রাজারহাট (কুড়িগ্রাম), ২৯ এপ্রিল, এবিনিউজ: কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় বোরো ধান ক্ষেতে ব্যাপক মাত্রায় নেক ব্লাস্ট নামক ছত্রাক আক্রান্ত হওয়ায় বোরো চাষীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। চলতি মওসুমে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান বিনষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অনেক চাষীরা আক্রান্ত হওয়া ধান ক্ষেত আগাম কর্তন করে গবাদী পশুর খাদ্যের জন্য খড় হিসেবে ব্যবহার করছে।
তবে রাজারহাট উপজেলা কৃষি বিভাগ দাবী করছে, অন্যান্য এলাকার চেয়ে অত্র উপজেলায় এ রোগের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মওসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১২,১৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫১৬৬০ মে. টন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী ফলন আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
এরই ফলশ্রুতিতে গত বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চারা রোপনের পর বিদ্যুত, ডিজেল, সার ও কীটনাশক সরবরাহ ভালো থাকায় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে উপজেলা জুড়ে ব্রি-২৮সহ বিভিন্ন জাতের ধান ক্ষেতগুলোতে হঠাৎ নেক ব্লাস্ট আক্রমন করে। মুহুর্তের মধ্যে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখে আক্রান্ত ধান ক্ষেতের চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
গতকাল শনিবার সরজমিনে উপজেলার সদর ইউপি’র ছাটমল্লিকবেগ (বোতলারপাড়), কানুরাম, ইটাকুড়ির দোলা, সোমনারায়ন, চাকিরপশার তালুক, শিমুলতলা, ঘুমারুভীমশীতলা, উমর পান্থাপাড়া, ছিনাইয়ের ছত্রজিৎসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, সব ধান ক্ষেত পেকে সোনালী বর্ণ ধারণ করছে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ধানের ভিতরে কোন চাল নেই। ধান চিটা হয়ে মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে। গাছগুলো তাজা থাকলেও ধানের শীষের গোড়ায় পঁচন ধরেছে।
ফসল ঘরে তোলার পূর্ব মুহূর্তে এই রোগ দেখা দেয়ায় চাষীদের চোখে-মুখে হাসির পরিবর্তে হতাশার ছাপ পড়েছে। মাঠের পর মাঠ ধানের শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত ক্ষেতে গিয়ে চাষীরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। ফসল আক্রান্ত চাষীরা রোগ প্রতিকারের জন্য কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন কীটনাশকের দোকানে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। এরপরও প্রতিকার মিলছেনা বলে একাধিক চাষীরা জানিয়েছেন। অপরদিকে হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতগুলোতেও মাঝে মাঝে পাতা শুকিয়ে যাওয়ার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
সদর ইউপি’র বোতলারপাড় এলাকার কৃষক নুর মোহাম্মদ (৫০), আমির আলী (৫৫), আনিছুর রহমান (৪৫) এ প্রতিবেদককে জানান, বেশ কয়েকবার কীটনাশক দিয়ে স্প্রে করেও কোন সুফল মেলেনি। চলতি মওসুমে ব্রি-২৮ ধানে সবচেয়ে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। কৃষক মতিয়ার রহমান (৫০) বলেন, গরুর খাদ্য হিসেবে এখন চিটাওয়ালা ধান কাটিবার নাগছি। কি আর করার আছে, ভাগ্যে নাই।
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার ষষ্টি চন্দ্র রায় জানান, ব্রি-২৮ জাতের ধান অনেক পুরাতন। এটির রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশী নেই। তাই এ জাতীয় ধানে নেক ব্লাস্ট ছত্রাক রোগটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ বছর অত্র উপজেলায় ব্রি-২৮ ধানের চাষ খুবই নগন্য, মাত্র ২৫০০ হেক্টর জমিতে এর চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার কোন ঘাটতি হবে না আশা করছি। এ রোগ দেখা দেয়ার পূর্ব থেকেই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে প্রচার-প্রচারণাসহ পরামর্শ দিয়ে আসছি।
এবিএন/রনজিৎ কুমার রায়/জসিম/তোহা