![ক্রিকেটারদের অবসর ভাবনা: কোচিং নাকি অন্য পেশা?](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/23/player_136524.jpg)
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, এবিনিউজ : উপমহাদেশের ক্রিকেটাররা ক্রিকেট ছাড়ার পর বিভিন্ন ধরণের পেশায় যেয়ে থাকেন। অনেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। অনেকেই যোগ দেন ক্রিকেট কোচিংয়ে।
আবার অনেকেই ক্রিকেট সংগঠকের কাজ করে থাকেন।
বিভিন্ন ক্রিকেট বোর্ডের পদে বা ক্লাব ক্রিকেটের দলেও কাজ করেন অনেক ক্রিকেটার।
বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা অবসর নিয়ে কী ভাবেন?
জালাল ইউনুস, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম এই মুখপাত্র বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলেছেন। সাবেক এই পেস বোলার বিবিসি বাংলাকে জানান, তিনি যখন ক্রিকেট খেলতেন তখন বোর্ড বা ক্রিকেটের এমন রমরমা অবস্থা ছিলনা। কিন্তু তার সবসময় ইচ্ছা ছিল যাতে ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন।
তিনি বলেন, প্রথম জীবনে যখন ক্রিকেট খেলি তখন শুধু ক্রিকেট নিয়েই ভাবতাম। কখনো পরিকল্পনা করিনি যে জাতীয় একটা ক্রিকেট সংস্থায় এভাবে থাকবো।
তবে মি. ইউনুস জানান, ক্রিকেট ছাড়ার পর ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকার পরিকল্পনাটাই ছিল।
নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি বলেন, 'প্রায় ৪০ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ক্রিকেট খেলার অংশটাই বড়। খেলার সময়টা আসলে এসব চিন্তা করা হয়না। খেলা ছাড়ার পর ক্লাবে কোচিং করিয়েছি, ক্লাব সামলেছি। এরপর আস্তে আস্তে ক্রিকেট বোর্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি।'
তার মতে, এগুলো পরিকল্পনা করে হয় না। কারণ বোর্ড শুরুতে এতো শক্তিশালী ছিলনা। ক্রিকেটের প্রসার ও প্রচার বাড়তে থাকার ফলেই এখন বোর্ডের দায়িত্ব অনেক বড়।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল সফলতা পাওয়া শুরু করে মূলত ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে।
বাংলাদেশের সেই দলটির নিয়মিত সদস্য ছিলেন সৈয়দ রাসেল।
এই বাহাতি পেস বোলার বাংলাদেশের হয়ে ৫২ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৬১টি উইকেট নেন।
উইকেট নেয়ার চেয়েও কম খরুচে বোলার হিসেবে বিশেষ পরিচিতি ছিল সৈয়দ রাসেলের। তার ইকোনমি রেট ৪.৬৩।
হঠাৎ করেই চোট পাওয়াতেই সৈয়দ রাসেলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছোট হয়ে যায়। তাই তার কাছে অবসরের ভাবনাটা ভিন্ন।
সৈয়দ রাসেল এখনো খেলা ছেড়ে দেননি। তবে জাতীয় দলের ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। খেলা ছাড়ার আগেই অনেকটা ছেড়ে দেয়াটা তাকে এখনো পোঁড়ায়।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, 'খেলা এখনো ছাড়িনি। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছি, এখনো ভাবিনি যে অবসরের পর কী করবো। যদি কোথাও কোচিং এর সম্ভাবনা থাকে তবে চেষ্টা করে দেখবো।'
রাজনীতি বা অন্য পথের চেয়ে ক্রিকেট সাথে সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছাটাই বেশি বলে জানিয়েছেন সৈয়দ রাসেল। তবে যদি পাশাপাশি টুকটাক ব্যবসা করা যায় তবে ভাল হবে।
ফ্রিল্যান্স কোচিং এখন বিশ্বব্যাপী বেশ লোভনীয় পেশা। সৈয়দ রাসেল জানান, যদি কোথাও পার্টটাইম কোচিং করানো যায় সেটায় সুবিধা। ব্যক্তিগত জীবন বা ব্যবসা চালিয়ে যেতে সুবিধা হয়।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার সময়টা বেশ খারাপ কাটে সৈয়দ রাসেলের। তিনি বলেন, 'টানা খেলছিলাম, একটানা কোনো কাজের মাঝে ছুটি পেতে মন চায়ই। ইনজুরিতে যাওয়ার পর প্রথমে খারাপ লাগেনি ছুটির মতোই কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু যখন দেখি আর খেলতে পারছিলাম না খারাপ লাগাটা।'
তার ভাষ্যে, 'টিভিতে খেলা দেখতাম, আমার সাথে যারা খেলতো তাদের খেলা দেখাটা কষ্টের। এটা বলে বোঝানো কঠিন, ওই পরিস্থিতিতে না পড়লে বলা কঠিন। তখন দলে ফিরে আসার জন্য মরিয়া ছিলাম।'
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে মোট ২০ বছর ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে ৪৪টি টেস্ট ম্যাচ ও ১২৬ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন এই ক্রিকেটার।
অবসরের আগেই তার চিন্তা ছিল যখন যেটা কাজ হিসেবে আসে সেটাই শতভাগ উপভোগ করে করা।
তিনি বলেন, 'অনেকটা সময় নদীর স্রোতের মতো, মুহুর্তকে বেশি গুরুত্ব দেয়াটাও জরুরী।'
অবসরের আগে থেকেই তিনি অবসর পরবর্তী জীবনের একটা রুপরেখা তৈরি করে ফেলেন। মি. পাইলট বলেন, 'খেলায় থাকা অবস্থাতেই খেলা সম্পৃক্ত অনেক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যেমন রাজশাহীতে একাডেমি গড়া, ক্রিকেট কোচিংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়া।'
তার মতে, একজন কোচের কাছে অবসরের আগের ও পরের জীবন দু ধরণের। একটা দেয়ার ও একটা নেয়ার। এখন সবসময় নতুন কিছু শেখাতে হয়। এই কাজটা খালেদ মাসুদ পাইলট বেশ উপভোগ করেন বলেই জানিয়েছেন।
এর আগে নিজের অবসর সম্পর্কে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, "ক্রিকেট যেহেতু খেলেছি ক্রিকেটকে দেয়ার অনেক কিছু আছে, প্রায় ১৭-১৮ বছর ক্রিকেট খেলে অনেক কিছু পেয়েছি ক্রিকেটের সাথে থাকতে পারা আনন্দের ব্যাপার, তবে ভবিষ্যতের কথা বলা কঠিন কী হবে, তবে অবশ্যই আমি চাই মানুষকে সহযোগিতা করতে"।
অবসরের পর পরিকল্পনা কি ক্রিকেট কোচিং না রাজনীতি? বিবিসি বাংলার এ প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
তবে এখনই অবশ্য অবসর নিয়ে ভাবছেন না মাশরাফি। জাতীয় দলের হয়ে এখন টেস্ট বা টি-টোয়েন্টি না খেললেও ওয়ানডেতে তিনি বেশ ভালোই ফর্মে আছেন।
উপমহাদেশের অন্য ক্রিকেটাররা অবসরের পর কী করছেন?
ভারতবর্ষের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা শচিন টেন্ডুলকার। অবসরের পর তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের দূত হিসেবে কিছুদিন ছিলেন।
তবে বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আছেন। এছাড়া ২০১২ সালে শচিন ভারতের রাজ্যসভায় যোগ দেন। তিনিই খেলা চলাকালীন প্রথম ক্রিকেটার যিনি রাজ্যসভার সদস্য হন।
পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান, ক্রিকেট পরবর্তী জীবনে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান। এছাড়া পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ সদস্য ইমরান খান।
ইমরান খানের দুই সতীর্থ ওয়াসিম আকরাম ও ইনজামাম উল হক অবশ্য ক্রিকেটের সাথেই সম্পৃক্ত থেকেছেন।
ওয়াসিম আকরাম খেলা ছাড়ার পর ক্রিকেট কোচিং-এর সাথে নিয়োজিত থাকেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর ছিলেন তিনি বেশ কিছু সময়। এছাড়া ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে।
ইনজামাম উল হক আফগানিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ ছিলেন। এখন তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক।
উপমহাদেশের আরেক ক্রিকেট তারকা সৌরভ গাঙ্গুলি। 'কলকাতার রাজপুত্র' হিসেবে সুপরিচিত সৌরভ ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের বর্তমান সভাপতি ভারতের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি