বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

গোপালগঞ্জে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

গোপালগঞ্জে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

গোপালগঞ্জ, ২৫ এপ্রিল, এবিনিউজ : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মুহতামিমের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পোনা আরাবিয়া শামচুল উলুম কওমিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মুহতামিম হাফেজ মো. মুছার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, হাফেজ মো. মুছা দীর্ঘ প্রায় ৪২ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি এলাকাবাসীকে পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছামত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলে প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংস হতে চলেছে। যার কারণে ওই মুহাতামিমের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ওই মাদ্রাসার ভবনসহ প্রায় ৬০ শতাংশ জমি বাংলাদেশ রেলওয়ে অধিগ্রহণ করে। যার মূল্য ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। জমি অধিগ্রহণের টাকার চেক মাদ্রাসার মুহতামিম ও পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সদস্যরা গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। পরে মাদ্রাসার মুহতামিম ও সাধারণ সম্পাদকের নামে যৌথ হিসাবে টাকাগুলো জমা রাখা হয়।

এক মাস পর মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক ইনায়েত হোসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে বৈঠক করেন এবং একটি উন্নয়ন কমিটিও গঠন করা হয়। বৈঠকে অধিগ্রহণের টাকা দিয়ে মাদ্রাসার অবশিষ্ট জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটির সদস্য মফিজুর রহমান ও বাকলেচুর রহমানকে ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা দু’জনে ঢাকা থেকে প্রস্তাবিত ভবনের ডিজাইন করে আনেন। কিন্ত মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মো. মুছা ভবন নির্মাণের বিষয় নিয়ে নানা তালবাহানা শুরু করেন। এতে মাদ্রাসার কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়।

পরে তারা মাদ্রাসার ব্যাংকের হিসাব তদারকি করে দেখতে পান ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার স্থলে ৭৭ লাখ টাকা জমা আছে। এরমধ্যে ৮০ লাখ টাকা দিয়ে মাদ্রাসার নামে কাশিয়ানী বাজারে ৫.১৯ শতাংশ জমি কিনেছেন মুহাতামিম মুছা। বাকী টাকা তিনি মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও মুহতামিম হাফেজ মো. মুছা এলাকার কিছু বিতর্কিত লোকের সাথে গোপন আতাঁত করে তাদের কমিটিতে ঢুকিয়ে বাকী টাকাগুলো আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ্য রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২০ মার্চ কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ, এস, এম মাঈন উদ্দিন অভিযোগের বিষয় শুনানীর জন্য উভয়পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রমাণাদিসহ ইউএনও অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ করেন। কিন্তু সেদিন অফিসের জরুরী কাজে ইউএনও ঢাকা চলে যান। পরবর্তীতে ১৫ এপ্রিল অভিযোগের বিষয় তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট অডিট কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সেটিও কোনো কারণে সম্পন্ন হয়নি।

মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইনায়েত হোসেন হাফেজ মুছার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মুছা হুজুর নিজেই মাদ্রাসার সব কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি নিজেই ক্যাশিয়ার। আমি কয়েকবার মিটিং করে টাকার হিসাব চাইলে তিনি তালবাহানা করেন। আমি হিসাবের অসঙ্গতি দেখে মাদ্রাসার কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।’

এ ব্যাপারে মুহতামিম হাফেজ মো. মুছার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় কিছু লোকজন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এস.এম মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম শুনানীর দিন আমি জরুরী প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে এপ্রিলের ১৫ তারিখে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু কোন পক্ষ উপস্থিত না থাকায় সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। পুনরায় শুনানীর জন্য উভয়পক্ষকে ডাকা হবে এবং সেদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।’

এবিএন/লিয়াকত হোসেন লিংকন/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত