বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • আদালত
  • চকরিয়ায় গৃহবধু হত্যার রহস্য উদঘাটন, আদালতে জবানবন্ধি

চকরিয়ায় গৃহবধু হত্যার রহস্য উদঘাটন, আদালতে জবানবন্ধি

চকরিয়ায় গৃহবধু হত্যার রহস্য উদঘাটন, আদালতে জবানবন্ধি

চকরিয়া (কক্সবাজার), ৩০ মার্চ, এবিনিউজ : এক বছর পূর্বে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উত্তর লক্ষ্যারচরের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে রোকেয়ার সাথে কাকারার শাহ উমর নগরের নুর আলমের ছেলে রুবেলের সাথে জোর করে বিয়ে দেয় শ্বাশুড়ি।

বিয়ে দেয়ার সময় এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা যৌতুক দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন শ্বাশুড়ি। কিন্তু পরে ওই টাকা আর দেয়নি। টাকা চাইলেই স্ত্রীর দুই ভাই আলমগীর ও আলী হোসেন মিলে মারধর করতো। এমনকি স্ত্রীকেও বাবার বাড়ি রেখে দিতো শ্বশুড় বাড়ির লোকজন।

যৌতুকের টাকা না পেয়ে উল্টো মারধরের শিকার হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে সহযোগী নিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে খোদ স্বামী মোহাম্মদ রুবেল (২২)। হত্যার প্রধান আসামী স্বামী রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধিতে (১৬৪ ধারা) অনুতপ্তহীন কণ্ঠে এসব কথা বলেন ঘাতক স্বামী রুবেল।

আদালতেক রুবেল আরো বলেন, একদিকে টাকা না পেয়ে মারধরের শিকার হই, অন্যদিকে স্ত্রীকেও রেখে দিলে আমি অসহায় হয়ে পড়ি। একপর্যায়ে কুল-কিনারা খোঁজে না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করি। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গত ১৯ মার্চ মাগরিবের পর শ্বশুড় বাড়ি গিয়ে শ্বাশুড়িকে বুঝিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে আসি। ওই রাতেই চকরিয়া কলেজের নিকটবর্তী তামাক খেতের ভিতরে নিয়ে যায়।

এসময় আরো পাঁচ সহযোগীকে নিয়ে আমি প্রথমে দুই হাত রশি দিয়ে বেঁধে ফেলি। পরে গলায় টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করি স্ত্রীকে। এসময় অন্য পাঁচজনের মধ্যে দুইজন মুখ চেপে ধরে অন্য তিনজন হাত-পা চেপে ধরে আমাকে হত্যায় সহায়তা করে। হত্যার দুইদিন পর ২১ মার্চ দুপুরে তামাক খেত থেকে তরুনী গৃহবধু রোকেয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে মেয়ে রোকেয়া বেগমকে হত্যার অভিযোগে নিহতের বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে গত ২১ মার্চ রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এমামলায় স্বামী রুবেল ও ভাসুর সোহেলসহ পাঁচ-ছয়জনকে আসামী করা হয়। এরপর তথ্য উদঘাটনে মাঠে নামে চকরিয়া থানার এসআই সুকান্ত চৌধুরী।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুকান্ত চৌধুরী ধৃত স্বামী রুবেলের স্বীকারোক্তিমুলক দেয়ার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে হত্যার বিবরণ তুলে ধরলে তাকে গতকাল বৃহস্পতিবার চকরিয়া সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। আদালতেও বিজ্ঞ বিচারকের কাছে রুবেল স্ত্রী হত্যার জবানবন্ধি দেন।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত ১৯ মার্চ হত্যা করা রোকেয়ার লাশ গত ২১ মার্চ তামাক খেত থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে ওইদিন রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্বামী রুবেল ও ভাসুর সোহেলসহ পাঁচ-ছয়জনকে আসামী করা হয়। এই হত্যার ক্লু উদঘাটন করতে নিহতের স্বামীকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই বিভিন্ন স্থানে সোর্স নিয়োগ করি।

নিয়োগ করা জনৈক সোর্স চট্টগ্রাম শহরে রুবেলকে দেখতে পেয়ে কৌশলে চকরিয়ার বানিয়ারছড়ায় নিয়ে আসেন ২৮ মার্চ রাতে। ওই রাতেই সোর্স থেকে খবর পেয়ে আমি থানার এসআই সুকান্তসহ একদল পুলিশ ফোর্স নিয়ে বানিয়ারছড়া স্টেশন থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করি। এই মামলার আসামী আকাশকে ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর চারজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের মার্চে উত্তর লক্ষ্যারচরের রোকেয়া বেগমের সাথে কাকারা শাহ উমর নগরের রুবেলের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় যৌতুক নিয়ে। ২১ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে সনাক্ত না হলেও সন্ধ্যা ৭টার দিকে লাশের পরিচয় মেলে।

এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত