![জিডিপির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, রাজস্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছেনা- এনবিআর চেয়ারম্যান](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/21/abnews-24.bbbbbbbbbbbbbbbbb_136251.jpg)
চট্টগ্রাম, ২১ এপ্রিল এবিনিউজ: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, এবারের বাজেট হবে গণমূখি। তবে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে। তিনি বলেন দেশের ব্যবসা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবসায়ীদের নানাভাবে সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কারণ ব্যবসা না বাড়লে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবেনা।
তিনি বলেন জিডিপির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু রাজস্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। এবারের বাজেটে দেশে তৈরি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ করহার কমানো হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি হবে মজবুত।
আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) এবং একই দিন মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাথে পৃথক পৃথক ২০১৮-১৯ প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
পৃথক পৃথক শীর্ষ দুই চেম্বারের আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা বলেন ২০২১ সালে ৬০বিলিয়ন ডলার রপ্তানী আয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা না গেলে সে লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব হবে না। আলোচনা সভায় চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান পৃথক বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) আয়োজিত প্রথম আলোচনা সভায় আয়কর সীমা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের জবাবে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন আয়কর সীমা বৃদ্ধি করা না গেলে ট্যাক্সের হার কমানো যায় কিনা সে বিষয়ে বিবেচনার কথা জানান তিনি। বলেন, প্রতিবন্ধী, নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে এবারের বাজেটে। তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি যেভাবে বাড়ছে সেভাবে করদাতা বাড়ছে না। এবারের বাজেটে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়ে। যদি করের হার কমানো হয় তবে করদাতার সংখ্যা কমবে না।
সিসিসিআই সভায় চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম শুল্ক সংক্রান্ত ১৪৮টি, ভ্যাট সংক্রান্ত ৩০টি ও আয়কর সংক্রান্ত ৪৮টি মিলে ২২৬টি প্রস্তাব এনবিআর চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেন। ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ, নারী, প্রতিবন্ধী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধে ৫ লাখ করার প্রস্তাব দেন। তিনি কাঁচামাল ও মেশিনারি পার্টস আমদানির জন্য বছরে ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত অগ্রীম পেমেন্ট (টিটি) পাঠানোর অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখেন। চেম্বার সভাপতি কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার, নির্বাচনমুখী বাজেটের পরিবর্তে গণমুখী বাজেট দেওয়ার আহ্বান জানান। সারাদেশের মহাসড়কগুলোতে ওজন পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন না করে শুধু চট্টগ্রামে রাখাটা বিমাতাসুলভ আচরণ এবং এর জন্য চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান মাহবুবুল আলম।
তিনি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, বে টার্মিনালকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, নয়তো দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে কনটেইনার পরিবহন বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দেন চেম্বার সভাপতি।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় এনবিআর সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, কানন কুমার রায়, মো. রেজাউল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, প্রকৌশলী আলী আহমদ, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মঈনুদ্দিন আহমদ মিন্টু, জিপিএইচ ইস্পাতের উপদেষ্টা ওসমান গণি চৌধুরী, রিহ্যাব সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী, বিকেএমইএর পরিচালক শওকত ওসমান, চট্টগ্রাম হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, বাফার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, বারভিডার সাবেক মহাসচিব মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর, চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি, কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি, রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চিটাগাং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিএমসিসিআই) আয়োজিত প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, যে সব পণ্য দেশে তৈরি সম্ভব সেগুলোর কাঁচামাল আমদানিতে সুবিধা দেওয়া হবে। তাহলে কর্মসংস্থান বাড়বে, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হবে। তবে দেশি পণ্যের সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
সভায় সিএমসিসিআই সভাপতি খলিলুর রহমান প্রস্তাব করেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিটি গেটে একটি করে স্ক্যানার মেশিন বসালে বর্তমানের চাইতেও দ্বিগুন সক্ষমতা বাড়বে। তাছাড়া ব্যবসায়িদের হয়রানি থেকে বাঁচতে এবং সুবিধার্থে এনবিআরকে একটি সুনির্দিষ্ট অডিট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তিনি অপ্রদর্শিত আয় জরিমানা ব্যতিরেকে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ রাখলে রাজস্ব আয় বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, মুদ্রানীতি হতে হবে ব্যবসা-বান্ধব। বিভিন্ন পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণে পর্যালোচনা করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি মোবাইল স্ক্যানার উদ্বোধন করেছি। বছরখানেকের মধ্যে আরও স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে। ওজনও স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে। নিলামসহ সব কাজে গতিশীলতা আনা হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দরের ২ নম্বর গেটে কাস্টম হাউসের নতুন স্ক্যানার মেশিন উদ্বোধন করেন।
এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/তোহা