শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

ভাইয়া, প্লিজ... প্লিজ ভাইয়া, বাচ্চাটা আমাকে দিন...

ভাইয়া, প্লিজ... প্লিজ ভাইয়া, বাচ্চাটা আমাকে দিন...

" ভাইয়া, প্লিজ... প্লিজ ভাইয়া, বাচ্চাটা আমাকে দিন। আমি ওকে সারাজীবন আগলে রাখব আমার সবটুকু দিয়ে। প্লিজ ভাইয়া আমাকে একটু দয়া করুন" :( :(

শুধুমাত্র একটু মা হবার গৌরবে নিজেকে গর্বিত দেখতে হাজারো নারীর এমন শতশত আর্তিতে ভরে গেছে আমার ইনবক্স, আমার মুঠোফোন।

তাও একটি পাগলী মায়ের মেয়েকে দত্তক নিতে চেয়ে??? অথচ আমি এ বাচ্চাটির কেউই নই, একে আমিও উদ্ধার করিনি...

আমি অবাক হই, বাকরুদ্ধ হই, এক একটি অনুরোধ আসে, আর আমার চোখ ভিজে উঠে...। একজন নারীর মা হতে চেয়ে এত এত আর্তি একটি সন্তানের জন্য???

এত এত আরাধনা নিজেকে পুর্ণ করে নিতে??

এত এত প্রারথনা????

আমি অশ্রু আটকে রাখতে পারিনা। জলভরা চোখে এই বুভুক্ষু বোনদের উত্তর করে যাই... " আমি চেস্টা করব, অবশ্যই চেষ্টা করব"

আমার বুকের ভেতর হাহাকার জাগে, ইস !!! এমন হাজারটা সন্তান যদি আমার থাকত!!! যদি আমি এই সব চাওয়ার বিপরীতে তাদের প্রত্যেকের কোল একটি একটি সন্তানের নির্মল হাসিতে ভরিয়ে দিতে পারতাম!!!

আমি পারিনা কিছুই। আমার যে কিছুই করার নেই। সুদুর মাদারিপুরে বসে অমি আমার প্রতি একটি অনুরোধ রেখেছে , পাগলীর বাচ্চাটার জন্য জেন একটি ভাল পরিবার খুজে দেই। ইস!!! এমন অনুরোধ যদি আরও হাজারটা করত কেউ???

গত দুদিন হুমায়রাকে ( পাগলি মায়ের সন্তান) নিয়ে যা হচ্ছে, আমি যদি সেটা ক্রমাগত লিখে যাই তাহলে হয়ত আগামি কয়েক মাসে লিখে সেটা শেষ করতে পারবনা।

সারা দিন রাত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারীদের কত কত জিজ্ঞাসা আমার ইনবক্সে, আমার মুঠোফোনে " ভাইয়া, বাবু এখন কেমন আছে??? হাসে ও??? ও কি কাঁদে ???? ওর মা কি ওকে বুকের দুধ খাওয়ায়??? কত কত প্রশ্ন

গতকাল এক মেয়ে রাতের দুইটায় কল দিয়ে জিজ্ঞেস করছে " ভাইয়া, সরি এত রাতে কল দেয়ার জন্য, আচ্ছা ভাইয়া... ও হবার পর কি কেউ আজান দিয়েছে ওর কানে???"

আমি তাজ্জব বনে যাই। আমি আসলেই তোঁ জানিনা ওর জন্য আজান দেয়া হয়েছে কিনা। মনে মনে আমি জপে যাই... আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর... আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ......।

আমি ঘুমহীন চোখে ভেবে যাই, কোথাকার কোন এক পাগলীর মেয়ে... তার জন্য হাজার নারীর নির্ঘুম রাত, শত উতকন্ঠা, উদ্বেগ...।। মনে মনে খুব খুশি হই... আহা!!! এইতো আমার বাংলাদেশ। এইতো আমার দেশের মা বোন...। এত দরদী এত মায়াবী মা বোন আর কোথায় পাব????

আফসোস জাগে, এই যে একটি পাগলীর সন্তানের জন্য নারীদের এত এত আরাধনা, প্রারথনা, কামনা, বাসনা,

কোন এক মায়ের এমন শত আরাধ্য একটি সন্তান ই তো বড় হয়ে এই পাগলীকে মা বানিয়ে দিয়েছে। যদি সে মা সেই ছোটবেলায় জানতেন, তার এই যক্ষের ধন বড় হয়ে এমন একটি কাজ করবে, আমি কসম কেটে বলতে পারি, সেই মা তার সেই যক্ষের ধনকে পায়ে পিষে মাটিতে পুঁতে ফেলতেন।

আমার এখন খুব জানতে ইচ্ছে করছে, হুমায়রার পিশাচ বাবাটা এখন কি করছে??? কি ভাবছে লুকিয়ে লুকিয়ে? তার মনে কি একটু পাপবোধ কাজ করছে??? হাজার লক্ষ শুভকামনা আর ভালবাসায় ডুবে থাকা তার বাচ্চাটাকে কি তার একটুও আদর করতে ইচ্ছে করছেনা???

সেখানে কি দেয়াল হয়ে আছে একটি ক্ষমাহীন পাপ??? দেয়াল হয়ে আছে একটি মেয়ের " পাগলী" পরিচয়????

আমার জানতে ইচ্ছে করছে খুব। খুব...

হুমায়রা ভাল আছে, ভাল থাকবে ও , থাকতেই হবে...। লক্ষ মানুষের আন্তরিক প্রারথনা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারেনা কনভাবেই...কোনভাবেই না...।

ভালবাসা রইল

ওয়াজেদ মহান

২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ওয়াজেদ মহান’র স্ট্যাটাস থেকে

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত