতি বছর মাত্রাতিরিক্তভাবে দেখা দেয় ধান কাটা শ্রমিক সংকট। জানা যায়,হাওরপারের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকগন জমি রোপনের পর থেকেই শ্রমিক খুঁজে হন্য হয়ে বেড়িয়েছেন এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলেওর গ্রাম গঞ্জে কিন্ত কোথাও তেমন কোন সারা পাচ্ছেন না।

কৃষকরা জানান,উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন,উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়ন,উত্তরব ড়দল ইউনিয়ন ও বিশ^ম্ভ^রপুর উপজেলার দক্ষিন বাদাঘাট ইউনিয়নে কিছু শ্রমিক পাওয়া যেত কিন্তু ঐ সমস্ত এলাকার শ্রমিকরা যাদুকাটা নদীতে বালি পাথর উত্তোলন ও পরিবহনে ব্যাস্ত এবং কিছু শ্রমিক ভারতে থেকে আমাদনীকৃত কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহনে ব্যস্ত থাকায় চরমভাবে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকলে চলতি বছর হাওরপারের কৃষক যথা সোনালী ধান কাটতে পারবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে স্থানীয় কৃষক ও জনমনে।

স্থানীয় লোকজন ও কৃষকদের অভিমত বোর ধান কাটা মৌসুমে কিছুদিন যাদুকাটা নদীতে বালিপাথর উত্তোলন বন্ধ ও উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নে কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহন বন্ধ থাকেল এ সংকট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়,চলতি বছর উপজেলার ২৩ টি ছোট বড় হাওরে ১৮ হাজার হেক্টর বোর জমিতে ধান চাষাবাদ লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

যা থেকে ১ লক্ষ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস। গোবিন্দ্রশ্রী গ্রামের কৃষক সেলিম আখঞ্জি বলেন,তিনি বোর ধান রোপনের পর থেকে অদ্যবদি ধান কাটা শ্রমিক খুঁজছেন কিন্তু এখনো শ্রমিক খুজে পাচ্ছেন না।

মাটিয়ান হাওরপার কাউকান্দি গ্রামের কৃষক আলীনুর মিয়া বলেন, যে শ্রমিকরা ধান কাটতে হাওরে আসতেন এখন সে শ্রমিকরা যাদুকাটা নদীতে বালি পাথর উত্তোলন ও পরিবহনে ব্যস্ত । তিনি আরও বলেন ধান কাটা মৌসুমে যদি বালি পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ না থাকে তাহলে হাওরপারের কৃষকদের শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে সমস্যা হবে।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুছ ছালাম বলেন, সরকার ভর্তুকিতে ধান কাটার কিছু মেশিন দিয়েছে সেগুলো পেলে পাশাপাশি কিছুদিন যাদুকাটা নদী ও শুল্ক স্টেশনগুলো বন্ধ থাকলে শ্রমিক সংকট কিছুটা কমবে এবং কৃষক ধান কাটতে পারবে।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত