বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

ব্রিটেনে কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ঠেকানো সম্ভব কি?

ব্রিটেনে কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ঠেকানো সম্ভব কি?

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, এবিনিউজ : শারলোট তার কর্মজীবনে বেশ কয়েকবার অযাচিত যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি একজন মক্কেলের কাছ থেকে একটি টেক্সট মেসেজ পেয়েছিলেন। সেই বার্তা দেখে তার চোয়াল হিমশীতল হয়ে গিয়েছিল।

শারলোটের জীবনে একটি ঘটনা তিনি এখনো ভুলতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘একজন সিনিয়র সহকর্মীর দ্বারা আমি খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। সেই সহকর্মী বিবাহিত ছিলেন। আমরা একটি অনুষ্ঠানে মদ পান করেছিলাম। তখন তিনি আমার চুল নিয়ে তার হাতে বিয়ের আংটি ব্রাশ করছিলেন আর বলছিলেন, তুমি খুব সুন্দর।’

শারলোট বলেন, ‘তিনি অনেক সিনিয়র। সবার শ্রদ্ধাভাজন। ফলে তার আচরণ আমাকে বিস্মিত করেছিল এবং ঘটনাটি আমি রিপোর্ট করতে পারিনি’

যৌন হয়রানিবিরোধী ‘মি টু’ প্রচার অনেকে ঘটনা শারলোট নিয়মিত পড়ে থাকেন। কিন্তু তার জীবনেই আছে এমন অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি তার পুরো নাম ব্যবহার করতে রাজি হননি।

শারলোটের মতো ঘটনা প্রায় সব কোম্পানি বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেই ঘটে থাকে।ব্রিটেনে কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ঠেকানো সম্ভব কি?

‘মি টু’ ক্যাম্পেইনে এ ধরসের অনেক ঘটনা এখন প্রকাশ হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলো কর্মস্থলে যৌন হয়রানি বন্ধে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

ব্রিটেনে কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ঘটনা কোনো ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করেছে? সম্প্রতি বিবিসির এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনে কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশুনার জায়গায় অর্ধেক ব্রিটিশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এমনকি এক-পঞ্চমাংশ পুরুষও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এমন পরিস্থিতিতে, তা তদন্ত করার কথা জানিয়েছে এমপিদের একটি দল।

যৌন হয়রানির কোনো ঘটনায় মামলা হলে তার ফলাফল এবং কোম্পানি ভাবমূর্তি কোন পরিস্থিতিতে পড়বে, এসব নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কোম্পানিগুলো মালিকরা।

একটি প্রভাবশালী কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার পরামর্শক মারিজা ক্র্যামার বলেছেন, কর্পোরেট নীতিমালা এবং নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতার কারণে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে।

তবে কোম্পানির প্রভাবশালী কর্মকর্তা বা অন্য কারও দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে শারলোটের মতো কেউ যদি তা প্রকাশ না করে, তখন কোম্পানি কী করতে পারে?

পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ কতটা কাজ করে?

কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে কোন সমস্যা হলেই হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজাররা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রশিক্ষণে পাঠান। কিন্তু যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ আমেরিকায় দেয়া হচ্ছে ১৯৯০ সাল থেকে। তা ইউরোপেও ছড়িয়েছে। তার পরও এমন ঘটনা বেড়েই চলেছে।ব্রিটেনে কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ঠেকানো সম্ভব কি?

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, সহকর্মীদের একসঙ্গে কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যাতে সচেতনতা বাড়ে।

যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্তরা তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে চায় না কেন?

ক্ষতিগ্রস্তরা যখন ঘটনা নিয়ে কথা বলতে চায় না বা কাউকে জানাতে চায় না, তখন সেটি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

একজন আইনজীবী বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্তরা লজ্জায় পড়ে যান। এছাড়া যৌন হয়রানি যিনি করেছেন, তার প্রভাবের কারণে ভয় কাজ করে। সে জন্য অনেকে রিপোর্ট করেন না বা মুখ খুলতে চান না।

কর্মস্থলের পরিবেশ কী দায়ী?

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কমিটি এ বছরই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এই কমিটির প্রধান মারিয়া মিলার বলেছেন, কর্মস্থলে পরিবেশ পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে,যাতে কর্মস্থলে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত