সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
logo
  • হোম
  • ফেইসবুক থেকে
  • ...কিছুটা হলেও চিন্তার ফোকরে একটু আলো দিই। এগিয়ে নিই প্রিয় বাংলাদেশকে

...কিছুটা হলেও চিন্তার ফোকরে একটু আলো দিই। এগিয়ে নিই প্রিয় বাংলাদেশকে

...কিছুটা হলেও চিন্তার ফোকরে একটু আলো দিই। এগিয়ে নিই প্রিয় বাংলাদেশকে

বেশ কয়েক মাস পর কাগজে লেখা। বছরের প্রথম লেখাটি সমকালের সম্পাদকীয়তে

একটা ছেলে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে ৪-৫ বছর অনার্স পড়তে যে টাকা লাগে, বলা চলে তার কয়েক গুণ অর্থ কেবল চাকরির জন্য নিয়োগ পরীক্ষার পেছনে খরচ করে। ফরম তোলা থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থায় যে খরচ হয়, তা কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্র্যাজুয়েট পাস করা ছেলের বাবাকেই বহন করতে হয়। স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি না পেলে পরিবারের সদস্যদের কাছে 'মেধাবী' ছেলেটিও হয়ে ওঠে চোখের বালি। এ পরিস্থিতিতে আমাদের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান হোক সেটা সরকারি কিংবা বেরসকারি, এতটাই অমানবিক আচরণ করে, যা একজন সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে তোলে।

প্রতি সপ্তাহে চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যাওয়া যেন নিত্যকার বিষয়। বাসে চেপে লঞ্চে ঝুলে মানুষের ভিড় সামলে পরীক্ষার আগের দিন যে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে ঢাকায় যাচ্ছে, তার ফল কী? যারা চাকরি দিচ্ছেন, তাদের প্রয়োজন যোগ্য কর্মী। এই যোগ্যদের খুঁজতে কেন ঢাকায় প্রার্থীদের ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করা? ঢাকার বাইরেও তো চাকরির জন্য পরীক্ষা নেওয়া যায়। আবেদন ফরমের যে অর্থ নেওয়া হয়, তা কি সত্যিই একজন চাকরিপ্রার্থীর প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়নে খরচ হয়? আমার বিশ্বাস, একজন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া অর্থে ঢাকার বাইরে জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোতে অনায়াসে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যায়। বের করে আনা যায় কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীদের। তাহলে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কাউকে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঢাকায় যেতে হয় না। আর তা সম্ভব না হলে, সেকেলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হোক। নিয়োগকর্তাদের উদ্দেশ্য তো দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করা। সেই আবহে চলতে চাইলে নিয়োগবিধির পরিবর্তন আনতে হবে।

ধরা যাক, দেশে নিয়োগ কমিশন করা হলো। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া অবশ্যই কমিশনের অধীনে হবে। সেটার ক্যাটাগরিও করা যেতে পারে। যেমন এ-ক্যাটাগরিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বি-ক্যাটাগরিতে স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা, সি-ক্যাটাগরিতে ব্যাংক ও অবকাঠামো খাতে নিয়োগ দেওয়া হবে। যারা প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর পরবর্তী ধাপে সংশ্নিষ্ট বিষয়াবলির অন্তর্ভুক্ত মৌখিক পরীক্ষা দেবেন। একইভাবে কমিশন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগবিধিতে সহায়তা করতে পারে। যাদের কাজ হলো, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী প্রতি মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন এবং সেখান থেকে নির্বাচিতদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা। এ কমিশনের কাজ বাংলাদেশ কর্মসংস্থান কমিশনও করতে পারে।

তারা যে বিসিএসের আয়োজন করে, সেখানে নির্বাচিতদের কেবল বিসিএসে নয়, কিংবা সীমাবদ্ধ নন-ক্যাডারভিত্তিক নিয়োগই নয়; সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জনবলের জন্য প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষাও হতে পারে। ধরা যাক, তিন লাখ প্রার্থীর মধ্যে এক লাখ প্রাথমিক পরীক্ষায় টিকল। এর পর লিখিত ৫০ হাজার, তারপর মৌখিকে দুই হাজার টিকিয়ে বাকি ৪৮ হাজারকে কম মেধাবী বলার সুযোগ নেই। এরাও চাকরি পাওয়ার যোগ্য। এরা অবশ্যই কোথাও না কোথাও চাকরি ম্যানেজ করে, কিন্তু সমস্যা হলো সময়। তারা চাকরির পেছনে যে দুই-তিন বছর পার করে দেয়, সেটা হচ্ছে সময়ের অপচয়। আর সময় যেহেতু অর্থের সমতুল্য, তাই এর যথাযথ ব্যবহার দেশের তথা বিশ্বেরই উন্নয়ন। উন্নত বিশ্বে চাকরির পেছনে তাদের নাগরিকদের এতটা দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না। এমনিকে বছরের পর বছর অপেক্ষাও করতে হয় না। আমাদের সীমাবদ্ধতা অবশ্যই আছে। তবে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা আমাদের দেশকে পেছন দিকে টেনে ধরছে। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে না লাগিয়ে তাদের মুখের সামনে মুলা ধরিয়ে দেওয়ার নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি বড্ড সেকেলে। যে ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেছে, সে নিশ্চয় শিক্ষিত। চাকরির ক্ষেত্রে তার অপ্রয়োজনীয় বিষয় পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন দেখি না, এর জন্য প্রয়োজন শুধু পরিশ্রম।

ইচ্ছা করলেই দেশটাকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া যায়। এগিয়ে নিতে যা প্রয়োজন, তা শুধু পরিশ্রম আর মেধা। আবার কে কতটা দেশপ্রেমিক তার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলার প্রয়োজন নেই- আমি দেশের জন্য কাজ করি কিংবা মাঠে জনসভা করার প্রয়োজন নেই। একজন মানুষ তখনই দেশপ্রেমিক, যখন তিনি তার প্রতিটি ক্ষণ শ্রম দিয়ে দেশটাকে গড়ছেন। সরকারকে অনুরোধ, দয়া করে এই সেকেলে নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ভালো করে ভাবুন। আসুন, কিছুটা হলেও চিন্তার ফোকরে একটু আলো দিই। এগিয়ে নিই প্রিয় বাংলাদেশকে

নাদিম মাহমুদ’র স্ট্যাটাস থেকে

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত