
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, এবিনিউজ : আইনি জটিলতায় চার বছরের বেশি সময় ধরে মর্গে থাকা হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ ইসলামী রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরের পর সোমবার ১৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
রায়ে তিন দিনে মধ্যে হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ দাফন করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ ইসলামী রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রায়ের কপি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে দাফন করতে বলা হয়েছে।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে দাফন সম্পন্ন করতে হবে। দাফনের আগে হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) লাশ তার বাবার পরিবারকে দেখার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে হোসনে আরার (নিপা রানী) বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সমীর মজুমদার, শ্বশুরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের অক্টোবরে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার লিপা রাণী এবং পাশের গ্রামের হুমায়ন ফরিদ লাইজু পালিয়ে বিয়ে করে। মেয়েটি সে সময় ধর্মান্তরিত হয়। কিন্তু মেয়ের বাবা ছেলেটি এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করে।
কিন্তু সেসময় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ের কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন লিপা এবং লাইজু দুইজন। এরপর আদালত অপহরণ মামলাটি খারিজ করে দেয়।
এরপর মেয়ের বাবা মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাবি করে আপিল করে। তখন আদালত আবেদন আমলে নিয়ে মেয়েটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে দেয়।
এ পর্যায়ে ২০১৪ সালের ১৫ই জানুয়ারি লাইজু বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। তিন মাস পরে ২০১৪ সালের ১০ই মার্চ আত্মহত্যা করে মেয়েটিও।
লাইজুর বাবা ও মেয়েটির শ্বশুর জহুরুল ইসলাম বলেছেন, এরপরই তিনি আদালতে আর্জি জানান, মেয়েটি লাশের সৎকার ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী করার অধিকার চান তিনি।
যেহেতু মেয়েটি তার পুত্রবধূ, এবং সে বিয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু মেয়ের বাবা হিন্দু শাস্ত্র মতে সৎকারের জন্য আদালতে আবেদন করেন।
এই বিরোধে চার বছরের বেশি সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিলেন লিপা। জহুরুল ইসলাম বলেছেন, ছেলের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি