শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন জীবন বলি

ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন জীবন বলি

ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন জীবন বলি

চট্টগ্রাম, ২৫ এপ্রিল, এবিনিউজ : ঘড়িতে তখন সাড়ে ৫ টার কাটা পেরিয়ে সেকেন্ডের কাটা ঘুরছে। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘীর আশ পাশ কানায় কানায় ভর্তি উৎসুক জনতা। হাততালি, বাঁশির শিষ আর নানান শ্লোগান এবং হৈহুল্লোরে মেতে উঠে শতাব্দির সেরা ঐতিহ্যের স্বাক্ষী লালদিঘীর মাঠ।

মাঠের মধ্যখানে ৪০০ বর্গফুটের ৫ ফুট উঁচু বালুর মঞ্চে তখন ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের ১০৯তম বলীখেলার সেরা দুই প্রতিদ্বন্ধী। একমিনিট পর প্রধান রেফারি সাবেক কমিশনার মো. আবদুল মালেকের বাঁশি। শুরু হয় তুমুল লড়াই। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলে তুমুল প্রতিদ্বন্দীতাপূর্ণ এ লড়াই। শেষ পর্যন্ত রেফারির ফাইনাল বাঁশিতে প্রথমবারের মত হাসি ফুটে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার জীবনের।

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের ১০৯তম বলীখেলার (কুস্তি প্রতিযোগিতা) কুমিল্লার শাহজালাল বলিকে হারিয়ে শিরোপা অর্জন করে চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলি। অন্যদিকে ফাউল করার কারণে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা থেকে ছিটকে পড়েন কুমিল্লার শাহজালাল বলী।

এর আগে সেমিফাইনালে মহেশখালীর মোহাম্মদ হোসেনকে হারিয়ে কুমিল্লার শাহজালাল বলী, উখিয়ার জয়নাল বলীকে হারিয়ে ফাইনালে উন্নীত হন চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলী।

সন্ধ্যা ৬টার পর বিজয়ীদের হাতে ট্রফি ও নগদ টাকা তুলে দেন বলীখেলার প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

এদিকে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরবে খুশি তরিকুল ইসলাম জীবন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চাকুরিজীবি জিবন বলেন, পর পর পাঁচ বছর চেষ্টার পর এবার কুমিল্লার শাহজালাল বলিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। তাই অনেক খুশি। এসময় তার সমর্থকরা শ্লোগান ও আনন্দে এতই খুশি ছিল যে তার আর কোন কথা শোনা হয়নি।

এর আগে আজ বুধবার বিকেল ৪টায় বলীখেলার উদ্বোধন করেন সিএমপির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুল হাসান। প্রতিবারের মতো এবারও সাধারণ, চ্যালেঞ্জিং ও চ্যাম্পিয়ন- এই তিন ক্যাটাগরিতে সারাদেশ থেকে আসা ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৮৬ জন বলী ১০৯ তম আসরে অংশ নেন। খেলার শুরুতে প্রধান অতিথির শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

মেয়র তার বক্তব্যে বিশাল এবং ঐতিহ্যবাহি এ মেলাকে আগমীতে আরো বিশাল আকারে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নানা উদ্যোগের কথা জানান। তিনি এ বছর থেকে বলি তৈরীর জন্য একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠার কথা জানান। এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এছাড়াও এবারের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের রিজিওনাল ডিরেক্টর সৌমেন মিত্র বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি আগামীতেও ইতিহাস ঐতিহ্যের সকল মেলা খেলার বাংলালিংক প্রতিষ্ঠান পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

এসময় মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদলসহ আয়োজক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবারের ন্যায় এবারও খেলা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মালেক। সহকারি রেফারি হিসেবে মঞ্চে ছিলেন ইকবাল বালি, জাহাঙ্গীর ও লেদু।

এদিকে মেলা দেখতে প্রচন্ড রোদ ও গ্রীস্মের তাপদাহ উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে লালদীঘি মাটের চতুর দিকে। এছাড়াও জব্বারের বলি খেলার ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন দিদার বলি গত বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর খেলা থেকে অবসরের ঘোষনায় এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন কে হয় তার দিকে চোখ ছিল উপস্থিত সকলের।

গত বছরও ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১০৮তম আসরের কক্সবাজার, টেকনাফ, রামু চকরিয়া এবং পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শতাধিক খেলোয়াড় অংশ নেন। ১০৮তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রামুর দিদার বলী। প্রায় ১৭ মিনিট লড়াই করে শামছু বলীকে পরাজিত করে শিরোপা জিতেন তিনি। অবশ্য এর আগের বছর ১০৭তম আসরে জব্বারের বলী খেলার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে দিদার বলী ও টেকনাফের শামছু বলী কেউ কাউকে নির্ধারিত সময়ে হারাতে না পারায় সিলেকশন পদ্ধতিতে হেরে গিয়েছিলেন দিদার।

চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলায় ১৫ বার অংশ নিয়ে ১৩ বারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যন্য রেকর্ড গড়েছেন দিদার। ২০০২ সালে উখিয়ার ছিদ্দিক বলীর সঙ্গে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হন দিদার। এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৮ ও ২০০৯ সালে খাগড়াছড়ির মর্ম সিংয়ের সাথে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হন। ২০০৭ সালে মর্ম সিংকে পরাজিত করেন প্রথম এককভাবে জয়ের স্বাদ পান দিদার। মাঝে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বহিস্কার ছিলেন দিদার। ২০১৩ সালে পুনরায় অংশ নিয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা চ্যাম্পিয়ন ছিলেন দিদার। ২০১৭ সালে বিজয়ের পর তিনি অবসরের ঘোষণা দেন।

এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত