
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, এবিনিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা কিভাবে দেখতে চাই সেভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়নের জন্য আমরা পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি।
শনিবার সিডনিতে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের গৃহিত বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্যই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে সমর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আগামী ছয় বছর পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এর অবস্থানকে ধরে রাখার লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি কিভাবে দেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে এবং এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সকল ধরনের পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তিনি বাংলাদেশের এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয় সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধী, খুনি এবং দেশের উন্নয়নের প্রতি অনাস্থাশীল চক্র যাতে কোনভাবে আর কোনোদিন এ দেশের রাষ্ট্রীয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে।
দেশের মর্যাদার বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যে যেখানেই বাস করুন না কেন, আপনাদের দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করে দেশের সম্মানকে তুলে ধরতে হবে, যে সম্মান আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্যদিয়েই আমরা এই শহীদদের প্রতি যথাযথভাবে সন্মান জানাতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতো, যা ৪৭ বছর পর পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য নির্মূল করে দেশের মানুষকে সমৃদ্ধ জীবন দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ পরবর্তী শাসকরা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কারণ দেশের স্বাধীনতায় তাদের বিশ্বাস ছিল না।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করে দেশের অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় রূপ দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় থাকার স্বল্প সময়ে তিনি যে বিপুল কাজ করেছিলেন তা ভাবলে আমাদের বিম্মিত হতে হয়। তার হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশ সবক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান হলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিঘিœত করার জন্য দায়ী প্রথম ব্যক্তি, তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য একটি এলিট ও দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে বাংলাদেশ একটি ভিক্ষুকের দেশে পরিণত হয়েছিল। অন্য সকল অবৈধ ও সামরিক শাসকরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লাগামহীন দুর্নীতি বাংলাদেশকে পর পর পাঁচ বছর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করে। আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দা সংস্থা এই দুর্নীতি উদঘাটন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন এবং এটি দেশকে স্বাধীন করেছে। কিন্তু জিয়া ও তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার সকল দলিলপত্র ও প্রতীক মুছে ফেলতে হেন চেষ্টা নাই যা করেননি।
অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজনৈতিক নেতার আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দৃঢ় সমর্থন দানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। উন্নয়নশীল দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাধীনতার পর থেকেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক বজায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য সহযোগিতাসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনেও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপক অবদান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অস্ট্রেলিয়া সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অষ্ট্রেলিয়া শাখা এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বিকেলে সিডনির সোফিটেল হোটেলে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসু রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ড. মিল্টন হাসনাত, গামা আবদুল কাদির, আনিসুর রহমান রিতু, প্রদ্যুত সিং চুন্নু এবং নিরাজুল ইসলাম অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংবর্ধনা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক শেখ শামিমুল হক।
অস্ট্রেলীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
খবর বাসস
এবিএন/সাদিক/জসিম