![চট্টগ্রামে ভাইসহ ধরা পড়েছে ইয়াবা গডফাদার](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/05/04/abnews-24.bbbbbbbbb_138032.jpg)
চট্টগ্রাম, ০৪ মে, এবিনিউজ: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে আশরাফ আলী এখন চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানা শ্যামলী আবাসিক এলাকার ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ি। বান্দরবান থেকে শহরে এসে অল্প সময়ের মধ্যেই তার অর্জন কোটিপতি বাবু। থাকছে বিলাসবহুল আলিশান ফ্ল্যাটে। মসজিদ ও মাদ্রাসায় দান খয়রাত করে এলাকাবাসীর কাছেও সে হয়ে গেছে ধার্মিক ও দানবীর। প্রতিমাসে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্যুরে যাওয়া তার নেশা।
তবে কে এই আশরাফ? কি তার পেশা? যদি ব্যবসায়িও হয় তবে কি এমন ব্যবসা করে যে অল্প সময়ে নিজেকে বানিয়েছে কোটিপতি ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ি? এসব ছিলো এতদিন এলাকাবাসীর প্রশ্ন? এলাকাবাসীর সব প্রশ্ন ও নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের অনুসন্ধানেই জানা যায় আশরাফ মূলত একজন ইয়াবা গডফাদার।
খুলে গেছে ফেরেস্থার আড়ালে এক শয়তানের মুখোশ। শুক্রবার ভোরে ধার্মিক ও দানবীর হিসেবে পরিচিত আশরাফের বাসায় অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামে ইয়াবার বৃহৎ চালানটি উদ্ধার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় আশরাফ ও তার সহোদর ভাই মো. হাসানকে। আশরাফ ও হাসান বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে। গোয়েন্দা পুলিশের এ অভিযানে সকল প্রশ্নের উত্তর পাই এলাকাবাসী।
শুক্রবার ভোরে আশরাফ ও হাসানের বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। একইদিন দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) মইনুল ইসলাম জানান, সিএমপির আটক করা ইয়াবার চালানের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় চালান। তিনি জানান আশরাফের ঘর থেকে ৪ লাখ এবং গ্যারেজে রাখা প্রাইভেট কার থেকে বাকি ৯ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। যার আনুমানিক বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
আশরাফ আলী (৪৭) দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ‘ইয়াবা গডফাদার’ বলে জানিয়ে মইনুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে নদীপথে কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিতে পানির নিচ দিয়েই কৌশলে ইয়াবার চালান আনত আশরাফ। সর্বশেষ ১৩ লাখ ইয়াবার চালানটি আশরাফ মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে নৌপথে চট্টগ্রামে আনে। গোপন সংবাদে খবর পেয়ে ইয়াবার এই বৃহৎ চালানটি উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, আশরাফের শয়নকক্ষে ইয়াবার যে কার্টনগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো ছিল পানিতে ভেজা।
এ বিষয়ে গ্রেফতারের পর আশরাফ পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ইয়াবার ছোট ছোট প্যাকেটগুলো প্রথমে কার্টনে ভরা হয়। তারপর ৭-৮ স্থরের বায়ুনিরোধক রেপিং দিয়ে মোড়ানো হয়। প্রতিটি কার্টনকে প্রায় ৪০টির মতো পলিথিনে মুড়িয়ে সেগুলো রশিতে বেঁধে ট্রলার থেকে ফেলা হয় পানিতে। পরে ইয়াবাভর্তি সেই কার্টনগুলো ট্রলার দিয়ে রশি ধরে পানির নিচ দিয়ে টেনে নির্দ্দিষ্ট গন্তব্যে খালাস করা হয়।
ইয়াবা উদ্ধারে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান টিমের অন্যতম সদস্য পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বলেন, তাদের কাছে সোর্সের তথ্য ছিল, চট্টগ্রামে বৃহৎ একটি ইয়াবার চালান আনতে এক সপ্তাহ আগে আশরাফ মিয়ানমারের ইয়াংগুনে গেছে। এ খবরে গত কয়েকদিন ধরে আশরাফের গতিবিধি লক্ষ্য করতে সোর্স নিয়োগ করা হয়।
সোর্সের খবর অনুযায়ী বুধবার কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ হয়ে একটি ট্রলারে ইয়াবাগুলো নিয়ে আশরাফ রওনা দেয়। পথে সে কৌশল অবলম্বন করে ট্রলার থেকে চালানটি স্পিডবোটে নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে কুতুবদিয়া চ্যানেলে এসে পুনরায় একটি মাছ ধরার নৌকা ভাড়া করে সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারিতে আসে। ইয়াবাগুলো খালাস হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। এরপর প্রাইভেট কারে ইয়াবাগুলো নিয়ে আশরাফ নিজেই চলে আসে বাসায়। সোর্সের সর্বশেষ তথ্যমতে শুক্রবার ভোরেই অভিযান চালিয়ে আশরাফের বাসা থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আশরাফ যখন বান্দরবানে থাকতো কথন থেকেই সে টেকনাফ ও মিয়ানমার থেকে ছোট ছোট ইয়াবার চালান আনত। পুলিশের হাতে একবার ধরা খাওয়ার পর সে জেলে যায়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পাঁচ বছর আগে সে পারি জমায় চট্টগ্রাম নগরীতে। রুট ও কৌশল বদলে শুরু করে পুরনো ব্যবসা। হাজার হাজার থেকে লাখ লাখ ইয়াবার চালান আনা শুরু করে আশরাফ। আর অল্পদিনেই হয়ে উঠে কোটি পতি বাবু।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় গ্রেফতার ইয়াবা গর্ডপাদার আশরাফ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তথ্য বের করে অভিযানে নামবে গোয়েন্দা টিম।
এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/তোহা