![কালিগঞ্জে জমি দখলের জেরে সংঘর্ষে আহত ৪](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/28/clash_abnews_137189.jpg)
কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা), ২৮ এপ্রিল, এবিনিউজ : আদালতের আদেশকে উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষরা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে বেড়া কেটে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়েছে। বাধা দেওয়ায় একই পরিবারের চারজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ভোরে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের স্বরাদ্বীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্বরাব্দীপুর গ্রামের মাছুরা বেগম জানান, এসএ খতিয়ান ৯৬ ও ৯৭ এর ২৪ দাগের এক একর ৪১ শতক জমি তার স্বামী আকবর গাজী, ভাসুর আবুল হোসেন গাজী ও দেবর শহীদুল ইসলাম একই এলাকার নৈমুদ্দিন মোল¬ার কাছ থেকে ১৯৬২ সালের ৪ এপ্রিল কেনেন।
একইভাবে ১৯৬৬ সালের ১৯ জুন তার স্বামী আকবর গাজী একই এলাকার বকু গাজীর ছেলে বেলায়েত গাজীর কাছ থেকে একই তপশীলের সাত শতক জমি কেনন। তার স্বামী ও তাদের দু’ ভাইয়ের সম্পত্তি ১৯৯৮ সালে চারটি ও ২০০৪ সালে একটি মোট পাঁচটি দলিল মূলে তিনি ও তার দু মেয়ে তাহমিনা ও রেক্সোনা মালিক হন। যা বর্তমান মাপজরিপে তাদের নামে রেকর্ড হওয়ার পর নামজারি করে খাজনা পরিশোধ করে আসছেন তারা। পরবর্তীতে নিঃসন্তান বেলায়েত গাজী তিন ভাইয়ের ৩৩ শতকের মধ্যে তার অংশের চার শতক জমি মনছুর গাজীর ছেলে রিপনের কাছে বিক্রি করেন।
মাছুরা বেগম আরো জানান, বিলায়েত গাজী তার অংশের জমি বিক্রির কথা অস্বীকার করে ওই জমি নতুন করে দাবি করে আসছিল। দাবি হিসেবে বেলায়েত গাজী কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে দেঃ ৭৩/১৬ নং মামলা করেন। যা আজো বিচারাধীন রয়েছে। বেলায়েত গাজী ও তার পক্ষের লোকজন জমি জবরদখলের চেষ্টা করলে তিনি বাদি হয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন ৭৪৫/১৭ মামলা করেন। খবর পেয়ে বেলায়েত গাজী একই আদালতে পিটিশন ৭৪৮/১৭ নং মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ি তাদের (মাছুরা) পক্ষে আদালত চলতি বছরের ১৫ মার্চ রায় ঘোষণা করেন। রায় বিপক্ষে যাওয়ায় বিলায়েত গাজীও তার পক্ষের লোকজন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরই অংশ হিসেবে গত ৬ এপ্রিল শুক্রবার মান্দার গাজীর ছেলে, মোহাম্মদ আলী গাজী, মনসুর গাজী, আবুল কাশেম, মনসুর গাজীর ছেলে রিপন, মিলন, লিটন, মিন্টু, ইমরান, তাদের পরিবারের মহিলা সদস্যসহ ৮/১০ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে ঘেরা ও বেড়া কেটে দিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করে।
খবর পেয়ে পুলিশ মুনসুর, রিপন, লিটন ও মিন্টুকে ধরে নিয়ে যায়। দেওয়ানী মামলার রায় তাদের পক্ষে না গেলে ওই জমিতে তারা আর যাবে না এমন মুচলেকা দিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় তারা মুক্তি পায়। পরদিন তারা(মাছুরা) আবারো পূর্বের স্থানে বেড়া নির্মান করেন। মাছুরা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার ভোরে বেলায়েত গাজী ও তাদের শরীকরা একইভাবে হাতে দা, লাঠি, কুড়াল ও বল¬ম নিয়ে ঘেরা কাটতে শুরু করে। বাঁধা দেওয়ায় তাকেসহ মেয়ে তহমিনা, জামাতা হায়াত আলী ও তাদের ছেলে স্কুল ছাত্র তরিকুলকে মারপিট করে। সশস্ত্র হামলাকারিদের ভয়ে তারা আর বেশীদূর এগোতে না পারায় কেটে ফেলা হয় দক্ষিণ পাশের সম্পূর্ণ ও পূর্ব ও পশ্চিম পাশের আংশিক বেড়া।
বিষয়টি তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জানিয়েছেন। স্থানীয় চিকিৎসকেরকাছে তারা চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান। এ ব্যাপারে বেলায়েত গাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে তার ভাইপো রিপন গাজী কাউকে মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, মাছুরা ও তাদের লোকজনদের ঘিরে রাখা জমি তারা উদ্ধার করেছেন মাত্র। তবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের রায় সম্পর্কে তিনি কোন মন্তব্য না করেই বলেন, দেওয়ানী আদালতে তারা হেরে গেলে জমি ছেড়ে দেবেন।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রাজীব হোসেন জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত এ নিয়ে তিনি কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিএন/রফিকুল ইসলাম/জসিম/এমসি