![ডোমারে ৪ বছর পর ধর্মান্তরিত হোসনে আরা’র দাফন সম্পন্ন](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/05/04/abnews-24.bbbbbbbbbbbbbbbbb_138043.jpg)
নীলফামারী, ০৪ মে, এবিনিউজ: সত্যিকারে প্রেম শুধু কাছেই টানেনা দুরেও ঠেলে দেয়। এই চিরন্তন বানীটিকে মিথ্যা প্রমাণ করে প্রেমিক যুগল উভয় উভয়কে কাছে টেনে নিলেন। তবে প্রেমের সে টান,জীবনে নয় মরনে। কবরে পাশাপাশি ঠাই নিয়ে এই প্রেমিক লাজু ও প্রেমিকা লিপারাণী আবারো প্রমান করলেন, প্রেম কোন ধর্ম মানে না, মানে না কোন জাত বিচার । তাদের প্রেমের এই কাহিনী নানা নাটকীয়তা ও দুটি ধর্মের মধ্যে আইনী লড়াইয়ে একটি ধর্মের জয় হলেও সাধারণ মানুষ বলছে এখানে ধমের্র নয় প্রেমের জয় হয়েছে। কারণ তারা মৃত্যুকে বরণ করেছে তবু ও কেউ কাউকে ছাড়তে রাজি হয়নি।
আইনী জটিলতায় চার বছরের বেশি সময় হাসপাতালের হিমঘড়ে থাকা ধর্মান্তরিত হোসনে আরা(নীপা রানী) লাশ শুক্রবার ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী দাফন করা হয়েছে। নীলফামারীর ডোমারে দীর্ঘ ৪ বছর পর লিপা রানীর মৃতদেহ উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইসলামী শরিয়াহ মোতবেক দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩ ঘটিকায় উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড কাজীপাড়া কবরস্থানে জানাযার নামাজ শেষে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। জানাযার নামাজ পরান ইমাম মোঃ রবিউল ইসলাম। ১২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ ধর্মান্তরিত নিপার মৃতদেহ মুসলীম শরীয়ত মোতাবেক দাফনের নির্দেশ দেন। নীলফামারী জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছে আদালত।বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশের কপি জেলা প্রশাসকের হাতে পৌছে।
এর আগে ৪ মে শুক্রবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘড় থেকে পুলিশি পাহাড়ায় দুপুরে লিপা রাণীর মৃতদেহ উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের র্প্বূ-বোড়াগাড়ী কাজীপাড়া ড়্রামে তার শশুর সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের বাড়ীতে আনা হয়।এসময় সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোছাঃ উম্মে ফাতিমা, থানা অফিসার ইনচার্জ মোকছেদ আলী,ওসি(তদন্ত) ইব্রাহীম খলিল সহ সঙ্গীয় ফোর্স উপস্থিত থেকে লাশ তার স্বামী হুমায়ুন কবির লাজুর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
এর আগে লিপারাণীর মৃতদেহ সেখানে পৌছলে তার মৃতদেহ এক নজর দেখার জন্য হাজারো উৎসুক জনতা ভীর জমায়। বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ডোমার থেকে রুবেল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি প্রায় দশ কিলোমিটার দুর থেকে তার মৃতদেহ দেখতে এসেছে। রুবেল জানান ৪ বছর পর লাশটি কি ভাবে আছে এটিই দেখার জন্য এখানে আসা। তবে কেউ লাশ দেখতে না পেরে হতাশ মন নিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন। তবে লাশ দাফনের পুর্বে হোসনে আরার পরিবারকে লাশ দেখানোর কথা থাকলেও তারা না আসায় লাশ দেখানো যায়নি।
উল্লেখ্য গত ১২ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার হাইকোটের বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ইসলামি শরীয়াহ রিতি অনুযায়ী হোসনে আরা বেগম (লিপা)র মৃতদেহ দাফনের আদেশ দেন।
মামলার বিবরণে যানাযায়, নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে লিপা রাণী রায়ের সাথে পার্শ্ববর্তী বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবির লাজুর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর তারা দুজন নীলফামারী নোটারী পাবলিকে এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে ২লক্ষ ১ হাজার ৫শত ১টাকা দেন মোহরে বিয়ের করেন।
এর আগে লিপারানী ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে । সেখানে লিপা রানীর নতুন নাম দেয়া হয় হোসনে আরা বেগম(লাইজু)। কিন্তু বাধসাধে নিয়তি, ২০১৩ সালে ২৮ অক্টোবর লিপার বাবা অক্ষয় কুমার বাদী হয়ে আদালতে লাইজু ও তার পবিারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় লাইজুকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছিল। সে সময় বিয়ের স্বপক্ষে কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি দেয় নিপা। আদালত অপহরণ মামলাটি খারিজ করে দেয়। এরপর মেয়ের বাবা মেয়েকে অ-প্রাপ্ত বয়স দাবি করে আপিল করে। তখন আদালত আবেদন আমলে নিয়ে মেয়েটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে দেয়।
নিপাকে সেফ হোমে রেখে ২০১৪ সালের ১৪ই জানুয়ারী লাজু রাজশাহী থেকে নিপার বাবার সাথে ট্রেনে বাড়ী ফেরার সময় অজ্ঞাত কারনে অসুস্থ্য হয়ে পরে লাইজু। অসুস্থ্য অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যেল হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। লাশ নিয়ে আসা হয় ডোমার থানায়। ময়না তদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় জেগে উঠে লাইজু। তড়িঘড়ি করে তাকে স্থানীয় বোড়াগাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। তবে লাইজু পরিবারের দাবী লিপার পরিবার পরিকল্পিত ভাবে তার ছেলেকে বিষ পান করায়।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বামী লাইজুকে দেখতে আশার পথে নিপাকে তার বাবা চালাকি করে নিজ বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। অবশেষে স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে ২০১৪ সালের ১০ই মার্চ লিপা বিষপানে আত্মহত্যা করে। এর পর লাশের সৎকারের দাবীতে নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী আদালতে আবেদন করেন শশুর জহুরুল ইসলাম ও অপরদিকে মেয়ের বাবা অক্ষয় কুমার। m৪ বছরের বেশি সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে হিমঘড়ে পড়ে থাকে লিপারাণীর লাশ। দীর্ঘদিন আইনী লড়াই শেষে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল লিপার লাশ ইসলামী শরিয়া মতে দাফনের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।
এবিএন/আব্দুল্লাহ আল মামুন/জসিম/তোহা