উলিপুর (কুড়িগ্রাম), ০১ মে, এবিনিউজ: কুড়িগ্রামের উলিপুরে কৃষি জমি ডোবা বানিয়ে লাইন্সেস ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই যত্রতত্রভাবে ইট ভাটা নির্মাণের কারণে কমেছে কৃষি জমি, হ্রাস পেয়েছে উৎপাদন ও পরিবেশ বিপযর্য়ে ফলফলাদি, মানুষের নান রোগ ব্যাধী সহ জনস্বাস্থ্য ও জীব বৈচিত্র মারাত্তক হুমকিতে পড়েছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাদে চলছে অবৈধ চিবনী ইট ভাটা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলার উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ১৯টি ইট ভাটা। এছাড়াও নুতুন করে উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের কালুডাঙ্গা গ্রামে মিঠিপর বাজার (ভূতের বাজার) সংলগ্ন উলিপুর থেতরাই রোডের দুই পাশের্^ কৃষি জমি নষ্ট করে অবৈধভাবে দ’ুটি ইটভাটা স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ সমস্থ ইটভাটার মধ্যে লাইন্সেস রয়েছে মাত্র ৪ টির। এক লাইন্সেসে একাধিক ভাটার মালিক হয়েছেন অনেকে।
এছাড়া চলতি বছর আবুল কালাম মন্ডল ও শহীদুল ইসলাম ভাটার লাইন্সেসের জন্য আবেদন করেছেন। বাকী ১৩টি ভাটার লাইন্সেস ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের ছাড়পত্র এমন কি অবস্থানগত ছাড়পত্র এবং বিএসটিআই এর অনুমতি ছাড়াই অবাদে চলছে ইট ভাটার কার্যক্রম। অনেকে ভাটার নির্ধারিত আয়কর বা ভ্যাট দেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহলে কি ভাবে এসব ভাটা এক যুগ বা তার অধিক বছর ধরে চলছে তাও জানে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
“নীতিমালায় রয়েছে অকৃষি, পতিত, ডোবা ও জনবসতিহীন ফাঁকা জমিতে” ইট ভাটা করার আইন ভঙ্গ করে কৃষি জমি, জনবসতিপূর্ন ও শিক্ষা প্রতিষ্টানের পাশেই এ সমস্থ ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। ভূমি অফিস কৃষি জমিকে বানাাচ্ছে ডোবা, কৃষি বিভাগ ফসলি জমিকে দেখাচ্ছে অকৃষি জমি,স্বাস্থ্য বিভাগ জনবসতিপুর্ন এলাকা হলেও প্রত্যয়ন দিচ্ছে স্বাস্থ্যহানি হবে না, চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন করছে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।
এভাবে অনৈতিক পদ্ধতিতে যত্রতত্র ইট ভাটার আদিক্ষ বাড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নির্লিপ্ততা ও নির্বিকার ভুমিকায় ভুক্তভোগী জনগন শংকিত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব ইট ভাটা। ভাটা গুলো নির্মানের সময় কর্তৃপক্ষের নিকট আপত্তির আবেদন এবং বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন করেও কোন সুফল পাচ্ছেনা।
ভাটা গুলোর অবস্থান অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, প্রতিটি ভাটায় ৮/১০ একর কৃষি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। সে অনুপাতে ১৯টি ভাটায় প্রতিবছর ২ শ‘ একর জমিতে বোরো ফসল উৎপাদন থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি ভাটার পার্শ্ববর্তী জমির উৎপাদন মারাত্তক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ৫ বছর আগে উপজেলায় বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার হেক্টর, চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার হেক্টর নেমে এসেছে।
তাতে করে দেখা যাচ্ছে ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে উৎপাদন কমেছে। ভাটার সংখ্যা যতই বাড়ছে ফসল উৎপাদন ততই কমছে। ধামশ্রেনী ইউনিয়নে মেসার্স এইচ এম ব্রিকস এলাকার কৃষক কাছু মিয়া (৫৮) জানায়, ইটভাটার নির্গত ধোয়ার কারণে পরিবেশের বিপর্যয় সহ আগের মত জমিতে ফলন হচ্ছে না। সব সময় মানুষের সর্দি কাশি জ্বর সহ নানা রোগ ব্যাধী লেগেই থাকছে। ভাটা এলাকার আশে পাশে সবজি ও ফলজ গাছে কোন ফলমুল হচ্ছে না।
এআরবি ভাটার মালিক উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জানান, ডিসির এলার ফান্ডে ১ লাখ ৩০ হাজার ও উপজেলার জাতীয় প্রোগ্রামে লাখ টাকা দিয়েছি। তার পর লাইন্সেসের জন্য আবেদন করেছি। উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম মন্ডল জানান, ২০১০ সালে চিবনী ভাটা বাতিল করা হলে ও এখানে তা চলছে। এসএব্রিকর্স এর মালিক সহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে লাইন্সেস করেছি। সেখানে অনেকে ছাড়পত্র, লাইন্সেস ও ভ্যাট না দিয়েও ভাটা পরিচালনা করছে। তাই আমিও ৩য় কিস্তির ভ্যাট দেইনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার অশোক কুমার রায় বলেন, কৃষি জমি হলেও ভূমি অফিস ডোবা দেখিয়ে খাজনার কাগজ পত্র দেন। তখন আমাদের কিছু করার থাকে না। জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন জানান, লাইন্সেস ছাড়া ইট ভাটা চলছে বিষয়টি তার জানা নেই অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দপ্তরে ভাটা সংক্রান্ত কোন কাগজ পত্র না থাকায় তাদের ব্যাপারে কিছু জানা নেই ।
উল্লেখ্য, চিলমারী উপজেলা সহ জেলার সর্বত্রই এ অবস্থা বিরাজ করছে।
এবিএন/আব্দুল মালেক/জসিম/তোহা