![এইসব মিথ্যাবাদীদের খপ্পরে আর কতদিন?...](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/05/nadim_133822.jpg)
এইসব মিথ্যাবাদীদের খপ্পরে আর কতদিন?
গতকাল থেকে ফেইসবুকে একটা খবর আমাদের শিক্ষিত সমাজ শেয়ার করে আসছেন, তাহলো আফগানিস্তানে মাদ্রাসায় ১৫০ জন কোরআনের হাফিজ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। ‘রাশেদ খান’ নামের এক বুদ্ধিজীবীর করা পোস্টে ১১ হাজার ৯শ বার শেয়ারও হয়েছে। ওই পোস্টটি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা অনেকেই শেয়ার করে আবেগে আপ্লুত বনে গেছেন।
আমি সত্যিই লজ্জিত এইসব শিক্ষিতদের দেখে। আমি সত্যি ব্যতিত এইসব মানুষদের দেখে, যারা কোন কিছু নিশ্চিত না হয়ে ছবিগুলো শেয়ার দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
আসলে ঘটনাটি কি?
বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা আর এএফপির খবর অনুযায়ী আফগানিস্তানের কুন্দুজের দাশ্ত ই আর্চি জেলার মসজিদে স্থানীয় একটি মাদ্রসার সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে তালেবানের শীর্ষনেতার উপস্থিতিতে কয়েকটি হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালায় মার্কিন সৈন্যরা। আফগানিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্ততপক্ষে ২৫ জন জঙ্গি নিহত বা আহত হয়েছেন আর তালেবান দাবি করছে তাদের সৈন্যসহ অন্তত ১৫০ জনের মতো নিহত কিংবা আহত হয়েছেন।
এই খবরের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি শেয়ার করা হয়েছে তার সিংহভাগই মিথ্যা ও প্রপাগণ্ডার অংশ।
রাশেদ খানের প্রথম ছবিটিতে কান্না জড়িত দুই নারীর ছবিটি ২০১০ সালের ২০ জুন (লিংক সংযুক্ত) কাশ্মীর অস্থিতিশীলতার সময় তোলা, নিহত শিশুর ছবিগুলো ্আফগানিস্তানের কলামিস্ট ইদ্রিস স্তেনাকজাই ৩০ মার্চ টুইটারে শেয়ার করেন যা ৩ এপ্রিল মার্কিন হামলার নয়, রক্তাক্ত কোরআন শরীফের যে ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে তা ২০১৪ সালের ২৮ নভেম্বর জেরুজালেমে জঙ্গি হামলার, মাদ্রসার শিশুদের পাগড়ি পরিহিত ছবিটি পাকিস্তানের, নারীর আহাজারি করা ছবিটি ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের অগ্নিসংযোগের ঘটনার। সামান্য গুগুলে সার্চ দেয়ার ক্ষমতা যাদের নেই, তারা তো প্রপাগান্ডায় বিশ্বাস করবেই নাকি?
আটটি ছবির যদি সিংহভাগই ফেইক হয়, তাহলে বুঝতে বাঁকী নেই বাঙালির আবেগকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য ধর্মীয় ট্যাগই যথেষ্ট। বিষয়টি আজই ঘটেনি, এর আগেও গাঁদা, রোহিঙ্গা ইস্যূ নিয়ে মিথ্যা তথ্য আর ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে।
ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগাতে, এই মিথ্যাবাদীর দল অনেকটাই সফল। তারা আমাদের শিক্ষিতদের মস্তিষ্কে পচন ধরিয়ে দিয়েছে। বিচার বুদ্ধি বিশ্লেষণের ক্ষমতা হারিয়ে মিথ্যা-বাদীদের আকড়ে ধরার চেষ্টা করেছে, যা সত্যিই লজ্জাকর-ভীতিকর।
একাত্তরে রাজাকার-আলবদর যেভাবে প্রপাগণ্ডা ছড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সমর্থন অর্জন করার চেষ্টা করেছিল, ঠিক তেমনি এই গোষ্টির ফলোয়ারা বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।
আমি অত্যন্ত ব্যথিত যে আমরা কোথায় যাচ্ছি? দিনের পর দিন এইসব কুচক্রীদের খপ্পরে পড়ে আমাদের প্রজন্ম কোন পথে হাঁটছে? আবেগ থাকা ভাল তবে বেশি আবেগে চোখ-মাথা হারানো সমর্থন পাওয়ার যোগ্য নয়।
প্রশ্ন হলো, দেশে যে তথ্য-প্রযুক্তির কর্তা-ব্যক্তিরা রয়েছেন, তারা এইসব বিষয়ে কি ভাবছেন? নাকি তারাও ওইসব কালপিটদের ভুয়া ছবিগুলো শেয়ার করে কুসংস্কার ও মিথ্যার পাহাড় গড়ছেন?
নাদিম মাহমুদ’র স্ট্যাটাস থেকে