চাঁদপুর, ২৯ মার্চ, এবিনিউজ : চাঁদপুরের মতলবের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামে বসতঘর ওঠানোকে কেন্দ্র করে ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের ৪ জনের গায়ে এসিড নিক্ষেপ করার অপরাধে নারীসহ ৪ জনকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড। একই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত।
গতকাল বুধবার চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) আবদুল মান্নান এ সংক্রান্ত রায় দেন। দন্ড প্রাপ্তরা হচ্ছেন : পূর্ব ইসলামাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মনির হোসেন (২৫), মেয়ে হোসনে আরা বেগম (৩০), একই বাড়ির মৃত জুনাব আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২৮) ও কাবিল মিয়া (২৬)।
আর এসিডদগ্ধরা হচ্ছেন- একই বাড়ির খলিলুর রহমানের বড় মেয়ে লাকী আক্তার (২৫), লাকীর স্বামী মতিউর রহমান (৪০), ছোট মেয়ে রাহিমা আক্তার (১৪) ও বড় মেয়ের কন্যা (নাতনি) জান্নাতুল ফেরদৌস (৪)। মামলার বিবরণে জানা যায়, মামলার বাদী খলিলুর রহমান সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করতেন। প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসতেন।
ঘটনার দিন ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল একই বাড়ির উল্লেখিত আসামীদের মধ্যে মনির হোসেন ও হোসনে আরা খলিলের সম্পত্তিতে বসতঘর উঠাতে চেষ্টা করেন। এতে খলিল তাদের বাধা প্রদান করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ হয়। ওইদিন রাতে পরিবারের সকলে ঘুমিয়ে পড়লে আনুমানিক ১টার দিকে খলিলের বসত ঘরের জানালা দিয়ে উল্লেখিত আসামীরা ঘুমন্ত অবস্থায় লাকী, মতিউর, রাহিমা ও শিশু জান্নাতের গায়ে এসিড নিক্ষেপ করেন। এতে করে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। তাদেরকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এরপর খলিলুর রহমান ঘটনার ৩ দিন পর ২৮ এপ্রিল মতলব উত্তর থানায় প্রথমে অজ্ঞাতানামাদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি দীর্ঘদিন তদন্ত করে উল্লেখিত আসামীদের চিহ্নিত করে পুলিশ। এছাড়াও আসামীদের মধ্যে মৃত জুনাব আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৫৫) তদন্ত চলাকালীন মারা গেলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পর পর ৪ জন বদলি হওয়ার কারণে তৎকালীন চাঁদপুর সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) অরুণ কুমার দত্ত ২০০২ সালের ২০ এপ্রিল তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। অভিযোগ পত্র নম্বর ২৬।
চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাড. হাবিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, মামলাটি প্রথমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চলমান ছিলো। পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালত শুরু হলে মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর মামলাটি চলমান অবস্থায় আদালত ২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এতে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবং আসামীরা অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় তাদের উপস্থিতিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪ (২)-এর ‘খ’ ধারায় প্রত্যেক আসামীকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে।
এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
এবিএন/শ্যামল চন্দ্র দাস/জসিম/এমসি