শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • সুন্দরগঞ্জের বেগুনী ধানের চমক দেখালেন দুলালী বেগম

সুন্দরগঞ্জের বেগুনী ধানের চমক দেখালেন দুলালী বেগম

সুন্দরগঞ্জের বেগুনী ধানের চমক দেখালেন দুলালী বেগম

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা), ২২ এপ্রিল, এবিনিউজ : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত সুরুজ্জামানের স্ত্রী আইপিএম কৃষক ক্লাবের সদস্য কৃষাণী দুলালী বেগম বেগুনী রংয়ের বোরো ধানের চাষ করে কৃষিতে চমক সৃষ্টি করেছেন।

জানা গেছে, তিনি ২০১৭ সালে গাজীপুর জেলার তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে নতুন উদ্ভাবনী ধানের কথা শোনে সামান্য বীজ সংগ্রহ করে বোরো মৌসুমে মাত্র এক শতক জমিতে কৌতুহল বশত এই ধানের বীজ রোপন করেন। চাষের পর ধানের রঙ্গে ভিন্নতা দেখে তার কৌতুহল আরো বেড়ে যায়। উৎপাদিত বীজ থেকে চলতি বোরো মৌসুমে তিনি স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের পরামর্শক্রমে প্রতি গোছাতে একটি করে চারা দিয়ে প্রায় ২৫ শতক জমিতে ওই ধানের চারা রোপন করেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ধান গাছটি দেখতে পুরোপুরিই বেগুনী রংয়ের। পেনিকেল বা শীষটি সাধারণ উফশী ধানের মতই। প্রতিটি ধানের গোছার গোড়া থেকে গড়ে ২২-২৫টি কুশি দিয়ে ধান গাছগুলো বেড়ে উঠে। নতুন এ ‘বেগুনী’ ধানের প্রতিটি শীষে ২৩০ থেকে ২৫০টি ধান রয়েছে। কুশি ও ধানের শীষে ধানের সংখ্যা যেহেতু তুলনামূলক হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ফলন বেশি হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

কৃষাণী দুলালী বেগম জানান, এই ধানের চারা রোপনের পর তিনি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ রাশেদুল ইসলাম ও ওই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার জামিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা মোতাবেক তিনি পরিচর্যা করেন। পাশাপাশি সম্ভাব্য উৎপাদনকৃত সবটুকু ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহে রাখার জন্য ইতোমধ্যেই বীজ সংরক্ষণের পাত্র প্রদান করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম জানান, এই বেগুনী ধানকে চীনে নিষিদ্ধ ধান বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন চীনের রাজ পরিবারের মধ্যেই কেবল এ ধানের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এই ধানের ভাত খেলে দীর্ঘজীবী ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায় বলে চীনারা বিশ্বাস করত। রাজ পরিবারের বাইরে এই ধানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যের সাজা ছিল মৃত্যুদন্ড। বিভিন্ন উৎসবে সম্রাট যোদ্ধাদের সম্মানে একত্রে এ ধানের ভাত খেয়ে থাকত।

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত মাত্রার এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টের কারণে এ ধানের রং বেগুনী হয়। ব্লু-বেরির চেয়েও এই ধানে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান বেশি। এ ধান বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন-ই রয়েছে। নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তাছাড়া ডায়াবেটিস ও অ্যালজাইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর।

এটি বাংলাদেশে চাষাবাদের তেমন নজির না থাকায় এ বিষয়ে গবেষণা আমাদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন কৃষি অফিসার রাশেদুল ইসলাম। আশানুরূপ ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন- যদি আশানুরূপ হয় তাহলে পরবর্তীতে মৌসুমে এটি বিস্তৃত করা যাবে। সে লক্ষ্যে এ ধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বেগুনী ধানের চাষাবাদের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন শত-শত কৃষক ও উৎসুক জনতা এক নজর দেখতে যাচ্ছেন। অনেকেই ধান ক্ষেত দেখতে যেয়ে ক্ষেতের মাঝ খানে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলছেন।

আজ রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান ক্ষেতের ভিতরে যাতে কেহ ঢুকতে না পারে সে জন্য ক্ষেতের চারপাশে জাল দিয়ে ঘেরা দিচ্ছে দুলালী বেগম।

এবিএন/রেদওয়ানুর রহমান/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত