![থ্রেট দেবেন না : প্রধান বিচারপতি](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/14/mahmud_130245.jpg)
ঢাকা, ১৪ মার্চ, এবিনিউজ :জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করার পর খালেদার আইনজীবীরা আদালতে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা জন্য আবেদন করেন। এ সময় তারা বলেন, ‘মাননীয় আদালত, খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করবেন না, আমরা আজকে আবারও শুনানি করতে চাই।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এমন আবেদনে আদালত বলেন, শুনানির জন্য তারিখ দেয়া হয়েছে। সেদিনই (রোববার) শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, ‘আমরা এ রায় মানব না।’ আইনজীবীদের এমন বক্তব্যে আদালত বলেন, আপনারা (খালেদার আইনজীবী) কি থ্রেট দিচ্ছেন? থ্রেট দেবেন না।
আজ বুধবার সকালে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। অন্যদিকে খালেদা জিয়া পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রমুখ।
শুনানির শুরুতেই দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘হাইকোর্ট চারটি কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। আমরা এখনো সে আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদেশের কপি পেলে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করব।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিপি (লিভ টু আপিল) ফাইল করে আসেন।’
তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘সিপি ফাইল করতে রবিবার-সোমবার পর্যন্ত আমাদের সময় দেওয়া হোক। সে পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখা হোক।’
এর পর আদালত বলেন, ‘ঠিক আছে সিপি ফাইল করে আসেন রবিবারের মধ্যে। এ পর্যন্ত জামিন স্টে থাকবে।’
তখন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘আমাদের কথা আগে শোনেন। আমাদের বক্তব্য (আসামিপক্ষের) তো শুনেন নাই। আমাদের না শুনে এভাবে আদেশ দিতে পারেন না।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুনতে হবে না। রবিবার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন। তখন শুনব।’
জয়নুল আবেদীন তখন প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি এক তরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলে এতে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।’
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টেকে কোর্টের মতো চলতে দিন।’
এর পর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘না শুনেই তো আদেশ দিলেন।’
আদালত বলেন, ‘আমরা অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এ মামলায় চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। এ সময়ের মধ্যে আসামিও বের হবে না। তাই স্টের প্রয়োজন নেই।’
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা তো শুনানির সুযোগ পেলাম না।’
এরপরই আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকা থেকে অন্য মামলার শুনানি শুরু করেন আদালত।
সে মামলার শুনানির এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, ‘আপনি তো না শুনেই একতরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না?’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কার কথা শুনবো, কার কথা শুনব না তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে?’
গিয়াস উদ্দিন আবারও একটু উত্তেজিত হয়ে একই কথা বললে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’ জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘শুনে তার পর আদেশ দিতে হবে।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘থ্রেট দেবেন না।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে আটক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ আগামী রবিবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপিল আবেদনের শুনানি শেষে বুধবার আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী ৫ম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে ওই দিন বিকালে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখনো সেখানেই আছেন।
এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ