![রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস নৈরাজ্যে জড়িত](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/21/jatri-poribohon--abn_136231.jpg)
ঢাকা, ২১ এপ্রিল, এবিনিউজ : রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস নৈরাজ্য ও বিশৃংখলার সঙ্গে জড়িত। বাসে-বাসে রেষারেষি করে বেপরোয়া চলাচল ও পাল্লা-পাল্লির কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে যাত্রীরা। যত্রতত্র বাস থামানো। রাস্তার মাঝ পথে গতি কমিয়ে চলন্ত বাসে যাত্রী উঠানামা করানো। ট্রাফিক আইন লংঘন। রাস্তার মোড়ে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো- নামানো। যাত্রী ধরার জন্য বাসে বাসে ভয়ংকর প্রতিযোগিতা। অব্যবস্থাপনা ও বিশৃংখলা ঢাকার গণপরিবহনের নিত্যদিনের চিত্র। এসব কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়ক মহাসড়কে ঝরছে কমপক্ষে ৬৪ টি তাজা প্রাণ। প্রতিদিন আহত ও পঙ্গুত্বের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ১৫০ এর বেশি মানুষ।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘সড়কে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা উত্তোরণের উপায়’ র্শীষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত, ভুয়া নাম্বারধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ যানবাহন রাস্তায় চলছে যার ৭২ শতাংশ ফিটনেস অযোগ্য। অন্যদিকে সারাদেশে ৭০ লক্ষ চালকের মধ্যে বিআরটিএ লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লক্ষ চালকের হাতে। রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস ট্রাফিক আইন লংঘন করে বেপরোয়া চলাচল করে, ফলে এসব বাসে দুর্ঘটনায় কারো হাত, কারো পা, কারো মাথা, বা কারো জীবন চলে যাচ্ছে। সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্যমতে সারাদেশে জানুয়ারী ২০১৮ থেকে ২০ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত ১৭৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৪১ জনের প্রাণহানী ও ৫৪৭৭ জন আহত হয়েছে। এখানে পঙ্গু হয়েছে ২৮৮ জন।
সংগঠনটি জানায়, ট্রাফিক পুলিশ পরিবহনে শৃংখলা প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে পরিবহনে চাঁদাবাজী, টোকেনবাজী, জরিমানা আদায় ও অর্থ আত্মসাতের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। প্রকৃত মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে কোনঠাসা করে সরকারের লেজুড়ভিক্তিক গুটিকয়েক সংগঠন এই সেক্টরের মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের পরিবর্তে চাঁদাবাজী, পারমিট বাণিজ্য, কর্তৃত্ব জাহির, ক্ষমতার প্রদর্শনে ব্যস্ত রয়েছে। রাজনৈতিক ঠিকাদারেরা সরকারের কোর্ট গায়ে দিয়ে সরকারের আপন লোক সেজে সড়কে শত শত কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিয়ে যেন-তেন ভাবে কাজ করে বিল নিয়ে লাপাত্তা হচ্ছে। অথবা রাস্তা কেটে মাসের পর মাস ফেলে রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমরা এসব দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা নয় পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলতে চাই। কেননা আমাদের সড়কে সমস্ত অব্যবস্থাপনা ও বিশৃংখলা জিইয়ে রেখে নৈরাজ্যকর পরিবেশে আমাদের যাতায়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। নগরীর প্রতিটি বাস-মিনিবাসের ব্যবসা মূলত চালকরা নিয়ন্ত্রণ করছে। দৈনিক চুক্তি ভিত্তিক ইজারায় প্রতিটি মালিক তার বাসটি চালকের হাতে তুলে দিয়েছে। এতেই চালকরা যাত্রী ধরার জন্য বাসে বাসে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এমন পরিস্থিতিতে বাস চালাতে গিয়ে বাসের নিচে কে পড়লো বা কার হাত বা পা গেল তা দেখার সময় নেই চালকদের।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মানবাধিকারের অন্যতম শর্ত মানুষের বেচেঁ থাকার অধিকার, আমাদের সড়কে এই অধিকার অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের চাকায় পৃষ্ট হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে আইনের প্রয়োগ থাকলেও আমাদের এখানে প্রকৃত পক্ষে আইনের কোন প্রয়োগ নেই। সড়ক পরিবহন সেক্টরে নতুন যে আইন করা হচ্ছে তাতে সবার মতামতের প্রতিফলন হয়নি। ফলে এই সেক্টরের সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা কঠিন। তিনি প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন বিল আকারে পাশ করার আগে সবার মতামত নিয়ে সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আইনের সন্নিবেশনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এই সেক্টরের সমস্যা সমাধানে যাত্রী সাধারণের মতামত ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে এই সেক্টরে সিদ্ধান্ত গ্রহনের দাবী জানান।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ১০ টি সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো নগরীতে বাসে-বাসে প্রতিযোগিতা বন্ধে কোম্পানি ভিত্তিক একই কালারের বাস সার্ভিস চালু করা, উন্নত বিশ্বের আদলে আমলাতন্ত্রের বাইরে এসে পেশাদারিত্ব সম্পন্ন গণপরিবহন সার্ভিস অথরিটির নামে একটি টিম গঠন, ট্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম জবাবদিহিতার আওতায় আনা, চালকের হাতে দৈনিক জমা ভিত্তিক বাস ইজারা দেওয়া বন্ধ করা, বিআরটিএ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা জনবান্ধব করতে হবে, এই আদালত পরিচালনার মাধ্যমে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানী বন্ধে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে, ট্রাফিক পুলিশের মামলার জরিমানা সরাসরি ব্যাংকে জমা দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করতে হবে, সড়কে চাঁদাবাজী, টোকেন বাণিজ্য, দখলবাজী, হকার ও অনান্যদের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, রুট পারমিট ইস্যু প্রক্রিয়ায় ঢাকা মেট্রো আরটিসিতে মালিক শ্রমিক নেতাদের পরিবর্তে পেশাদারিত্ব ও কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন লোকজন নিয়ে পুন:গঠন করতে হবে, ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানী বন্ধে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এবং পরিবহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যাত্রী সাধারণের অভাব অভিযোগ তুলে ধরা ও মত প্রকাশের স্বার্থে যাত্রী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি