![বোরো ক্ষেতে নেক ব্লাস্টের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/26/paddy_abnews_137011.jpg)
তারাগঞ্জ (রংপুর), ২৬ এপ্রিল, এবিনিউজ : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমের ধান ক্ষেতে নেক ব্লাস্টের আক্রমনে দিশেহারা কৃষক। মূলত বৈশাখ মাসে বোরো ধানের শীষ বের হয়ে তা পরিপুষ্ট হয়। এরপর বৈশাখের শেষভাগ থেকে শুরু করে পুরো জৈষ্ঠ্য মাস জুরে চলে ধান কাটার পালা।
কিন্ত কৃষকের সেই স্বপ্নে আগুন দিয়েছে নেক ব্লাস্ট নামক ‘ছত্রাক’। ব্লাস্টের আক্রমণে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ ক্রমেই পুড়ে যাচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হয় মাঠের ধান পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায় তার উল্টো। ধানের পেটে চাল নেই কৃষকের মুখে ভাষা নেই! শুধুই হাহাকার।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে ফসলগুলো নেক ব্লাস্টের আক্রমণের শিকার হয়েছে। কৃষি অফিস আরো জানায়, সাধারণত বি আর ২৮ জাতের ধানে এ রোগটি বেশি আক্রমণ করেছে।
এ বিষয়ে একাধিক কৃষক ও স্থানীয় সার বীজ ডিলারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ধানের চারা রোপণের কিছুদিন পর সবুজ পাতায় কালো দাগ দেখা দেয় এবং ধানের পাতা পচে যেতে থাকে। ওই সময় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ট্রাইসাইক্লাজোল উপাদানের ট্রুপার-৭৫ ডব্লিউ পি, সেলট্রিমা জাতীয় বিভিন্ন ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়। এতে কৃষকের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে ধানের শীষ বের হওয়ার তিন-চারদিন পরই শীষগুলো মরে যাচ্ছে। ধানের পেটে কোন চাল নেই! মনে হয় ধানগুলো পেকে গেছে। কৃষি কর্মকর্তারা পুনরায় স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর (ঝাকুয়াপাড়া) গ্রামের কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন, আমার ধান ক্ষেতে তিন বার বিষ দিছি কিন্তু এই হিনজা মরা (শীষ মরা) রোগ ভালো হইলো না। শেষে সব ধান মরি গেল। রহিমাপুর গ্রামের কৃষক বাবুল বলেন, আমার এক একর জমিতে দুই একটা শীষ মরা দেখি ধানোত (ক্ষেতে) বিষ দিছি। কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই।
হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের সদ্দার পাড়া গ্রামের সুলতান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের হাজার হাজার টাকা খরচ করি সেচ দিছি। টাকাও গেল, ধানও গেল।
আলমপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম লিটন বলেন, এখন আর কোনো আশা নাই, শুধুই হতাশা। এছাড়াও পুরো উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে নেক ব্লাস্ট আক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। কৃষকের চোখের সামনেই ক্ষেতের সোনার ফসলগুলো নিমিষেই নষ্ট হচ্ছে। এ দৃশ্য একজন কৃষকের কাছে বড়ই নির্মম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সাধারণত স্প্রে করার পর নতুন করে এ রোগ আক্রমণ করার কথা নয়। তবে অনেক সময় কৃষক স্প্রের ডোজ সঠিক মাত্রায় ব্যবহার না করার কারণে হয়তো ছত্রাকটি পুরোপুরি ধ্বংস হয় না। এসওসহ অফিসারগন উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারপরও শেষ রক্ষা হবে কি না জানি না।
এবিএন/বিপ্লব হোসেন অপু/জসিম/এমসি