বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন্নার ছবি নিয়ে বিতর্ক

ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন্নার ছবি নিয়ে বিতর্ক

ঢাকা, ০২ মে, এবিনিউজ: আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির ছাত্র ইউনিয়ন ভবনের সেন্ট্রাল হলে মুহাম্মদ আলি জিন্নার একটি প্রমাণ সাইজের পোর্ট্রেট বা প্রতিকৃতি টাঙানো আছে সেই ১৯৩৮ সাল থেকে - যখন ছাত্রদের আমন্ত্রণে মি জিন্না আলিগড়ে এসেছিলেন এবং তাকে ইউনিয়নের আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু তার ৮০ বছর বাদে এসে এখন আলিগড়ের বর্তমান বিজেপি এমপি সতীশ গৌতম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তারিক মনসুরকে চিঠি লিখে এর জন্য কৈফিয়ত তলব করেছেন - এবং বলেছেন যে পাকিস্তান আজও ভারতকে বিরক্ত করে যাচ্ছে তার জন্মদাতার ছবি টাঙানোর দরকারটা কী? এমপি বিশ্ববিদ্যালয় অবিলম্বে ওই ছবি সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আর এর পরই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন বলছে ওই ছবি টাঙানো আছে অবিভক্ত ভারতের সময় থেকেই, আর তা সরিয়ে নেওয়ারও কোনও প্রশ্ন নেই।

এমপি সতিশ গৌতমের যুক্তি, একবার দেশভাগ হয়ে যাওয়ার পর ভারতে জিন্নার ছবি কেন লাগানো হবে? পাকিস্তান তার ছবি লাগাতে পারে, কিন্তু ভারত কেন জিন্নার ছবি টাঙাবে?

বিজেপি এমপি-র পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের হাতে গড়া হিন্দু যুবা বাহিনীও এই ছবি সরিয়ে নেওয়ার জন্য আলটিমেটাম দিয়েছে।

বাহিনীর নেতা আদিত্য পন্ডিত রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেছেন আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে ওই ছবি সরানো না-হলে তিনি নিজেই দলবল নিয়ে গিয়ে ওই ছবি দেওয়াল থেকে নামিয়ে দেবেন। আর এই বিতর্কের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের যতটা সম্ভব দূরে রাখারই চেষ্টা করছেন।

আলিগড়ের মুখপাত্র অধ্যাপক শাফে কিদওয়াই যুক্তি দিচ্ছেন, আমাদের স্টুডেন্টস ইউনিয়ন একটি স্বাধীন সংস্থা - ছাত্ররাই তাদের নির্বাচিত করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ইউনিয়নের কোনও সম্পর্ক নেই।

অর্থাৎ, ইউনিয়ন ছবি টাঙালে তাদের কিছু করার নেই - এমনটাই বলার চেষ্টা করেছেন তিনি। আর ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি মশকুর আহমেদ উসমানির কথা- জিন্নার ছবি যেখানে আছে সেখানেই থাকবে।

ওই ছাত্র নেতা বলছেন, "১৯৩৮র অবিভক্ত ভারতে তাকে সম্মান জানিয়ে তখনকার ছাত্র ইউনিয়ন মুহাম্মদ আলি জিন্নার ছবি লাগিয়েছিল। সে ছবি সরানো হবে না, আর কেউ যদি এখানে জাতীয়তাবাদের বিতর্ক তুলতে চায় তা বিরাট ভুল হবে।"

তবে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ক্যাবিনেট মন্ত্রী এসপি মৌর্য বলেছেন, দেশভাগের আগের স্বাধীনতা সংগ্রামে জিন্নার যে অবদান ছিল তা মোটেই অস্বীকার করা যাবে না।

দলের আর এক সিনিয়র নেতা কলরাজ মিশ্র আবার মনে করছেন, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দিয়েছিলেন যিনি, জিন্নার বদলে সেখানে সেই হিন্দু রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের ছবি টাঙানোই বেশি যুক্তিযুক্ত।

তবে জিন্নার মূল্যায়ন যেভাবেই হোক - তার ছবি সরানোর দাবিকে ইতিহাস অস্বীকার করার চেষ্টা বলেই মনে করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঋত্বিকা বিশ্বাস।

তিনি বলছেন, জিন্না এ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নষ্ট করতে চেয়েছিলেন, এই ধরনের একটা ইমেজই তার সম্পর্কে এ দেশে তৈরি করা হয়েছে। ছবি টাঙানো নিয়ে বিতর্কটা এখান থেকেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, আমাদের স্কুলপাঠ্য ইতিহাস বইয়েও তো জিন্নার ছবি থাকে, তার বেলা?

আজ যদি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ছবি থাকে, সেটা তিনি একটা সময়ের ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বলেই। আজ সে ছবি সরানো মানে তো সেই ইতিহাসটাই পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা। বিজেপি এ কাজ প্রায়ই করে থাকে - হয়তো কখনও মুসলিম লীগও করেছে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু এগুলো কোনওটাই সমর্থনযোগ্য নয়, বলছিলেন অধ্যাপক বিশ্বাস।

বেশ কয়েক বছর আগে প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডভানি পাকিস্তানে গিয়ে জিন্নার ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন, সে জন্য তাকে দলের ভেতরেই প্রবল সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এবিএন/মমিন/জসিম

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত