বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর সন্তানরা বাবার অবদান...

সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর সন্তানরা বাবার অবদান...

সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর সন্তানরা বাবার অবদান বিবেচনায় রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ সহানুভূতি পাবেন কী না, এ বিষয়ে ভাবনা দরকার। কারো বিশেষ অবদানের জন্য তাঁর পরের প্রজন্মকে রাষ্ট্র বিশেষ মমত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা নিঃসন্দেহে মানবিক বিষয়। তবে রাষ্ট্রের মমত্বটা হতে হবে সত্যিকার কোনো মানুষের জন্য।

শওকত আলীর সন্তানরা প্রকৃত মানুষের কাতারে পড়েন কী না, তাঁদেরকে সহায়তার আগে এটাও নির্ধারণ করতে হবে রাষ্ট্রকে। প্রাণের গভীরতম ভালোবাসার স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিজেকে পৃথিবীর নিঃসঙ্গতম মানুষ মনে করতেন শওকত আলী।

দিন কয়েক পর তাঁর উপলব্ধি, তিনি শুধু নিঃসঙ্গই নন, জগতের সবচেয়ে দুভার্গ্যময় জীবনের অধিকারী। তাঁর সন্তানদের অতি অাধুনিক জীবনের 'ব্যস্ততা' এতো বেশি, বাবাকে তাঁরা প্রায়ই দুপুরের বা রাতের সামান্য খাবারটুকু দিতেও ভুলে যেতেন!

ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণা সইতে নিজেকে অসহায় সান্ত্বনা দিতেন শওকত আলী, 'ভুলটা আমারই। সারা জীবনের শিক্ষকতায় এতোজনকে মানুষ বানালাম, অথচ নিজের ঔরসেরগুলোই অসভ্য রয়ে গেলো।' তখনকার তাঁর শব্দহীন কান্নার সাক্ষী গভীর রাতের নৈঃশব্দ, অজস্র অন্ধকার, অথবা একটা ছোট্র কামরার চারটা দেয়াল। ওই কামরার মাপেই একটা বিন্দুর মধ্যে বাংলা সাহিত্যের ভিন্ন স্বরের এ শিল্পীর শেষ জীবনের দিনগুলো বেঁধে দেন তাঁর সন্তানরা।

গেলো সপ্তাহে শওকত আলীর স্মরণসভায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন, বেঁচে থাকতে নাকি কেউ তাঁর খোঁজ রাখেননি! অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এ সময়ে পাঠকপ্রিয় Rozina আপা এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক দেয়ালে স্ট্যাটাস দেন।

তাতে শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব Syed Ishtiaque Reza মন্তব্য করেন 'পুত্ররা থাকার পরও নিজ বাড়িতে কেমন ছিলেন তিনি, সেটাও অনেকের জানা।' সেখানে নির্মাতা, লেখক, শ্রদ্ধেয়জন Shakoor Majid লেখেন, নিজের বাড়িতে দারোয়ানের জন্য বানানো একটা কামরায় থাকতেন তিনি, তাঁর জন্য আলাদা রান্না হতো।

২০০৭, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাপ্তাহিক এখনের জন্য বরেণ্য এ সাহিত্যিকের সাক্ষাতকার নিতে গেলে, তিনি প্রতিবারই নিজের কক্ষে খুব আস্তে কথা বলেন। যেন বৃদ্ধ বাবা, মায়েরা সামান্য শব্দে স্বাভাবিক কথা বলাও বড়ো 'অপরাধ'!

আপাদমস্তক নিরীহ এ বাবার এমন দিনও গেছে, ব্যথায় কাতরালেও পঞ্চাশ পয়সার একটা প্যারাসিটামল তাঁর সন্তানরা কিনে দেননি। মাস কয়েক আগে শওকত আলী স্যারকে শেষবারের মতো দেখতে গিয়ে এসব জেনে চোখ অশ্রুসিক্ত হয়েছে।

সেদিন রাতে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, 'সন্তান, পুত্র বা মূত্র একই পথ দিয়ে নির্গত হলেও, মানুষ না হলে সন্তান মূত্রের চেয়ে...'। বাক্যটা যে কথাসাহিত্যিকের, তিনিও শেষ জীবনে নিজের সন্তানদের কাছে 'পরিত্যক্ত, ঝামেলার' ছিলেন।

শওকত আলীর সন্তানদের রাষ্ট্র সহানুভূতির চোখে বিবেচনার প্রসঙ্গ কেনো এলো, এর যৌক্তিক কারণ থাকলেও ওই প্রসঙ্গ এখানে অনালোচিত থাকুক। রাষ্ট্রের সহানুভূতি, সহায়তা পাবে যে বাবা-মায়ের জন্য, সন্তান তাঁদের প্রতি কতোটুকু দায়িত্ব পালন করেছে, বা আদৌ করেছে কী না, এটা যে কারো বেলায় আগে বিবেচনায় নেয়া জরুরি নয় কি?

হাসান শান্তনু’র স্ট্যাটাস থেকে

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত