বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

গুজরাটে হাজার হাজার কৃষক কেন স্বেচ্ছামৃত্যু চান?

গুজরাটে হাজার হাজার কৃষক কেন স্বেচ্ছামৃত্যু চান?

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, এবিনিউজ : গুজরাটের ভাবনগর জেলার প্রায় হাজারপাঁচেক কৃষক স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থা ওই কৃষকদের প্রায় ৪০০ বিঘা চাষের জমি দখল করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, এ অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করতে চাইছেন তারা।

ঘোঘা এলাকার ১২টি গ্রামের ওই জমি প্রায় ২০ বছর আগে অধিগ্রহণ করেছিল সরকার। কিন্তু কৃষকদের বক্তব্য সেই সময়ে যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছিল, তা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম।

অধিগ্রহণের এত বছর পরে জমির দখল নেওয়াটাও বেআইনি বলে কৃষকদের দাবী।

বোডি গ্রামের বাসিন্দা, কৃষক নরেন্দ্র সিং গোহিল বিবিসিকে বলছিলেন, ১৯৯৭ সালে সরকার যখন জমি অধিগ্রহণ করেছিল, তখন মাত্র ৪০,০০০ টাকা করে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় তারা জমির দখল নেয়নি। এত বছর পরে সেই জমি ছেড়ে দিতে বলা হচ্ছে।গুজরাটে হাজার হাজার কৃষক কেন স্বেচ্ছামৃত্যু চান?

গোহিলের কথায়, জমির দাম এখন বিঘা প্রতি প্রায় ২১ লাখ টাকা। অথচ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে সরকার জমি নিয়ে নেবে, এটা কোন যুক্তি!

সরকার অবশ্য বলছে, একবার যে জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়ে গেছে, অধিগ্রহণের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ হয়েছে, তার জন্য নতুন করে ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় না।

উপ-মুখ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেল বিবিসিকে জানিয়েছেন, কৃষকদের ১৯৯৭ সালে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। একই জমির জন্য তারা যদি নতুন দাম চায়, সেটা তো দেওয়া সম্ভব না।

তার পরই কৃষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। তারা বলছেন, জমি দিতে পারেন তারা, তবে নতুন করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরকারকে।

জামখারসিয়া গ্রামের কৃষক প্রভিন সিং গোহিল বলছিলেন, জানি না কী করে আমাদের পূর্বপুরুষরা এই জমি অত সামান্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তো অন্য কোনও কাজ জানি না। এই জমি চলে গেলে আমরা খাব কি? আত্মহত্যা না করে উপায় কি?

প্রভিন সিং গোহিলের ১৫ বিঘা জমি রয়েছে। তাতে গম, মটর, জোয়ার চাষ হয়। এ ছাড়া পশুপালন করে তার পরিবার। বছরে লাখ তিনেক টাকা আয় তাদের।

‘তুলো, বাদাম, জোয়ার, বাজরা - ভুট্টা এসব চাষ করি আমরা। লাখ চারেক টাকা আয় হয়। এখন যদি সরকার জমিটা নিয়ে নেয়, তাহলে বাঁচবো কী করে?’ প্রশ্ন করছিলেন মেলখার গ্রামের বাসিন্দা যোগরাজ সিং সর্বাইয়া।

উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতেই আন্দোলনে নেমেছেন ওই গ্রামগুলোর কৃষকরা।

১২ গ্রামের ৫ হাজার ২৫৯ জন কৃষক জেলা-শাসকের দপ্তরে জমা দিয়েছেন ইচ্ছামৃত্যুর আবেদন।গুজরাটে হাজার হাজার কৃষক কেন স্বেচ্ছামৃত্যু চান?

আর আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে পুলিশী ধরপাকড় - চলেছে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস।

শপাঁচেক গ্রামবাসীকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত জারি হয়েছে ১৪৪ ধারায় নিষেধাজ্ঞা।

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী সৌরভ প্যাটেল বলছেন, গত পাঁচ বছর ধরেই ওই প্রকল্পটির জন্য কাজ হচ্ছে। সরকার প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার বেশী বিনিয়োগ করে ফেলেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য। এখন কৃষকদের নাম করে আন্দোলন শুরু করেছে কিছু রাজনৈতিক দল।

‘তবে আমাদের জমির দখল নিতেই হবে, এটা কুড়ি বছর ধরেই সরকারি জমি’- বলছেন মন্ত্রী।

খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত