বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • কালিগঞ্জে এনজিও পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

কালিগঞ্জে এনজিও পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

কালিগঞ্জে এনজিও পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা), ২০ এপ্রিল, এবিনিউজ : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে মানবাধিকার জন কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামক এনজিও’র (এম.জে.এফ) পরিচালক আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে এম.জে.এফ নামে বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুলের জমি কেনা, ভবন নির্মান, নিয়োগের নামে শিক্ষক/শিক্ষকাদের নিকট হতে অর্ধ্যকোটি টাকার অর্থ বাণিজ্য ও আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অত্র স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অত্র স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম মাঈন উদ্দীন হাসানের নিকট গত ২৮মার্চ নানান দূর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

তার প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্কুলে গেলে স্থানীয় সুধী, অভিভাবক, সাংবাদিক, ডোনারদের সামনে দূর্নীতিবাজ আজহারুল ইসলাম ও তার অপর সহযোগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি পরিচয় দানকারী আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম হত্যা সহ একাধিক সহিংস মামলার আসামী বি,এন,পি জামায়াতের ক্যাডার হাফিজুর রহমান শিমুলের বিরুদ্ধে শিক্ষক কর্মচারীরা দূর্নীতি ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিস্তার অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অত্র স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম মাইন উদ্দীন হাসানের নিকট তুলে ধরেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি করে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন শিক্ষক, শিক্ষিকাদের নিকট হইতে অর্থ আত্মসাত, খারাপ ব্যবহার, অসামাজিক আচারণ, প্রমানিত হলে দোষি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় এনে কঠোর ভাবে বিচার করা হবে।

এসময় অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক জালালুর রহমান, সহকারী শিক্ষক জি,এম, আসিক ইকবাল, শিক্ষিকা সন্তোষী তরফদার, খাদিজা পারভীন লিখিত বক্তব্যে জানান দূর্নীতিবাজ আজহারুল ইসলাম মানবাধিকার জন কল্যান ফাউন্ডেশন এনজিও সংক্ষেপে এম,জে,এফ নামক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসাবে ২০০৩ সাল হতে কাজ করে আসছে। ২০১০ সালে এম.জে.এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাতা ব্যক্তির নিকট হতে চাদা সংগ্রহ করে প্রথমে কাজলা গ্রামে পরে নলতা ঘর ভাড়া নিয়ে প্রতিবন্ধী স্কুল ও এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

২০১৪ সালে স্কুলের জমি ও ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলার বাজুয়া গড় গ্রামের ডাঃ নজরুল ইসলামের নিকট ধুরন্ধর আজহারুল ইসলাম সাহায্য চাইতে গেলে তিনি প্রতিবন্ধীদের স্কুল ভবনের কথা চিন্তা করে ৬ লক্ষ টাকা জমি কেনার জন্য দান করেন। উক্ত টাকা নিয়ে ধান্দাবাজ আজহারুল কিছু টাকা দিয়ে কালিগঞ্জ সাতক্ষীরা মহা সড়কের বাম পাশে ভাড়াশিমলা বিলের মধ্যে ১৫শতক জমি স্কুলের নামে ক্রয় না করে তার এনজিও প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার জন কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নামে ক্রয় করেন এবং সে নিজে পরিচালক সেজে তার সঙ্গে কালিগঞ্জ উপজেলার বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম উদ্দীন হত্যা মামলার আসামী সহ একাধিক সহিংস মামলার আসামী হাফিজুর রহমান শিমুল কে তার সহযোগী বানিয়ে উপজেলার বড় বড় ব্যবসায়ী, দাতা সংস্থা এবং ধনাড্য ব্যক্তিদের নিকট হতেপ্রতিবন্ধী স্কুলের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা চাদা তুলে দুজনে ভাগ বাটোয়ারা করে ভোগ করে আসছিল বলে অত্র স্কুলের শিক্ষকরা জানান।

স্কুলটি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনায় সরকারী করনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বরনাপন্ন হয়ে স্কুলের সহায়তা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অত্র স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনিত করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নামে সভাপতি থাকলেও আজহারুল ইসলাম শিক্ষক নিয়োগের নামে অত্র স্কুলের ১৫জন শিক্ষক, এবং কর্মচারীদের নিকট হতে চাকুরী সরকারী করনের আশ্বাস ও মোটা অংকের বেতনের দোহাই দিয়ে শিক্ষক প্রতি আড়াই লক্ষ করে নগদ টাকা, একটি ব্লাংক চেকে স্বাক্ষর এবং আড়াই শত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিলেও অদ্যবধি অত্র স্কুলের কোন শিক্ষক কর্মচারী ২০১০ সাল হতে বিনা পারিশ্রমিকে এবং বিনা বেতনে চাকুরী করে আসছে।

তিনি ১৬ জন শিক্ষক এবং কর্মচারীর নিকট হইতে নিয়োগের নামে অধ্যকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাত করেছেন বলে জানান। অথচ পরিচালক আজহারুল ইসলাম ইতি মধ্যে ২২ লক্ষ টাকা নিজের বেতন ভাতা বাবদ উত্তেলন করেছে বলে শিক্ষক শিক্ষিকারা উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অভিভাবক, সুধী, সাংবাদিক, দাতা সদস্য এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন। এছাড়াও দূর্নীতিবাজ আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অত্র স্কুলের ২য় তলায় প্রমোদখানা বানিয়ে শিক্ষিকাদের অসামাজিক কার্যকলাপের প্রস্তাব সহ নানা হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেন। এব্যাপারে কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তার নামে কারণ দর্শানো নোটিশ সহ নানা ধরনের জীবন নাশের ও চাকুরী চ্যুত এর হুমকি দিয়ে আসছিল। এছাড়াও শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন না দিয়ে এনজিও প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে ঠোঙা বানানো, টার্কি পালন, পোল্ট্রি ফার্ম করে বিক্রির টাকা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মনে করে ভোগ করে আসছিল।

স্কুলের জায়গার ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে স্কুলের সভাপতি না হয়েও ক্ষমতাধর আজহারুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক কে কারণ দর্শনো নোটিশ দেন বলে প্রধান শিক্ষক উপস্থিত সদস্যদের ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান। এনজিও’র নামে জমি কেনার বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে গত ৪/১০/২০১৭ইং তারিখে অত্র প্রতিষ্ঠান হতে আঁধা মাইল দুরে বিলের ভেতরে ১৪শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে ক্রয় করেন বলে শিক্ষকরা জানান। তবে এ বিষয়ে কোন প্রতিবাদ ও কথা বলতে গেলে শিক্ষদের চাকুরী চ্যুত ও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে বলে জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় হতে এবং বিভিন্ন ধনী ব্যক্তির দেওয়া অনুদান, কম্বল, টাকা, খেলনা, প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য দেওয়া হলেও সে গুলো স্কুলের বাচ্চাদের না দিয়ে প্রতারক আজহারুল ইসলাম নিজে বাজারে বিক্রি করা সহ তার পরিবার পরিজন ব্যবহার করে বলে জানান।

এবিষয়ে অত্র এম.জে.এফ বিশেষ প্রতিবন্দ্বী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পরিচয় দানকারী আজহারুল ইসলামের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন আমি এপ্রতিষ্ঠানের কেউ না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ, দূর্নীতি সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা। এর সব কিছুর দায় ভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা সভাপতির।

এ প্রসংগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন অল্প কয়েক মাস আমাকে পদাধিকার বলে সভাপতি বানানো হলেও অত্র স্কুলের দূর্নীতি এবং জমি কেনার বিষয় জানা নাই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ শিক্ষকদের নিকট বিস্তারিত জেনেছি। দূর্নীতিবাজ যেই হোক তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী স্কুল নিয়ে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। এব্যাপারে সুধী এবং সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেন।

এবিএন/মোঃ রফিকুল ইসলাম/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত