মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
logo

...আজো সেই স্মৃতি মনে হলে আতকে উঠি

...আজো সেই স্মৃতি মনে হলে আতকে উঠি

আজ সেই ভয়াল রাত।

দিনটি ছিল মঙ্গলবার। ১৯৮৫ এর ১৫ অক্টোবর। পূজো আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবে দুদিন পরই। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে ছুটিতে বাড়ী যাবে। রাত তখন ৮ টা ৩৩ মিনিট। অনুদ্বৈপায়ণ ভবনে, জগন্নাথ হলের পূর্ব-দক্ষিণ পাশের পুরনো ১৯২৫ সালে নির্মিত তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ ভবন, অ্যাসেম্বলি হলের টিভি রুমে ছাত্ররা শুকতারা নাটক দেখবার জন্য জড়ো হচ্ছে।

আমি বাইরে থেকে ঘুরে এসে এসেম্বলি হলের সিড়ির উপর বসলাম। হালকা বৃষ্টি নামাতে সেখানে না থেকে চলে আসলাম পূর্ববাড়ীর আমার ৪৪ নাম্বার রুমে। এসেই হিটারে ভাত বসিয়ে দিলাম। রুমেমেট Anupam Roy Ranjan Kumar Bhowmik Animesh Roy একটু পরই রুমে চলে আসে। চারজন মিলে গল্প করছি। ৮টা ৪৫ মিনিটে হঠাৎ করে বিকট শব্দ। চারদিন নিস্তব্দ। কিছুক্ষণ পরই কান্নার রোল। বারান্দায় যেতেই দেখি ছাত্রদের দৌড়াদৌড়ি। নিমিষেই নিভে গেল ৩৪টি তাজা প্রাণ। পরবর্তীতে আরো ৬ জন হারিয়ে গেল চিরতরে চিকিত্সাধীন অবস্থায়। আহত হলো তিন শতাধিক। পরের দিন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে মর্মান্তিক ঘটনার বিস্তারিত খবর দেখে সারা দেশের মানুষ কেঁদেছে। ঘটনার দিনতো ঢাকা শহরের মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এসেছিল হল প্রাঙ্গণে, আকুলিত হদয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আহতদের প্রাণ বাঁচাতে, বিনা দ্বিধায় রক্ত দিয়েছিল হাসপাতালে। ঠিক মুক্তিযুদ্ধের মতো সবাই এক হয়ে এই দুর্যোগকে মোকাবিলা করেছে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা আর অব্যবস্থাপনার প্রতি ক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, যা আমাদের আজো অনুপ্রাণিত করে, আলোড়িত করে। যেমনটি হয়েছিল স্বাধীনতা-পূর্ব গণ-আন্দোলনের সময়ে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, তেমনটি আমরা দেখতে পেয়েছি জগন্নাথ হল ট্রাজেডির সময়ে। নতুন স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবগাহিত সর্বস্তরের মানুষ সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে, সংহতি ও সহমর্মিতার যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সে দিন স্থাপন করেছিল তা চিরকাল বাংলাদেশের সবাইকে, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সাহস যোগাবে।

আজো সেই স্মৃতি মনে হলে আতকে উঠি।

রতন কুমার মজুমদার’র স্ট্যাটাস থেকে

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত