
সিলেট, ০৮ মার্চ, এবিনিউজ : সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ মামলার একমাত্র আসামি বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে বদরুলকে।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা এই রায় ঘোষণা করেন। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামি বদরুল আলম।
এ রায়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সহিংসতার বিচার পেলেন খাদিজা।
আজ বুধবার রায় ঘোষণার জন্য সকাল ১০টার আগে বদরুলকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় নেয়া হয়। সাড়ে ১১টার পর চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য আদালতকক্ষে আসেন বিচারক। এরপর মামলার একমাত্র আসামি বদরুলের উপস্থিতিতে তিনি রায় পড়া শুরু করেন।
এর আগে, গত রবিবার মামলার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক আজ বুধবার রায়ের দিন নির্ধারণ করেছিলেন। সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও গত ১ মার্চ মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। হাকিম আদালতে একমাত্র আসামি ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকায় রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথার খুলি ভেদে করে মস্তিষ্কও জখম হয়।
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর অনেকটা সুস্থ হন খাদিজা। শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে তাকে পাঠানো হয় সাভারের সিআরপিতে। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গ্রামের বাড়ি ফেরেন খাদিজা।
হামলার পরপরই আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা বদরুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। গত ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
গত বছরের ৮ নভেম্বর খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট নগরীর শাহপরান থানার এসআই হারুনুর রশীদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে ১৫ নভেম্বর আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেন। গত ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
গত ৫ ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিন বদরুল আলমের বিরুদ্ধে আদালতে ১৭ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। পরে ১১ ডিসেম্বর ১৫ জন এবং ১৫ ডিসেম্বর সাক্ষ্য দেন আরও একজন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য দেন খাদিজা। মামলায় ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
গত ১ মার্চ সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালত থেকে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ওই আদালতে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানে সীমাবদ্ধতা থাকায় দায়রা জজ আদালতে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি