![‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ পশ্চিমা দেশগুলোতেও’](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/26/media_136932.jpg)
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, এবিনিউজ : পশ্চিমা রাজনীতিকরা যেভাবে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে শত্রুতা সৃষ্টিতে উস্কানি দিচ্ছেন তা গণতন্ত্রের জন্য বিরাট হুমকি তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)।
গতকাল বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক আরএসএফ প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকরা সাধারণত কর্তৃত্বপরায়ন বা স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোয় যে ধরনের বৈরিতার মুখে পড়েন, সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে পশ্চিমের পরিণত গণতন্ত্রের দেশগুলোতেও।
রিপোর্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেখানে সাংবাদিকরা যে ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, তার ফলে ‘সেলফ সেন্সরশিপের’ প্রবণতা বাড়ছে।
আরএসএফ তাদের এ রিপোর্টে বলছে, সাংবাদিকদের প্রতি বৈরিতা এখন তুরস্ক বা মিশরের মতো কর্তৃত্বপরায়ন দেশেই কেবল সীমাবদ্ধ নেই। পশ্চিমা গণতন্ত্রের দেশগুলোতেও রাজনীতিকরা এখন যে ভাষায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলছেন, তাকে আগুন নিয়ে খেলার সঙ্গে তুলনা করেছে আরএসএফ ।
এ ক্ষেত্রে তারা বিশেষ করে উল্লেখ করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের কথা। আরএসএফ এর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক ড্যানিয়েল বাস্টার তাদের এ বছরের রিপোর্টের মূল প্রবণতা সম্পর্কে বলেন, ‘এ বছরের রিপোর্টে যে মূল প্রবণতাটি আমরা দেখেছি, তা হলো, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক কথা-বার্তার প্রসার। এটি এক ধরনের মৌখিক আক্রমণ, যেটি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। সেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জনগণের শত্রু বলে পর্যন্ত বর্ণনা করছেন। যেটি আসলে জোসেফ স্ট্যালিনের কথা।’
ড্যানিয়েল বাস্টার বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তে থেকে শুরু করে চেক প্রজাতন্ত্র পর্যন্ত, সর্বত্র রাজনীতিকরা অশালীন ভাষায় সাংবাদিকদের গালমন্দ করছেন। এই ব্যাপারটা শুধু মৌখিক হুমকি বা ধমকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, সেটি সত্যিকারের শারীরিক সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতে একজন সাংবাদিককে হত্যাও করা হয়েছে।
আরএসএফ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যাদেরকে কীনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একসময় আদর্শ বলে ভাবা হতো, সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ভাষায় গণমাধ্যমকে আক্রমণ করছেন, তা পুরো বিশ্ব পরিস্থিতির ওপরই প্রভাব ফেলছে। বলে জানান এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক ড্যানিয়েল বাস্টার,
যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবনতি ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুই ধাপ নেমে গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখনই তার কোন সমালোচনা করা রিপোর্ট কোথাও দেখেন, তখনই সেটা ভুয়ো খবর বলে উড়িয়ে দেন। এটা খুবই উদ্বেগজনক। তিনি বিশ্বের কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকদের জন্য খুবই খারাপ একটা নজির তৈরি করছেন।
আএরএসএফের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান যদিও অপরিবর্তিত, তারপরও সেখানে গণমাধ্যমের জন্য পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে রিপোর্টে।
বাংলাদেশে যেটা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক, তা হলো তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ব্যবহার। এই আইন ভাঙ্গার কারণে ১৪ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে সাংবাদিকদের। বলছেন ড্যানিয়েল বাস্টার।
তিনি বলেন, এটির ভয়ে গণমাধ্যমে সেলফ সেন্সরশিপের প্রবণতাও বাড়ছে।
আরএফএফের এ সূচকে সবচেয়ে উপরের দিকে আছে নরওয়ে, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ড, আর একেবারে নিচের দিকে আছে তুর্কমেনিস্থান, ইরিত্রিয়া এবং উত্তর কোরিয়া।
খবর বিবিসি বাংলার
এবিএন/সাদিক/জসিম