![...ভালোবাসার দিবস। সেই ভিক্ষুকের জন্য অনেক ভালোবাসা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/14/hasan-shantonu_125874.jpg)
ঢাকার পথ ধরে হাঁটছিলাম। বিষন্ন মন, একাকীত্ব নিয়ে। তখন ‘সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ’ পত্রিকায় (এখন প্রকাশনা বন্ধ) ‘মিডিয়া ওয়াচ’ শিরোনামের ‘কলাম’ লিখি। পত্রিকার সম্পাদক, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া তখন বেঁচে নেই। বর্বর গ্রেনেড হামলায় নিহত হোন তিনি।
ব্যক্তিগত দিনগুলো ছিলো সংগ্রামের। সম্পাদক, মালিক নিহত হওয়ায় মৃদুভাষণ ছিলো অর্থকষ্টে। তখনকার চারদলের জোট সরকারের রােষানলেও ছিলো বুদ্ধিদীপ্ত পাঠকের এ পত্রিকা। ‘বড় সাংবাদিক, লেখক হওয়ার আশায়’ জন্মশহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে ঢাকায় এসেছি। খুব যশপ্রার্থী। লেখালেখি করে মাস শেষে যা রোজগার হয়, তাতে নিত্যদিনের খরচ চালানো সম্ভব ছিলো না। মনের অ্যালবামে ঠাঁই নেয়ার ওই দিনে পকেটে দশ টাকা নিয়ে হাঁটছিলাম ফকিরাপুলের একটা পথ ধরে, বিকেলের ম্লান হয়ে আসা আলোতে।
হঠাৎ এক ভিক্ষুক এসে টাকা চাইলেন। পকেটে ছিলো মাত্র দশ টাকার একটা নোট। ভাবলাম, পাঁচ টাকা দিলে তো পরের দিনটা পার করতে ভীষণ কষ্ট হবে। আবার ভাবলাম, দিয়েই দিই। টানাপোড়েনের দিনকালে তাতে কী এমন বেশি কষ্ট হবে! এ টাকা পকেটে থাকলে কতো সাধ জন্মাবে, সাধ্য না থাকার কষ্টগুলোও সঙ্গে সঙ্গে মনের ভেতর জন্ম নেবে। পকেটে থাকা দশ থাকার নোটটা মধ্য বয়সী (ঠিক বাবার বয়সের সমান) ওই ভিক্ষুককে দিয়ে দিলাম।
পকেট একেবারে টাকাশূন্য। হাঁটছি। কিছুক্ষণ পর সেই ভিক্ষুক আবার সামনে এসে দাঁড়ালেন। পাঁচ টাকার একটা নোট দিয়ে বললেন, আপনার পকেটে শুধু দশ টাকাই ছিলো। আমার পাঁচ টাকার দরকার। বাকি পাঁচ টাকা রেখে দিন।
অবাক হয়েছিলাম তাঁকে দেখে। তাঁর মতো ভিক্ষুক জীবনে আর দেখিনি। জানি না, তিনি এখন বেঁচে আছেন কী না! ঢাকার কোনো রাজপথেই থাকেন, নাকি মাটির বিছানায় চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে আছেন- তাও জানি না।
মনে মনে সেদিন তাঁর জন্য, তাঁদের জন্য বা নিজের জন্য আওড়েছিলাম ‘জেলগেটে দেখা’ কবিতার কয়েকটা লাইন- ‘আমি কতোবার তোমাকে বলেছি, দ্যাখো/ মুষ্টি ভিক্ষায় দারিদ্র্য দূর হয় না/ এর অন্য ব্যবস্থা দরকার, দরকার সামাজিক ন্যায়ের/ দুঃখের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে।’
কাল ভালোবাসার দিবস। সেই ভিক্ষুকের জন্য অনেক ভালোবাসা।
হাসান শান্তনু’র স্ট্যাটাস থেকে