![ক্রসিং ডিভাইডস : সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ইউরোপে](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/25/bbc-eu_136772.jpg)
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, এবিনিউজ : বিবিসির ‘ক্রসিং ডিভাইডস’ শীর্ষক এক জরিপে দেখা গেছে, অনেক ইউরোপিয়ান মনে করেন তাদের দেশগুলোয় এখন যেমন বিভক্তি ১০শ বছর আগেও তেমনটা ছিল না এবং সমাজের মানুষের সহনশীলতাও অনেক কমে গেছে বলে মনে করছেন ৪৭ শতাংশ মানুষ।
অনলাইনের ‘ইপসস মরি’ জরিপে অংশ নেন ১৯ হাজার ৪২৮ জন।
জরিপের হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপের ২৭টি দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন তারা ‘জাতিগতভাবে অনেক বেশি বিভক্ত’।
বিশ্বব্যাপী যে উত্তেজনা চলছে তার মূল কারণ রাজনীতি- এমনটা মনে করেন ৪৪ শতাংশ মানুষ।
এ ছাড়া ব্রিটেনে অভিবাসী ও সেদেশের নাগরিকদের মধ্যে স্পষ্ট বিভক্তি আছে বলে মনে করেন ৫০ শতাংশ ব্রিটিশ।
জরিপে উত্তরদাতাদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ মনে করেন তাদের সমাজে বিভক্তি রয়েছে। আর এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের মতে, তাদের সমাজে ‘অনেক বেশি বিভক্তি’।
বেশিরভাগই বলছেন, তাদের দেশে এখন যে ধরনের বিভক্তি দেখা যায়, ১০ বছর আগেও এই ধরনের বিভাজন ছিল না ।
তবে মাত্র ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বর্তমানে সমাজে বিভক্তির মাত্রা কমে গেছে।
জরিপে ১১টি ইউরোপিয়ান দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, দেশগুলো হলো- বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইটালি, পোল্যান্ড, রাশিয়া, স্পেন, সুইডেন, সার্বিয়া এবং যুক্তরাজ্য।
সার্বিয়ায় সবচেয়ে বেশি বিভাজন এমন তথ্য জরিপে উঠে আসে। ৯৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলছে, তাদের সমাজে ‘খুব বেশি বিভক্তি’ বা ‘মোটামুটি বিভক্তি’ দেখা যায়।
ইপসস মরির কর্মকর্তা গ্লেন গটফির্ড বলেন, ‘‘ইউরোপের সব দেশেই একই ধরনের ট্রেন্ড দেখা যায়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অন্তত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের বক্তব্যে দেখা যায় তাদের সমোজে হয় ‘অনেক বিভক্তি’ নয়তো ‘মোটামুটি বিভক্তি’।।”
গটফির্ড বলেন, ইউরোপিয়ানরা বিশ্বাস করেন সমাজে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে তার চেয়ে বেশি সেটা বলা হয়েছে। বিশ্বে রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং যেভাবে বৈশ্বিক রাজনীতির চিত্র বদলাচ্ছে অথবা আমাদের মহাদেশের বিভিন্ন অংশে যেমনটা দেখেছি সেটার একটা প্রতিচ্ছবি হতে পারে এটি। অথবা রাজনৈতিক অবস্থার কারণে মানুষ এমনটা ভাবতে পারে। একটার সাথে আরেকটার সম্পর্ক আছে।
লাতিন আমেরিকার রেষারেষি
লাতিন আমেরিকার জরিপে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোয় যেমন- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, চিলি এবং পেরু - চার ভাগের তিন ভাগে উত্তরদাতা বড় ধরনের বিভাজন আছে বলে মনে করেন। এই বিভক্তি রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি, তবে অর্থনৈতিক প্রভাবও লক্ষণীয়।
আর্জেন্টিনায় দুশ্চিন্তার ধারণা সবচেয়ে প্রকট। ৯২ ভাগ উত্তরদাতারা মনে করেন দেশটি খুব বেশি বা মোটামুটি বিভক্ত; আর ৪০ ভাগ মানুষ মনে করেন এ বিভাজন গত ১০ বছরে আরও বেড়েছে।
৭০ ভাগের মতো আর্জেন্টিনার নাগরিক মনে করেন এ বিভাজনের মূল কারণ রাজনৈতিক মতাদর্শ।
‘এটি খুব, খুব বেশি,’ গটফির্ড বলছিলেন। ‘মালয়েশিয়া বাদে, রাজনৈতিক কারণে আর্জেন্টিনাতেই সবচেয়ে বেশি মতবিরোধ দেখা যায়’।
ইউরোপ থেকেও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক বিভাজনটা বেশি বলে গবেষণাতে উঠে এসেছে। আর অর্ধেকেরও বেশি উত্তরদাতারা মনে করেন ‘মেরুকরণের ফলে’ এ বিভাজনটা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ৬৮ ভাগ ইউরোপিয়ান মনে করেন, গত দশকে এ ধরনের বিভক্তি আরও বেড়েছে, কিন্তু লাতিন আমেরিকার কম মানুষই (৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা) এমনটি মনে করেন।
সহিষ্ণু হয়ে উঠছে বিশ্ব?
গটফির্ড বলছেন, এ জরিপে কিছু ইতিবাচক তথ্যও পাওয়া গিয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা একমত যে, মানুষের মধ্যে এখন পার্থক্য থেকে সাদৃশ্যই বেশি। খুব কম সংখ্যক মানুষ মনে করেন যে ভিন্ন ধারার, সংস্কৃতির কিংবা আদর্শের মানুষের সাথে যোগাযোগ কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে।
এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন এমন মিথস্ক্রিয়া কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করলেও তা দূর করা সম্ভব। চল্লিশভাগ উত্তরদাতার মতে, এ ধরনের যোগাযোগ পারস্পরিক সম্পর্ক এবং শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেয়।
কানাডার ৭৪ শতাংশ, চীনের ৬৫ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ার ৬৪% উত্তরদাতা মনে করেন, তাদের সমাজ ‘খুব’ বা ‘মোটামুটি’ সহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।
খবর বিবিসি বাংলা
এবিএন/সাদিক/জসিম