জবি, ২৮ এপ্রিল, এবিনিউজ : ইতিহাস খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড.শামসুজ্জোহা এর নাম বাংলার শিক্ষিত সমাজ জানে। ১৯৬৯ এর ১৭ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব শাসনামলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে এসেছিল সার্জেন্ট জহুরুল হক এর হত্যা ও ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি ছাত্র জনতার উপর গুলি করার করার প্রতিবাদে। তৎকালনীত পুলিশ ছাত্রদের লাঠিচার্জ করে আহত করে এবং গুলি করার জন্য প্রস্তুত হয়।
ঠিক তখনি ড.শামসুজ্জোহা এসে ছাত্রদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “আহত ছাত্রদের পবিত্র রক্তের স্পর্শে আমি উজ্জীবিত। এরপর আর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি হয়, সেই গুলি কোনো ছাত্রের গায়ে লাগার আগে আমার বুকে বিঁধবে।” কিন্তু পুলিশ গুলি ছুড়ে ড. শামসুজ্জোহার রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। বাংলার ইতিহাসে এমন শিক্ষক একজনই, তার সমকক্ষ কেউ নয়।
তবে ড.শামসুজ্জোহার পরবর্তীতে তার মত মহৎ যদি কেউ হয়ে থাকে সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ। এমনটাই দাবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে জবির বাংলা বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী রনিয়া সুলতানা বলেন, 'আমি ড.শামসুজ্জোহার নাম ইতিহাসে পড়েছি কিন্তু আমার ড.শামসুজ্জোহা নাসির উদ্দিন আহমেদকে নিজে চোঁখে দেখেছি। ২০১৪ সালের হল আন্দোলনের সময় পুলিশ যখন ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অকাতরে গুলি করছিল তখন ছাত্রদের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাদের নাসির উদ্দিব আহমেদ। মোট ১৬টি গুলি লাগে স্যারের পিটে। ক্ষত বিক্ষত হয় তার শরীর। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা দেশে শিক্ষক অনেক রয়েছে কিন্তু নাসির স্যার কেবল একজনই যে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য নিজে পিটে গুলি ধারণ করে। শুধু সেই আন্দোলন নয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে দাঁড়িয়েছেন সেই শিক্ষক। তাই আমাদের কাছে নাসির উদ্দিন আহমেদ আমাদের ড.শামসুজ্জোহা। আর সেই শিক্ষকে প্রকাশনা জালিয়াতির অভিযোগে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে যা আমরা কখনওই মেনে নিব না। আমরা আমাদের স্যারকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনবই যে কোন মূল্যে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭তম সিন্ডিকেট সভায় ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদকে প্রকাশনা জালিয়াতির অভিযোগে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার পরপরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে ব্যাপক সমালোচনার ঝড়। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জবি শিক্ষার্থী ফাহিম জামান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, আমি ড.শামসুজ্জোহাকে দেখিনি কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাসির স্যারকে দেখেছি। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো আইন ২৭(৪) ধারা বাতিল, হল আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ সেই স্যারকে মিথ্যা অভিযোগে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই এবং স্যারকে ক্লাসে দেখতে চাই।
জবির অপর এক শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান শাওন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, পিতৃতুল্য, ছাত্রবন্ধু এবং আন্দোলনের প্রেরণাদায়ক নাসির স্যারের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে তার নিন্দা জানাই। অতি দ্রুত স্যারকে সম্মানেট পদে বহাল রাখার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মশিউর রহমান লিখেন, ‘প্রিয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। নাসির স্যার আপনাদের জন্য রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছেন তাঁকে না নিয়ে আপনারা কেউ ক্লাসে যাবেন না। ’
এবিএন/মোস্তাকিম ফারুকী/জসিম/এমসি