![খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ইউপিডিএফ ও পিসিজেএসএস’র আধিপত্য বিস্তার লড়ায়](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/20/clash_abnews_136125.jpg)
খাগড়াছড়ি, ২০ এপ্রিল, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-এমএন লারমা)’র দুটি সংগঠনে আধিপত্য বিস্তার লড়াইয়ে জেলার ৯টি উপজেলার বিভীষিকাময় জনপদে পরিণত হয়েছে।
যা ৪০টি গ্রামের দেড় শতাধিক ৪৪ পরিবার বাস্তুচ্যুুত অভ্যন্তরীন শরনার্থী হয়েছে, ঝড় তুফান বৃষ্টিতে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগে চরমে রয়েছে। কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত ৫ম শ্রেণি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ।
আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু শরনার্থী পরিবারের সদস্যদের মাঝে ত্রাণ ও মশারী বিতরণ করা হয়েছে। পিসিজেএসএস সমর্থন করায় খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মাটিরাঙা, গুইমারা ও রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ৪০টির বেশী গ্রামের ৪৪ পরিবারকে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। প্রাণনাশের ভয়ে গত ১৫ই এপ্রিল পরিবার পরিজন নিয়ে উদ্বাস্তুর খাতায় নাম লিখাতে হয়েছে অনেককে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো জানায়, বৈসাবি উৎসবের মধ্যে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ(প্রসিত), ইউপিডিএফ গনতান্তিক(বর্মা) ও পিসিজেএসএস(এমএন লারমা) গ্রুপের নেতকর্মীরা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। অপহরণ, হামলা, পাল্টা হামলা প্রাণ হারায় অন্তুত ৭জন। তবে অধিকাংশ লাশ গুম করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের হামলা, হুমকি, বাড়ীঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্তুত ৪০টি গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবারের নারী ও শিশু খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীন শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এসময় সন্ত্রাসীরা নিপীড়ন ও নির্যাতনের পাশাপাশি অর্থ-সম্পদ লুটের অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, বাড়িঘর ছেড়ে তারা এক কাপড়ে এসেছে। অনেকের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে ত্রাণ বিতরণের ঘটনাকে ইউপিডিএফ’র জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা একটি মহলের সাজানো নাটক আখ্যায়িত করে বলেন, কেউ উচ্ছেদ করা হয়নি। বরং নিজের অপরাধ ভয়ে নিজেরা অভ্যন্তরীন পারি জমিয়েছেন।
ইউপিডিএফ গনতান্তিক(বর্মা) গ্রুপের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক মিঠুন চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ(প্রসিত) গ্রুপের হামলা ও হুমকিতে গত এক সপ্তাহে অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। তারা গ্রামে গ্রামে আমার কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষকে মারধর করছে।
পক্ষান্তরে ইউপিডিএফ’র (প্রসিত) জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মুখোশবাহিনী পুরো জেলায় অরাজকতা চালাচ্ছে। সিভিল প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না নাসরিন উর্মি বলেন, মানবিক কারণে তারা অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার দেওয়া কথাও বলেন ঐ কর্মকর্তা। পাহাড়ের আঞ্চলিক একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সমর্থকদের হুমকিতে কিছু পরিবার উদ্বাস্তু হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত করে পরিবারগুলোকে নিজ বাস্তভিটায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো চলতি মাসের শুরু থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। একজন সমাজকর্মীসহ ৬ জনের প্রাণ গিয়েছে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের হাতে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে সংগঠনগুলোর।
এবিএন/চাইথোয়াই মারমা/জসিম/এমসি