শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
অপহৃত তিন বাঙালি ব্যবসায়ীকে দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে

খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

খাগড়াছড়ি, ০৪ মে, এবিনিউজ: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার অভিলম্বে অপহৃত ও নিখোজ তিন বাঙালি যুবককে উদ্ধারসহ সকল অপহরণের বিষয়ে দ্রুততম সময়ে প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকা প্রত্যাশা করে পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মো: মাঈন উদ্দীন বলেন, মাটিরাঙ্গার তিন বাঙ্গালী যুবক অপহরণের ১৮দিন অতিবাহিত হলেও তাদের উদ্ধারে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। ৫ই মে তারিখের মধ্যে উদ্ধার করা না হলে আগামী ৬ই মে(রোববার) থেকে লাগাতার হরতাল পালনেরও ঘোষণা দেন তিনি।

মাটিরাঙা উপজেলা সদরের সম্মূখে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় মানববন্ধন পালন করেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, মাটিরাঙা উপজেলা শাখা। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি হতে অপহৃত তিন বাঙালি যুবককে দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে বৃহস্পতিবার(৩রা এপ্রিল) মাটিরাঙা উপজেলা সদরে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব বলেন। পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুম রানা ও পার্বত্য অধিকার ফোরামের মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক এসএম হেলাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক মো: মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন।

মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, ১৬ই এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলার বাসিন্দা তিন বাঙালি কাঠ ব্যবসায়ী মো: সালাউদ্দীন, মো: বাহার মিয়া(ড্রাইভার) ও মো: মহরম আলী কাঠ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়িতে গেলে সেখান থেকে তাদের অপহরন করা হয়। অপহরনের ১৮তম দিন অতিবাহিত হলেও প্রশাসন তাদের উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে, প্রশাসন তাদের উদ্ধারে কোন খবর না দিয়ে উল্টো তাদের অপহরণের বিষয়ে বিষদাগার করছেন। প্রশাসনের এই বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই আপনারা তাদের উদ্ধার করে জনগণের নিকট প্রকৃত অবস্থা জানান যে তারা কি অপহৃত হয়েছে নাকি আত্বগোপন করেছেন। তিনি আরো বলেন গত ৪ঠা মার্চ উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক রামগড় হতে অধহৃত হয় চাইথুই মারমা এবং ০৬ই মার্চ মানিকছড়ি হতে অপহৃত তিন মোবাইল কোম্পানীর টেকনিক্যাল অপারেটর। উপরোক্ত অপহৃতদের উদ্ধারে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তাই প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য তারা বিভিন্ন রকম বিষদাগার করছেন। যে বা যাহারা ই অপহরণ করুক বা হউক তাদের উদ্ধার তথা সাধারণ মানুষের জান মান রক্ষার জন্য প্রশাসন রয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ।

অন্যান্য বক্তারা বলেন অবিলম্বে অপহৃত তিন বাঙালি ব্যবসায়ীকে উদ্ধারসহ সকল অপহরণের বিষয়ে দ্রুততম সময়ে প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। অন্যথায় প্রশাসন নির্যাতিত ক্ষিপ্ত সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে যে আন্দোলন সৃষ্টি হচ্ছে তা বন্ধ করতে পারবেনা। যে কোন সময়-ই এই সকল সাধারণ মানুষের গন জোয়ার গনরোষের সৃষ্টি করবে। এর সম্পূর্ন দ্বায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় আহবায়ক ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মো: মাঈন উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য অধিকার ফোরামের উপজেলা আহবায়ক মো: এসএম হেলাল। কেন্দ্রীয় যুগ্ন আহবায়ক ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক(খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর) এসএম মাসুম রানা। আরো উপস্থিত ছিলেন-জেলা যুগ্ন সম্পাদক মো: জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, জেলা সহ-সাম্পাদক মো: রবিউল হোসেন, জেলা সাংগঠনিক মো: পারভেজ আলম, খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার আহবায়ক মো: ইব্রাহিম খলিল, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ’র সভাপতি মো: সোহেল রানা, মাটিরাঙা উপজেলা সদস্য-সচিব মো: আরিফুর রহমান স্বজলসহ জেলা ও উপজেলা এবং ইউনিয়ন শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভাপতিত্ব করেন-বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের মাটিরাঙা উপজেলা আহবায়ক মনজুর আলম মঞ্জু।

এর আগে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে কাঠ ক্রয় করতে গিয়ে নিখোঁজ তিন বাঙ্গালী যুবকদের উদ্ধারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে পার্বত্য বাঙ্গালি ছাত্রপরিষদ। বৃহস্পতিবার ১৯ই এপ্রিল বেলা ১২টায় জেলা শহরের চেঙ্গিস্কোয়ারে এ মানববন্ধন করে তারা। নিখোঁজ যুবকদের উদ্ধারে প্রশাসনকে ৪৮ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয় মানববন্ধন থেকে।

তার পর মহালছড়ির মাইসছড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন যুবকের সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবারের সদস্যরা। গত শুক্রবার(২০এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টায় খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ যুবক বাহার মিয়ার স্ত্রী তহুরা বেগম, পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি শাখার সভাপতি লোকমান হোসাইন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ তিন যুবকের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। মাটিরাঙার ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী ও গাড়ী চালক তিন যুবককে অক্ষতাবস্থায় উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করেন। রোববারের মধ্যে নিখোঁজ তিন যুবকের সন্ধান দিতে প্রশাসন ব্যর্থ হলে সোমবার খাগড়াছড়ি জেলা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ।

আগামী ০৫ই মে-২০১৮ ইং এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে আগামী ৬ই মে হতে লাগাতার হরতাল পালন করবে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ।

উল্লেখ্য গত ১৬ই এপ্রিল জেলার মাটিরাঙা উপজেলার বাসিন্দা তিন বাঙালি কাঠ ব্যবসায়ী মো: সালাউদ্দীন, মো: বাহার মিয়া(ড্রাইভার) ও মো: মহরম আলী কাঠ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে জেলার মহালছড়ির মাইসছড়িতে গেলে সেখান থেকে তাদের নিখোজ করে অপহরন করা অভিযোগ উঠে।

বক্তরা আরো বলেন, পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় অনিবন্ধীত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলো নিজেদের মধ্যে খুন, গুম, অপহরণ, অগ্নি সংযোগ করাসহ তাদের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানীতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে খাগড়াছড়ি জেলায়। নিরাপত্তাহীনতায় এলাকার সাধারণ মানুষ।

শুক্রবার(২০ এপ্রিল) দুপুরে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত করা হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নেতা নজরুল ইসলাম মাসুদ, রবিউল হোসেন, বেলাল হোসেন, অপহৃত বাহারের স্ত্রী(জোহরা আক্তার) সাংবাধিকদের বলেছেন “তার স্বামীকে পাহাড়ী উপজাতি সন্ত্রাসীরা গত ৪দিন ধরে নিখোজ রয়েছে। পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। জাতির বিবেক লেখনীর মাধ্যমে আমার স্বামীর উদ্ধার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়েছে”। আগামী ২২শে এপ্রিলের মধ্যে তিন বাঙ্গালী উদ্ধার না হলে ২৩এপ্রিল সোমবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যায় হরতাল ডাক দেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলায় প্রতিটি জেলায় রোববার বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সাংবাধিকদের জানানো হয়েছে।

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইডেট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টে(ইউপিডিএফ) ‘প্রসিত খীসা’, (ইউপিডিএফ গনতন্ত্র) ‘তপন বর্মা সমর্থীত’ এবং জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ‘সন্তু লারমা’ ও ‘জেএসএস’ সংস্কার (এমএন লারমা সমর্থীত)। এই চার গ্রুপের মধ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটছে একের পর এক খুন, গুম এবং অগ্নি সংযোগের মত নৃশংস এসব ঘটনা। বাড়ছে অপহরণ।

গত রোববার ১৫ই এপ্রিল রাত ৮টায় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় তপন চাকমা(৪০) ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সীমান্ত লাগায়ো রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির আট কিলোমিটার এলাকায় বিজয় চাকমা(৩০) নামে দু’জন নিহত হওয়ার খবর শোনা যায়। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কোনো লাশ খুঁজে পায়নি বলে জানান, দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: শামসুদ্দিন ভূইঁয়া। অপরদিকে বাঘাইছড়ি থানার ওসি আমির হোসেন জানিয়েছেন, জেলার ‘মারিশ্যা দীঘিনালা সড়কের আট কিলোমিটার এলাকায় একজন নিহতের খবর শোনে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু সেখানে কোনো লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

সোমবার ১৬ই এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলায় পানছড়ি উপজেলাতে বাবু চাকমা নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে পানছড়ি কলেজের সামনে থেকে অপহরণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ছুরিকাঘাতে আহত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি তপন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা এক বিবৃতিতে বলেন, দুপুর ১টার দিকে খাগড়াছড়ির, পানছড়ি কলেজে পরীক্ষার হলে ঢুকে ‘জেএসএস’ সংস্কারপন্থীরা পিসিপি কলেজ শাখার সদস্য ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী বাবু চাকমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে। পরে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দুই অংশের বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। আহত বাবু চাকমাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’ এখনও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এর পর ১৬ই এপ্রিল বিকেলে জেলা সদরের আপার পেরাছড়া এলাকায় সূর্য্য বিকাশ চাকমা(৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেই খাগড়াছড়ির শহরের সুইচ গেইট এলাকার মৃত ফনি ভূষণ চাকমার ছেলে। নিহত সূর্য্য বিকাশ চাকমা গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা সদরের কমলছড়ি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিল। নিহতের স্ত্রী রিপনা চাকমা জানান, ‘দুপুর ২টার দিকে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি দয়াল কুমার চাকমার বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। দয়াল চাকমার স্ত্রী নিপু দেওয়ান বলেন, ‘দুপুরে সবাই মিলে একসাথে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ দুটি বিকট শব্দ শুনা পাই। প্রথমে ভেবেছি বাজী ফুটছে। পরে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি উঠানে রক্তাক্ত অবস্থায় সূর্য্য মাটিতে পড়ে আছে। আমরা কেউ ভয়ে কাছে যায়নি, পরে বিকেলে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার(এসপি) আলী আহম্মেদ খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাউদ্দিন। পুলিশ সুপার আলী আহম্মেদ খান জানান, কে বা কারা এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত তা এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে(ইউপিডিএফ) ‘প্রসীত খীসা সমর্থীত’ খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক সচিব চাকমা এক বিবৃতিতে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাহানিমুক্ত শান্ত পরিবেশ বজায় থাকুক, তা রাষ্ট্রের একটি ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী চায় না। জনগণের আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার হীন উদ্দেশ্যে এদের লেলিয়ে দিয়ে একটি গোষ্ঠীটি পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার নতুন করে খুনখারাবিতে মেতে ওঠেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সংস্কারপন্থী বলে চিহ্নিত (জেএসএস) এর ৩ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী, সমাজ কর্মী সূর্য্য বিকাশ চাকমাকে দয়াল চাকমার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ির উঠোনে গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

একইদিন সোমবার ১৬ই এপ্রিল জেলার মহালছড়ি উপজেলাতে কাঠ ক্রয় করতে গিয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছে মো: সালাহ উদ্দিন(২৮), মো: মহরম আলী(২৭) ও মো: বাহার মিয়া ড্রাইভার(৩০) নামে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তিন বাঙ্গালী যুবক। এই তিন যুবক কাঠ ক্রয় করতে মহালছড়ির মাইসছড়ি যাওয়ার পথে অজ্ঞাত সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে পৃথকভাবে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি ও সমঅধিকার আন্দোলন।

অপরদিকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির এক বিবৃতি দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে। এখনো তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অপহৃতদের জীবননাশের শঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত তিন বাঙ্গালী যুবকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া। তাদের উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে, পাহাড়ে এহেন কর্মকান্ড, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায় বন্ধ করাসহ সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আহ্বান জানান তিনি। এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো: মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক বিবৃতিতে বলেন, সা¤প্রতিককালে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক গুম, খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজী বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ড বন্ধ না হলে সকলকে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসুচীর ডাক দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও নিখোঁজ তিন বাঙ্গালী যুবককে অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে মাটিরাঙ্গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ।

মঙ্গলবার ১৭ই এপ্রিল দুপুরে(জেএসএস) ‘সন্তু লারমা সমর্থীত’ যুব সমিতির পানছড়ি শাখা অফিস আগুনদিয়ে পুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এঘটনার জন্য প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফকে দায় করেছে জেএসএস।

বুধবার ১৮ই এপ্রিল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে পাহাড়ে জ্বালানি কাঠ আনতে গেলে মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে মাটিরাঙ্গা উপজেলার দুর্গম ভাঙামুড়া এলাকা থেকে নতুন কুমার ত্রিপুরা(৩৫) নামে ঐ ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নতুন কুমার ত্রিপুরা একসময় আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। হয়তো সে কারণে প্রতিপক্ষরা তাঁকে হত্যা করে থাকতে পারে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: জাকির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহত ব্যক্তি মাটিরাঙ্গার গোমতি ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ণ কুমার ত্রিপুরার ছেলে। তিনি গত ১৫ই এপ্রিল রোববার থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে জানা গেছে। কে বা কারা কি কারনে তাকে খুন করেছে রহস্য জানার চেষ্টা করছি। তবে ইউপিডিএফ’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এমএন লারমা গ্রুপ কেন্দ্রীয় কমিটির(পিসিজেএসএস-সংস্কার) সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য এডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত ৩রা মে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এসময় চেয়ারম্যানের সাথে থাকা পিসিজেএসএস-সংস্কারের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রূপম চাকমাও গুলিবিদ্ধ হয়। তবে তিনি অক্ষত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহম্মদ খান জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ির জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো আছে কোন সমস্যা নেই। আর বাঙ্গালি তিন কাঠ ব্যবসায়ী অপহরণের বিষয়ে বলেন, তাদেরকে কেউ জোরকরে অপহরণ করে নিয়ে যায়নি তারা স্বেচ্ছায় ব্যবসার কাজে সেখানে গেছেন। আমরা খোজখবর নিচ্ছি যতো তারাতারি সম্ভব তাদের উদ্ধার করা হবে। পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগীতায় দোষীদের গ্রেফতারে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সা¤প্রতিক এসব ঘটনা নিয়ে, খাগড়াছড়িতে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক ও পরিবেশ অশান্ত করার পায়তারা চালাচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল। বিগত কিছুদিন ধরে আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে ভুয়া পোষ্ট দিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীর পোষ্টে অসমর্থিত সূত্রে গোলাগুলি, মৃত্যু, অপহরণ, হরতাল-অবরোধসহ পাহাড়ী বাঙালীদের মাঝে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালানোর দৃশ্য ভেসে আসছে। এসব পোষ্টের বেশীর ভাগই ভুয়া ও বিভ্রান্তিমূলক বলে প্রমাণিত হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করতে কিছু দুষ্টু লোক এমন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

সচেতন নাগরিকদের অভিমত তাদের প্রতিহত করা না গেলে পাহাড়ে বড় ধরণের সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। আবারও অশান্ত হয়ে উঠতে পারে পার্বত্য অঞ্চলে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ই এপ্রিল মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি এলাকায় কাঠ কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হন মাটিরাঙা উপজেলার তিন যুবক। নিখোঁজের ২০দিন অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান মেলেনি।

এবিএন/ চাইথোয়াই মারমা /জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত