কুমিল্লা, ২৫ এপ্রিল, এবিনিউজ: বন্দরের ১ নং ঢাকেশ্বরীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দেব মন্দিরের জায়গা দখল নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে দখলে নিচ্ছে এক শ্রেণির লোকজন। এর ফলে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জমি বেদখলে যাওয়া ও মন্দিরের ভিতের নানা অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘঠিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দরা।
উক্ত মন্দির পরিচালনা কমিটির অব্যবস্থাপনা ও তাদের অদক্ষতাকেই দায়ী করছে স্থানীয়রা। মন্দিরের অভ্যন্তরে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণসহ নানা অপকর্ম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়রা ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মন্দির পরিচালনার দাবি জানিয়েছে।
জানা গেছে, বন্দর উপজেলাধীন ১নং ঢাকেশ্বরী দেব মন্দিরটি ভাওয়ালের রাজা মধ্যম কুমার রায় কর্তৃক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে মন্দিরটি স্থাপিত হয়। মন্দিরটি দানকৃত ও মিলের শ্রমিকদের অর্থায়নে ভালোভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছিল। উক্ত মন্দিরটিতে দেশ বিদেশের ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার কারণে এর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পূজা, আর্চনা, নাম কীর্তনসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দুর দুরান্ত থেকে ভক্তবৃন্দরা উপস্থিত হয়ে উপভোগ করছে। এর ফলে মন্দিরের ঐতিহ্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু বর্তমানে মন্দিরের কর্মকান্ডে এর সুনাম নষ্ট হচ্ছে। মন্দিরের জমিতে মন্দির পরিচালনা কমিটির অনুমতি নিয়ে কিছু দিনের জন্য অস্থায়ীভাবে অসহায় ও গরীব ভূমিহীনদের থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে বিত্তশালীরা মন্দিরের জমি দখলে নিয়ে বহুতল নির্মাণ করছে। মন্দিরের জমি দখলের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে মন্দিরের জমি।
জমি দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় মন্দিরের পবিত্রা হুমকির মুখে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক দখলে নিয়ে এসব ভবন নির্মাণ করছে। মন্দির কমিটির সম্পাদক নিজেই ভবন নির্মাণ করছে। রক্ষকই যেখানে ভক্ষকের ভূমিকায় রয়েছে সেখানে সুষ্ঠু পরিচালনা আশা করা যায় না বলে একাধিক ব্যক্তি জানায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভক্তরা আরও জানায়, প্রায় ৩ একর জমির উপর নির্মিত দেব মন্দিরটি আজ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
জমি বেদখল হওয়ায় ও বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে মন্দির প্রাঙ্গন ও আশ পাশের জায়গা নোংরা, ময়লা আবর্জনায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও মাদকসেবীদের আড্ডা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও জানা যায়, মন্দির কমিটি দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রীয়তায় রয়েছে। আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব দিচ্ছে না। নিজেরাই পকেট ভারি করছে। মন্দিরের দেখভালো করার পরিবর্তে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। এরফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কমিটির উপর ক্ষুদ্ধ রয়েছে।
মন্দিরের সাধারন সম্পাদক ভোলা চৌহান জানান, দীর্ঘদিন স্বচ্ছতার সাথেই মন্দির পরিচালনা করে আসছি। আর মন্দিরের সকল নিয়ম অনুসরণ করেই শুধু মাত্র একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে মন্দিরের জমিতে ৮০টি পরিবার বাস করছে। এসব অসহায়দের জায়গা দেওয়া কোন অপরাধ নয়। কেউ সুবিধা না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে। স্থানীয় হিন্দ্র সম্প্রদায় বর্তমান পরিচালনা কমিটি বাতিল করে প্রশাসনের মাধ্যমে মন্দির পরিচালনার পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন।
এবিএন/কবির হোসেন/জসিম/তোহা