বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • চিরিরবন্দরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়েছে কৃষকের ধান

চিরিরবন্দরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়েছে কৃষকের ধান

চিরিরবন্দরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়েছে কৃষকের ধান

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর), ০৪ মে, এবিনিউজ: ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে অন্তত ১০০ বিঘা জমির ইরি-বোরো ধানসহ ভুট্টাক্ষেত। এতে এমএসবি নামক ইটভাটা এলাকার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনাটি চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামে ঘটেছে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ১ হাজার ৬৮৪ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে ভাটা সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের কৃষকেরা সফলভাবে বোরোধান চাষ করেন। তাদের চোখে-মুখে স্বপ্ন ছিল বাম্পার ফলনের। ধানের যথারীতি শীষও বের হয়। ক্ষেতের ধান দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু বিষফোঁড় হয়ে দাঁড়ায় ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধান পুড়ে কৃষকের সেই স্বপ্ন ম্লান হয়ে গেছে।

ধোঁয়ার নিশানা যতদূরে গেছে ততদূর পর্যন্ত বোরোধান পুড়ে গেছে। এতে অন্তত ১০০ বিঘা জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধান পুড়ে কৃষকের চোখে-মুখে অন্ধকার নেমে এসেছে। অধিকাংশ জমি থেকে একমুঠো ধানও ঘরে আসবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ধানক্ষেত নিয়ে আক্ষেপ করছেন কৃষকেরা।

গত ২৯ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যায় এমএসবি ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশ এলাকা ছেঁয়ে যায়। কৃষকেরা প্রথমদিকে বুঝতে পারেননি যে, এ নির্গত ধোঁয়ার কারণেই তাদের ফসলের এতো বড় ক্ষতি হবে। গত ক’দিন ধরে কৃষকরা ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় ক্ষেতের ক্ষতি বুঝতে পারেন। এ ইটভাটার আশপাশের ধানক্ষেত আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, প্রতিবিঘা জমিচাষ করতে ১০/১২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। প্রতিবিঘা জমি হতে গড়ে ৩০/৪০ মণ বোরো ধান উৎপাদন হয়। কিন্তু আবাদি জমিতে গড়ে ওঠা এমএসবি নামের ইটভাটার কারণে একমুঠো ধান ঘরে তুলতে পারবেন না কৃষকেরা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রবিউল ইসলাম তালুকদার জানান, ‘তাঁর ১০বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান ছিল। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তাঁর সব ধানগাছ শুকিয়ে মরে যেতে বসেছে।’ কৃষাণী জোসনা রানী রায় বলেন, ওই ইটভাটার ধোঁয়ায় আমার ৩ বিঘা জমির ধান সম্পূর্ণরুপে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আমি এসব জমি চুক্তি নিয়ে আবাদ করি। প্রতিবিঘা জমির চুক্তি বাবদ মালিককে ১০হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। তারপরেও অন্যান্য খরচ রয়েছে। এখন আমি কি যে করি ভেবে পাচ্ছি না।

সুনিত চন্দ্র রায় বলেন, ‘জমি চাষাবাদ করেই আমাদের সংসার চলে। ধান বিক্রি করেই দায়দেনা পরিশোধ করি। কিন্তু ইটভাটার ধোঁয়ায় আমার ৩ বিঘা জমির ধান ক্ষতির শিকার হয়েছে। এ ধান ঘরে তুলতে পারব না।’

ইউপি সদস্য মোখলেসুর রহমান জানান, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আমার ১ বিঘা জমির উঠতি বোরোধান নষ্ট হয়েছে।’ চাষাবাদকৃত ফসলের এমন ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা আরো জানান, ওই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ২০১৫ সালেও এলাকার ধানসহ আম, আমড়া, কাঁঠাল, ভুট্টাক্ষেত নষ্ট হয়েছিল। তারা পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ দাবি করে ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান।

নশরতপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. শামিম আহমেদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের প্রকৃত জমির পরিমাণ জানাতে পারেননি। এমএসবি ব্রিকসের সত্ত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ভাটার ধোঁয়ার কারণে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। আমি আমার লোক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করছি। আমি তাদের ক্ষতিপুরণ দিয়ে দেব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ধান-ভুট্টা ক্ষেতের মালিকদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। তিনি ঘটনা তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছেন। তবে প্রকৃত ক্ষতি নিরুপন করা যায়নি। তবে ইটভাটার কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভাটাবন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা যাতে ক্ষতিপুরণ পায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এবিএন/রফিকুল ইসলাম/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত