![স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/26/jabotjibon-abn_136959.jpg)
কালিগঞ্জ, ২৬ এপ্রিল, এবিনিউজ : স্ত্রী মাশহুদা সুলতানাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে স্বামী আব্দুল কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম জনাকীর্ন আদালতে এ রায় ঘোষনা করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম আব্দুল কুদ্দুস (৩০)। তিনি খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের মহিউদ্দিন সরদারের ছেলে।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, আব্দুল কুদ্দুস ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করাকালিন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী(২৯) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের মৃত শাহসূফী আহম্মদ মাও. মোঃ এলাহি বক্সের মেয়ে মাশহুদা সুলতানার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বেকার ছেলে হিসেবে কুদ্দুসকে অনেকেই মেনে নিতে চাননি। একপর্যায়ে কুদ্দুস চাকুরি না পাওয়া পর্যন্ত মাশহুদাকে স্বামীর সঙ্গে কাটাতে দেওয়া হবে না বলে মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে মাশহুদার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুদ্দুসের বিরোধ চলে আসছিল।
ঘটনার বিবরনে আরো জানা যায়,২০১২ সালের ২২ জুন আবদুল কুদ্দুস তার শ্বশুর বাড়ি সাতক্ষীরার খানপুর গ্রামের পীর পরিবারে বেড়াতে আসেন। পূর্বের মনোমালিন্যকে কেন্দ্র করে রাতে মশিহুদা তার মায়ের কাছে শুতে যায়। একপর্যায়ে ২২ জুন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কুদ্দুস তার স্ত্রীকে মায়ের কাছ থেকে ডেকে এনে তার ঘরে নিয়ে আসে। ২৩ জুন ভোরে মাসুদাকে ডাকতে যেয়ে মা ঘরের দরজা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। একপর্যায়ে মেয়ের চাচা মহাম্মদ আব্দুল্লাহহীল গালিবকে ডেকে এনে তালা ভেঙে মাশহুদাকে খাটের উপর রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
সকাল সাতটার দিকে কুদ্দস স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে সদর থানায় আত্মসমর্পণ করেছে মর্মে নিহতের পরিবারের স্বজনরা জানতে পারেন। ২৩ জুন রাতেই নিহতের চাচা মহাম্মদ আব্দুল্লাহহীল গালিব বাদি হয়ে আব্দুল কুদ্দুসের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিন কুদ্দুস তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায় স্বীকার করে বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে কলার মধ্যে মাশহুদাকে ঘুমের বাড়ি খাওয়ায় বলে উল্লেখ করে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান ওই বছরের ১৫ আগষ্ট এজাহারভুক্ত আসামীর নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলায় ১২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। আসামী এ মামলায় জামিন পাননি। মামলার নথি ও সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামী আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে স্ত্রী মাশহুদাকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক উপরোক্ত রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আবদুল কুদ্দুস কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হলেও বয়স বিবেচনায় তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়নি বলে বিচারক তার আদেশে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে রায় ঘোষণার পর মামলার বাদি ও নিহতের চাচা সাংবাদিকদের জানান, এ রায়ে তিনি খুশী হননি। আব্দুল কুদ্দুস একজন জঙ্গি। তার মৃত্যুদন্ড হবে এমনটিই তিনি আশা করেছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালণা করেন জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড.কার্তিক চন্দ্র দাস । আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. আবু বক্কর ছিদ্দিক।
এবিএন/মোঃ রফিকুল ইসলাম/জসিম/নির্ঝর